পরম শ্রদ্ধেয় ড. ইউনুস,
আপনি এই বাংলাদেশেরই সন্তান। আমার মতো কোনো সাধারণ পরিবারের। আপনি নিজ গুণে, নিজ ক্ষমতায়, নিজ প্রচেষ্টায় আজ সারাবিশ্বে পরিচিত, মাননীয় আর শ্রদ্ধারসাথে উচ্চারিত এক নাম। আপনার কর্মের সুখ্যাতি আর স্বীকৃতি বিশ্বজোড়া। যেখানেই আপনার হাতের স্পর্শ পায়, সেখানেই সোনা ফলে। বাংলাদেশের মানুষ হয়েও আপনি কর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। আমাদের গর্ব হয় আপনাকে নিয়ে। এ দেশে আপনি 'ক্ষুদ্র ঋণ' প্রবর্তন করেছেন। গরীব দুঃখী আর সম্বলহীন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন আর্থিক সক্ষমতা। ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা ছেড়ে এখন আবার ব্যবসার ভিন্ন আঙ্গিক। সামাজিক ব্যবসা। এখনও, জীবনের এই পড়ন্ত বেলায়ও আপনি স্বপ্ন দেখেন। আপনি মানুষকে স্বপ্ন দেখান। সপ্ন দেখান দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর। আপনার বক্তৃতা আফ্রিকা থেকে সাইবেরিয়া, সমস্ত মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে, সেতো বক্তৃতা নয়, যেন মোহিনীমন্ত্র। আপনি পরশ পাথর।
আপনি সারাবিশ্বে পরিচিত ক্ষুদ্র ঋণের দেবদূত, এই বাংলাদেশে নয় শুধু। ঋণ দিয়ে ঘরের শান্তি, সমাজের শান্তি আর দেশের শান্তি আপনি স্থাপণ করেছেন, তাইতো আপনি নোবেল ভূষিত। আপনি 'শান্তিতে' পৃথিবী শ্রেষ্ঠ পুরস্কার নোবেল বিজয়ী। আপনার নাম উচ্চারণে দেশবাসী হিসেবে আমাদের সকলের বুক প্রশস্ত হয়। আমরা বিশ্বব্যাপী আপনার আলোয় আলোকিত হয়ে উঠি।
আপনি নিশ্চয়ই অবগত, আপনার জন্মভূমি, মাতৃভূমি বাংলাদেশের দুধের শিশু-মা থেকে শুরু করে শত সহস্র নারী-পুরুষ মালয়েশিয়া উপকূলে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস সমুদ্র বক্ষে ভেসে বেড়াচ্ছে। দিনের পর দিন না খেয়ে মানুষগুলো এখন শুধুই অস্থিসার, মৃত্যুমুখে নিপতিত। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডে, গহীন বনে, বাংলাদেশী উদ্বাস্তুদের জীবন্ত গণকবরের কথা আপনি শুনেন নি, সেটা বিশ্বাস করিনা। সেই গণকবর থেকে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে দু-একজন বাংলাদেশীকে জীবন্ত পাওয়া গেছে, সেটাও নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়।
বাংলাদেশি আর বার্মিজ রোহিঙ্গা বোঝাই অসংখ্য ট্রলার থাই-মালয় উপকূলে ভাসমান। থাই-মালয় সরকারগুলো তাদের উপকূল রক্ষীদের নির্দেশ দিয়েছে ইঞ্জিন চালিত, উদ্বাস্তুবাহী এইসব ছোট ছোট নৌকোগুলো যেন কিছুতেই তাদের দেশে ভিড়তে না পারে। নৌকোগুলোতে খাবার সংকট, পানীয় সংকট, জালানি সংকট প্রকট। অবস্থা এমন, পানীয় জলের অভাবে নিজমুত্র পানে সবাই বাধ্য হয়েছে। বড় করুন অবস্থার স্বীকার হয়েছে আর হচ্ছে ছোট শিশু আর নারীদের। তারা শক্তি দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা, যে সামান্য পরিমান খাবার অবশিষ্ট আছে, তা সংগ্রহের যুদ্ধে, পুরুষদের সঙ্গে। কালই প্রকাশিত হয়েছে, খাবার নিয়ে সংঘর্ষে প্রাণ গেছে একশ বাংলাদেশী উদ্বাস্তুর। চূড়ান্ত মানবিক বিপর্যয় চলছে সমুদ্রবক্ষে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর একটি প্রজন্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
পরিশেষে, শুরু করেছিলাম একটি কালজয়ী মানবতাবোধের নন্দিত গানের কথা থেকে। আর শেষ করবো এই বাংলার এক কবির কবিতা দিয়ে। তিনি আপনার মতো বিশ্ব নন্দিত নয় ঠিকই, তবে এদেশের রাজা-প্রজা নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে চির স্মরণীয়, আর দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক, তার দুটো লাইন দিয়ে, তা হলো;