লিবিয়া ফেরতদের ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাঠানো হবে

হাসান ইকবাল
Published : 4 May 2011, 04:08 AM
Updated : 4 May 2011, 04:08 AM

লিবিয়া ফেরত বাংলাদেশীদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাঠানো হবে। আর এখনই তাদের প্রাথমিকভাবে জীবন নির্বাহের জন্য ন্যুনতম ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। শুরু হতে যাওয়া এশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোর সম্মেলন ৪র্থ 'কলম্বো প্রসেস' উপলক্ষে সচিবালয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। লিবিয়া থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার বাংলাদেশী ফেরত এসেছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিশ্বব্যাংক সহজ শর্তে ৪০ মিলিয়ন ডলার বা ২৯০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনের আগে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইএমও) এর প্রধান নির্বাহী উইলিয়াম লেসি সুইংয়ের নেতৃত্বে সংস্থার একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী। বৈঠকে লিবিয়া ফেরত বাংলাদেশীদের প্রত্যাবাসন, পুনর্বাসন এবং বকেয়া বেতন আদায় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের পর উইলিয়াম লেসি সুইং সাংবাদিকদের বলেন, এখন লিবিয়ায় যুদ্ধ চলায় দেশটির ভেতরে তারা কাজ করতে পারছেন না। এজন্য লিবিয়ায় শ্রমিকরা কি অবস্থায় রয়েছে তা আইএমওর পৰে জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এখনও সীমান্তু দিয়ে বিভিন্নভাবে মানুষ লিবিয়া ত্যাগ করছে। আপাতত তারা বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের প্রত্যাবাসনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার লিবিয়া ফেরত শ্রমিকদের সহায়তা দিচ্ছে উলেখ্য করে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আইএমও এ বিষয়ে সহায়তা প্রদান করবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বুধবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে '৪র্থ কলম্বো প্রসেস' এর উদ্বোধন করবেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকেরও উদ্বোধন করবেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুক ব্যক্তিরা শুধুমাত্র নিয়োগপত্র জমা দিয়েই ঋণ নিতে পারবেন। শর্ত হিসেবে শ্রমিককে বিদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে হবে। বিদেশ থেকে দেশে এসেও শ্রমিকরা ঋণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থান করতে পারবেন। ব্যাংকটি ৪০০ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করছে। এরমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে ৯৫ কোটি টাকা এবং সরকার বন্ডের মাধ্যমে আরও পাঁচ কোটি টাকা দেবে। বাকি অর্থও শীঘ্রই সংগ্রহ করা হবে। ব্যাংকটির সুদের হার নির্ধারিত না হলেও তা একক সংখ্যায় নির্ধারণ হতে পারে বলে সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেয়া হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দু'জন গ্রহীতাকে শতকরা ৯ ভাগ সুদে ঋণ দেয়া হবে। অন্যান্য ব্যাংকে সুদের হার ১৫ থেকে ১৬ ভাগ বলে জানানো হয়।

লিবিয়া ফেরত শ্রমিকদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সরকারী হিসেবে এখন পর্যন্ত্ত দেশে ৩৩ হাজার শ্রমিক ফেরত এসেছে। এরমধ্যে আইএমও ২৯ হাজার শ্রমিক এনেছে। ২৯ হাজার শ্রমিকের মধ্যে আইএমওকে ১০ হাজার শ্রমিক আনার জন্য টাকা দিতে হবে। বাকি ১৯ হাজার শ্রমিকের জন্য কোন টাকা দিতে হবে না। জনপ্রতি এজন্য আইএমওকে এক হাজার ২৬০ ডলার পরিশোধ করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, লিবিয়া থেকে শ্রমিকরা একেবারে খালি হাতে ফেরত এসেছেন। অনেকে দু'তিন মাসের বেতন সেখানে রেখে এসেছেন। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বকেয়া আদায়ের জন্য সংশিস্নষ্ট কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ কেউ বকেয়া পরিশোধের জন্য আশ্বাস দিয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ১৯-২১ এপ্রিল ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে এশিয়ার জনশক্তি রপ্তানিকারক ১১টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ৪র্থ কলম্বো প্রসেস। এর মধ্যে প্রথমদিন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে কিছু বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। পরদিন সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক উদ্বোধন করবেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থ্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন। মন্ত্রী পর্যায়ে দু'দিনের বৈঠকে লিবিয়ার শ্রম বাজারসহ আন্ত্মর্জাতিক শ্রমবাজারের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং অভিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে করণীয়গুলো নির্ধারণ করা হবে।

সম্মেলনে ১১টি সদস্য দেশ, পাঁচটি পর্যবেক্ষক দেশ, ছয়টি আন্ত্মর্জাতিক সংগঠনসহ মন্ত্রী, সচিব পদস্থ কর্মকর্তাসহ ৭৫ জন অংশ নেবেন। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে 'মাইগ্রেশন উইথ ডিগনিটি' বা মর্যাদার সঙ্গে অভিবাসন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ সচিব ড. জাফর আহমেদ খান, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আসাদুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত প্রতি বছর ২৫ লাখ কর্মী অন্য দেশে চাকরি করতে যায়। এসব শ্রমিকের কল্যাণ এবং শ্রম বাজারের উন্নয়নের জন্য ২০০৩ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম বৈঠকে কলম্বো প্রসেস-এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলা এবং ২০০৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

Source: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=27&dd=2011-04-19&ni=56124