কিছু লোক আছে সমাজে, যারা নিজেই বরের বাপ, আবার নিজেই কনের বাপ সাজার ভান করে। আদতে তারা কোনটাই হতে পারেন না। এই শ্রেনীর লোকেদের মহাসড়কে সিএনজি বন্ধের সিদ্ধান্তে এখন দরদ আর শরীরে ধরে না। আজ যারা মহাসড়কে সিএনজি বন্ধের ঘোষণায় এত দরদ দেখাচ্ছে, কাল তারাই তাদের কোনো লতায় পাতায় জড়ানো আত্মীয় যখন দুর্ঘটনার শিকার হবেন, আহত হবে কিংবা প্রাণ হারাবেন, তখন এই মন্ত্রীর চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে বিলম্ব করবেন না।
আবার এইসব হামদর্দিরাও মিটার রিডিং দুরে থাক, সম্ভাব্য ভাড়ার দুইগুণ তিনগুণ ভাড়া দিতে চেয়েও জরুরি প্রয়োজনে সিএনজি ড্রাইভারদের কাছ থেকে সেবাটি পান না, কিংবা যত্রতত্র আর এলোমেলো পার্কিংয়ের ফলে যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে নাকাল হন, অথবা ড্রাইভারদের যোগসাজসে যখন ছিনতাইয়ের শিকারসহ আহত হন, তখনও আবার এই মন্ত্রীকে বা সরকারকেই তুলোধনা করতে কাল বিলম্ব করেন না। এটা বাঙালির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দ্বৈত নীতিরই বহিপ্রকাশ, আসলে যা একধরনের মানসিক অস্থিরতা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
সমাজের দৃঢ় চরিত্রের আর স্থির সিদ্ধান্তের মানুষগুলোর উচিত এইসব অস্থির চরিত্রের মানুষগুলোর লোকদেখানো মায়াকান্নায় আপ্লুত না হয়ে সঠিক আর অধিকতর জনহিতকর সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা আর তা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা। আর কিছু সিদ্ধান্ত অমানবিক হলেই বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় নিয়েই গ্রহণ করতে হয়। এতে তাত্ক্ষণিক কিছু অসুবিধা তৈরী হলেও আখেরে লাভ হয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠিরই। কারণ মানবিকতার কারণে কেউ নিজের আর পরিবারের লোকজনের জিবনঝুঁকি মেনে নেবেন, এমন 'মহানুভবতা' হয়তো খুব বেশি নেই সারা দুনিয়ায়।
আর এ প্রসঙ্গে মাননীয় মন্ত্রীকে সবিনয়ে আরও একটু বলতে হয়, তা হলো, শুধু মহাসড়কের দিকে তাকালেই হবে না, সিএনজি আর ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা সহ নসিমন-করিমন আর আলমসাধু শুধুমাত্র মহাসড়কে বন্ধ করলেই চলবেনা, শহরাভ্যন্তরে সিএনজি ড্রাইভারগণ যাতে নিয়মনীতি প্রতিপালন করে গাড়ি চালায়, ভাড়া নেয় সরকার ঘোষিত মাইল মিটার হিসেবে নির্ধারিত হারে, যাত্রীসেবা ঠিকঠাকমত প্রদান করে, সেটাও দেখতে হবে। বৃহত্তর স্বার্থে তাকাতে হবে শহরের দিকেও। সুশৃঙ্খল করতে হবে সমগ্র নগর পরিবহন ব্যবস্থাও।