প্রসঙ্গ: নায়েক আব্দুর রাজ্জাক ও বর্মাদেশ

গৌতম হালদার
Published : 24 June 2015, 01:13 PM
Updated : 24 June 2015, 01:13 PM
বেশ ক'দিন হলো বর্মার সামরিক জান্তার পেটোয়াদের হাতে আটক রয়েছেন জাতির সেবক বিজিবি নায়েক রাজ্জাক। আহত নায়েক রাজ্জাকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আগেই প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায় পুঁতি-দুর্গন্ধময় পরিবেশে, লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায়, প্লাস্টিকের একটি চেয়ারে, হাতকড়া পড়িয়ে আটক রাখা হয়েছে তাঁকে। সম্ভবত তাঁর নাকের পাশ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। চূড়ান্ত ঘৃণা আর দ্রোহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বাইরের দিকে।
একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে অসুবিধা হয়না তিনি অসুস্থ, তিনি বিধ্বস্ত আর তিনি চিন্তিত। তিনি চিন্তিত কারণ তিনি জানেন ঘরে তার প্রসবসম্ভবা স্ত্রী। তিনি চিন্তিত এই অতি প্রয়োজনীয় সময়ে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারছেন না, পারছেন না পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সাহস আর শক্তি যোগাতে। উপরন্তু তিনি আটক। তিনি আটক কোন রকম অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে নিবেদিতপ্রাণ থাকার কারণে। অথচ সেই দেশ তার জন্য, তার পরিবারের এই দু:সময়ে কিছুই করছে না। তিনি চিন্তিত তিনি বেঁচে আছেন এবং তিনি জান্তাদের হাতে অনৈতিকভাবে বন্দী আছে, সেই খবরটি তাঁর পরিবার-পরিজন সঠিকভাবে জানেন কিনা, তাই ভেবে। তিনি চিন্তিত তাঁর খবর বাংলাদেশ সরকার জানে কিনা কিংবা সরকারের হিসাবে তাঁর নাম বাতিলের খাতায় চলে গেছে কিনা তাই ভেবে অথবা তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের তরফ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা তাই ভেবে।
খবরে প্রকাশ বর্মা তাঁর মুক্তির জন্য শর্ত দিয়েছে পাঁচ শতাধিক নাগরিক বর্মা থেকে বাংলাদেশে আনতে হবে। হয়তো শর্ত আরো আছে, আসবে। কারণ কোনরকম মানবিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা বর্মা'র জান্তারা করে না, সেটা আমরা বহুপূর্বেই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। মানবিকতা, সৌজন্যবোধ শব্দগুলি দুরাচারী এই দেশটি অভিধান থেকে মুছে দিয়ে রুঢ়তা নিষ্ঠুরতা হিংস্রতা দিয়ে পুড়ে রেখেছে। ইতোপূর্বে রোহিঙ্গা ইস্যু কিংবা সাগরে ভাসমান উদ্বাস্তু ইস্যু, কোনো ইস্যুতেই বর্মী সামরিক জান্তা সরকারের মানবিক হওয়া তো দূরের কথা আলোচনার টেবিলে বসারও আগ্রহ দেখিনি।
এটা বোধ করি অসম্ভব ছিলোনা যে, যেদিন ওরা আমাদের আব্দুর রাজ্জাককে আটক করেছে, তার পরদিন ওদের গোটা দশেক ধরে এনে খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখা। বাংলাদেশ সে পথে হাঁটেনি। প্রতিবেশীর সাথে শত্রুতা করে আখেরে লাভবান হওয়া যায়না, সেটা বাংলাদেশ জানে। তবে বর্মী স্বৈরাচার জানে না। ওরা প্রতি পলে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে আনন্দ পায়।এতে কোনো 'কনভেনশন' লাগে না, ন্যুনতম সৌজন্যবোধের পরিপন্থী, সবাই জানে। জানে না বর্মী জেনারেলরা। দুনিয়াতে আরও একটি দেশ আছে, পাকিস্তান, যারা কোনো রকম আন্তর্জাতিক কনভেনশন, রীতিনীতি আদব কায়দা জানে না, মানে না। দুটো দেশেই জেনারেলদের প্রবল দাপট। স্বভাব-চরিত্রও একই রকম। দুটোরই পেটে ভাত নেই – কোনো ভাবনা নেই, পাছায় কাপড় নেই – কোনো ভাবনা নেই, তবে অস্ত্র কেনায় কোনো কমতি নেই। সারা পৃথিবীতে কে অস্ত্র বিক্কিরি করতে চায় কোন অস্ত্র বিক্কিরি করতে চায়, তার সব হদিস ওদের কাছে আছে।ওরা অস্ত্রবাজ, ওরা সন্ত্রাসী, কারণ যতগুলো 'ডিশ' প্রয়োজন সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য, তার সবগুলোই ডিশ-ই ওদের মেনুতে আছে। তবে আসল ঘটনা হলো সবাই জানে ওরা সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী ওরা ঘরে-বাইরে, সন্ত্রাস ওদের মস্তিস্কে, সন্ত্রাস ওদের মজ্জ্বায়- তবু কেউ কথা বলে না। কারণ কথা বললে পাছে আবার অস্ত্র ব্যবসা বেহাত হয়ে যায়, সেই ভয়ে!
বাংলাদেশ শান্তিকামী রাষ্ট্র। তাই আব্দুর রাজ্জাকের ইস্যুটারও শান্তিপূর্ণ সমাপন বাংলাদেশের কাম্য। কারণ কুকুরের সাথে মানুষের শক্তিপ্রদর্শন! সে হয়না। এতে মানুষের শক্তিক্ষয়-ই অনিবার্য্য হয়। কুকুরের নখড় আর দন্ত মানুষের সমূহ ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। মানুষ তো আর কুকুরের মত কামড়াতে পারে না! কুকুর তাই কুকুর আর মানুষ তাই শ্রেষ্ঠ জীব। তবে প্রভুভক্ত এই প্রাণীটি যদি "পাগলা" হয়ে যায়, তবে তাকে এক ঘায়ে নিঃশেষ করে দেয়া মানুষের জন্য শুধুমাত্র মুহুর্তের সিদ্ধান্ত। আমাদের বিশ্বাস, সেটি দেশপ্রেমী বিজিবি নায়েক আব্দুর রাজ্জাকের মুক্তির জন্য দরকার পরবে না। তার আগেই বাংলার মানুষের পালস বুঝে বর্মী জেনারেলরা অতিসত্বর সিদ্ধান্ত নেবে। কেননা যে দ্রোহের আগুন তাদের কাছে অনৈতিকভাবে আটক নায়েক রাজ্জাকের দৃষ্টিতে ঝড়ে পড়ছে তা সারাবাংলার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া বর্মী জেনারেলদের জন্য মোটেই সুখকর হবে না।