বাংলাদেশের নারী চিত্র: জাতীয় প্রেক্ষিত

হাসান ইকবাল
Published : 23 May 2011, 09:49 AM
Updated : 23 May 2011, 09:49 AM

অবস্থা (Condition):পুষ্টি ও স্বাস্থ্য* বাংলাদেশের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী পুষ্টিহীনতায় ভোগে যার প্রায় ৪৩ শতাংশের উপর গর্ভকালীন অবস্থায়।

( দৈনিক ইত্তেফাক-৩জুন ২০০৯)

* প্রতি ঘন্টায় গর্ভ ও প্রসবজনিত জটিলতায় প্রায় ৩ জন মা মৃত্যুবরণ করে
* বাংলাদেশে মাত্র ১৩ শতাংশ নারী প্রসবের সময় দক্ষ ধাত্রীর সহায়তা পায়

তথ্যসূত্র:( প্রথম আলো ১৭জুন ২০০৯)

* বাংলাদেশে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের বয়স ১৯ বছরের নীচে এদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ নারী পরিপূর্ণ পুষ্টির অভাবে রক্তশূণ্যতায় ভোগে
* বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর হবার আগেই অন্যদিকে ১৫ থেকে ১৯ বছরেই অন্ত:সত্ত্বা কিংবা মা হয় এক তৃতীয়াংশ (ইউনিসেফের ওর্য়াল্ড চিলড্রেন প্রতিবেদন, সূত্র: ইত্তেফাক ১২ আগস্ট ২০০৯)
* সারাবিশ্বে প্রতি মিনিটে ৩৮০ জন নারী গর্ভবতী হয়, ১৮০ জন নারী অপরিকল্পিত বা অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ করে, ১১০ জন নারী গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগে, ৪০ জন নারী অনিরাপদ গর্ভপাত ঘটায় এবং ১ জন নারী মারা যায়। (দৈনিক সমকাল ৩মে ২০০৯)

শিক্ষা-
স্বাক্ষরতা (১৫ ও এর উর্ধ্বে) : নারী : ৪০.৮% পুরুষ : ৫৩.৯%
§ উচ্চ মাধ্যমিক ও তৎপরবর্তী শিক্ষায় নারীর ভর্তি হার – ৪% (HDR UNDP- ২০০৮)
§ বাল্যবিবাহের কারণে শতকরা ৪১ ভাগ কিশোরীকে স্কুল ত্যাগ করতে হয়
§ প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলের তুলনায় মেয়ের অনুপাত ১.০৮
§ মাধ্যমিক শিক্ষায় ছেলের তুলনায় মেয়ের অনুপাত ০.৫২
§ উচ্চশিক্ষায় ছেলের তুলনায় মেয়ের অনুপাত ০.৬১
§ বয়স্ক শিক্ষার হার (১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারী ) শতকরা ৬৯.৯ ভাগ
(MDG UNDP-2009)

শ্রম ও আয়-*
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে বাংলাদেশে মোট খাদ্য উৎপাদনে নারীদের অবদান কমপক্ষে ৫০শতাংশ। পুরুষরা যেখানে বছরে ১৮শ ঘন্টা কৃষিকাজে শ্রম দেয় নারীরা দেয় সেখানে ২৬শ ঘন্টা (সমকাল ৯ মার্চ ২০১০)
* ILO এর হিসাব মতে এদেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৪৩ শতাংশ
* বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ নারীর কর্মসংস্থান গর্মেন্টস শিল্পে এবং প্রায় ৪ কোটি নারীর কর্মসংস্থান হচ্ছে কৃষিতে
* বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা গুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের ৮০ শতাংশ হলো নারী । তারা নারী হওয়ার কারনেই এই কারখানাগুলোতে মজুরী দেশের অন্যসব কারখানা শ্রমিকদের মজুরী থেকে অনেক কম রাখা হয়।
* একই পেশায় একজন নারী শ্রমিক যেখানে ২৭৪ টাকা পান একজন পুরুষ শ্রমিক পান সেখানে ৩৬১ টাকা। বোনাসের ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈষম্য। হেলপার পদের নারী শ্রমিকরা বছরে ৬১২ টাকা বোনাস পায় বিপরীতে পুরুষ শ্রমিকরা পায় ১২২০ টাকা।
( দৈনিক কালের কন্ঠ ৮মার্চ ২০১০)

* ৪০.৭ শতাংশ কারখানায় নারীদের সমকাজে সম মজুরী দেয়া হয়না ।
* ৩৯.১শতাংশ কারখানায় গর্ভকালীন ছুটি দেয়া হয়না
(তথ্যসূত্র: দৈনিক সমকাল ৩মে ২০০৯)

* বর্তমানে নারী ও পুরুষের আয়ের অনুপাত ০.৫১। অর্থাৎ একজন নারী একজন পুরুষের আয়ের অর্ধেক উপার্জন করতে পারছে।
* পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নারীরা পৃথিবীর মোট কাজের তিন ভাগের দুই ভাগ সম্পাদন করে। কিন্তু বিশ্ব আয়ের মাত্র ১০ ভাগ তাদের দখলেএবং মোট সম্পদের মাত্র ১০ ভাগের মালিক নারীরা। (দৈনিক আমার দেশ ৮মার্চ ২০১০)
* জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার হিসাব অনুযায়ী ১২.৩ মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক যৌনপল্লীসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে হচ্ছে, এক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যাই বেশী । তারা তাদের প্রাপ্য মজুরী টুকুও পায়না । উপরন্তু তাদের শরীরে বাসা বাঁধে এইডস এর মত ভয়াবহ ব্যাধী । ( দৈনিক কালের কন্ঠ ৮মার্চ ২০১০)

নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র :

নির্যাতনের ধরন সাল ২০০৯
এসিড নিক্ষেপ ৬৩ জন
পারিবারিক নির্যাতন ২৮১ জন

যৌতুকের কারনে নির্যাতন ২৮৫ জন

ধর্ষণ ৪৪৬ জন

ফতোয়া ৩৫ জন

যৌতুকের কারনে হত্যা করা হয়েছে ১৯৪ জন নারীকে

ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে ৬২ জন নারীকে

গণধর্ষনের শিকার ১৫৮ জন

ধর্ষনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪৪টি

(তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ ১০মাচ ©২০১০)

উত্যক্তের ঘটনায় ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছে ১৬৫৯ জন । (দৈনিক ইত্তেফাক ২২ ফেব্রুয়ারী ২০০৯)

* ডিসেম্বর ২০০৯ মাসের মধ্যে যৌতুকের কারনে নির্যাতনে মৃত্যুবরন করতে হয়েছে ১৫ জন নারীকে। (দৈনিক কালের কন্ঠ ৮মার্চ ২০১০)
* দেশের ১৬ টি রেজিস্টার্ড পতিতালয়ে যৌনকর্মীদের শতকরা ৪০ ভাগই অপ্রাপ্ত বয়স্ক (সমকাল ৮ মার্চ ২০১০)
* শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান মতে ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দেশে প্রায় ২৫ হাজার কন্যাশিশু নির্যাতিত হয়েছে। (দৈনিক যুগান্তর ৮মার্চ ২০১০)
* ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা যায় ২০০৬ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩১ ভাগ নারী,খুন হয়েছে ২৫ ভাগ, এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে ১৫ ভাপের উপর, ধর্ষনের কারনে আত্মহত্যা করেছে ১২ ভাগ এবং ধর্ষনের প্রচেষ্টা ৭ভাগ। (দৈনিক আমার দেশ ৮মার্চ ২০১০)

অবস্থান (Position)
* নবম সংসদে সরাসরিভাবে নির্বাচিত নারী ১৯ জন। সংরক্ষিত আসনসহ এই সংখ্যা ৬৪। প্রধানমন্ত্রীসহ ৫ জন নারী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার পরিসংখ্যান জানাচ্ছে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি পুরুষের তুলনায় ৩ ভাগের ১ ভাপ। (দৈনিক যুগান্তর ৮মার্চ ২০১০)
* সচিব ৪ জন যা মোট অনুপাতের ১০ ভাগের ১ ভাগ। (দৈনিক যুগান্তর ৮মার্চ ২০১০)
* জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০০৯ অনুযায়ী জেন্ডার উন্নয়ন সূচকে ১৫৫ টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান ১২৩ তম। এর অর্থ পুরুষের তুলনায় নারীরা দ্বিগুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
* বর্তমানে ১০৯ টি দেশের মধ্যে জেন্ডার ক্ষমতায়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৮ তম। (প্রথম আলো ৭র্মাচ ২০১০)
* পরিসংখ্যান অধিদফতরের এক জরিপ মতে গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের নারীর অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। (দৈনিক সমকাল ৮মার্চ ২০১০)