লাশের পর লাশ! উদ্ধারক পুলিশ, বিচারক কে?

কামরুল হাসান জনি
Published : 17 Jan 2013, 04:55 AM
Updated : 17 Jan 2013, 04:55 AM

আজ যাত্রাবাড়ীতে সাপ্তাহিক অপরাধ দমন পত্রিকার সাংবাদিক দুর্জয় চৌধুরী দিপুর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যাত্রাবাড়ী তাজ সুপার মার্কেটের ৫ তলায় অফিস কক্ষে একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে দিপুকে গুলি করে কক্ষের বাইরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তালা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করে। গতকাল তেজগাঁও-এর এফডিসি সংলগ্ন রেলক্রসিং এলাকা থেকে নিউএজ পত্রিকার শিক্ষানবীশ রিপোর্টার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শণ বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান তারেক নামে এক সংবাদকর্মীর ট্রেনে কাটা ছিন্ন-বিচ্ছিন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার পরিবারের মন্তব্য তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কিছু বখাটে ছাত্রদের সাথে ঝামেলা যাচ্ছিল।

আর কত সাংবাদিক প্রাণ হারাবে অকালে! দিন যত বাড়ছে শংকা ততই বাড়ছে ভয়-ভীতির। একদিকে রাজনৈতিক নেতা কর্মী আর দলীয় ক্যাডার বাহিনীর আতঙ্ক অন্যদিকে অপরাধ জগতের গডফাদারদের দেয়া প্রাণ নাশের হুমকি। সকাল থেকে রাত একমুহূর্তের জন্যও নিরাপদ নয় আমাদের জীবন। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণ সহ বেড়ে চলেছে নির্যাতন, লাঞ্ছনা। পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে নির্যাতিত হতে হয় পুলিশের হাতে, লাঞ্ছিত হতে হয় ফ্যাসিশক্তির কাছে। মানব বন্ধন করে কি পেয়েছি সঠিক বিচার?

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত '১২ইং পর্যন্ত ১৪জন সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ইং সালে ফেব্রুয়ারী মাসে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। এক বছরেও এই হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার ও সাজা হয়নি। ২০১১ সালে নয়াপল্টনে নিজের বাসায় খুন হয় প্রবীণ সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খানম। গাইবান্ধায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কুকরাইল এলাকায় গলা কেটে হত্যা করা হয় দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার গোবিন্দগঞ্জ উপজলো প্রতিনিধি ফরিদুল ইসলাম রঞ্জুকে। চট্টগ্রাম পোর্ট কলনী এলাকায় খুন হয় দৈনিক আজকের প্রত্যাশা, সাপ্তাহিক সংবাদচিত্র ও আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার সাংবাদিক মাহবুবু টুটুল। সাপ্তাহিক বজ্রকণ্ঠ'র সাংবাদিক আলতাফ হোসেন ১১দিন নিখোঁজ থাকার পর উত্তরা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১০ সালে গুপ্ত হত্যার শিকার হন এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাম্যান শফিকুল ইসলাম টুটুল। খুন হয় সাপ্তাহিক ২০০০ পত্রিকার সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানী। বরিশাল মুলাদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন একই বৎসর প্রকাশ্যে খুন হয়। ২০০৯ সালে খুন হয় ৪ জন সাংবাদিক। তারা হলেন এনটিভির ভিডিও এডিটর আতিকুল ইসলাম আতিক, মুক্তমন'র প্রতিবেদক নুরুল ইসলাম ওরফে রানা। সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক সময়'র নির্বাহী সম্পাদক এম এম আহসান হাবীব বারী, রূপগঞ্জ দৈনিক ইনকিলাব সংবাদদাতা আবুল হাসান আসিফ।

এছাড়াও সাম্প্রতি সময়ের বিরোধী দলের ডাকা হরতালে বিভিন্ন ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

পুলিশ প্রশাসন এসব ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের না পেরেছে কোন রকম চিহ্ণিত করতে, না গ্রেফতার? সন্দেহ হয় সেখানেই, প্রশাসন কি আদৌ চায় সাংবাদিক হত্যা, খুন, নির্যাতনের বিচার হোক? তারা যদি অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার কাজ সম্পাদনের চেষ্টা করতো তবে হয়তো পুলিশের হাত থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের মত ঘটনা জন্ম হতো না! লাশের পর লাশ উদ্ধার করতে প্রস্তুত পুলিশ কিন্তু ঐসব খুনিদের বিচার করবে কে?

জাতির বিবেক এর কাছে আমাদের প্রশ্ন – আদৌ কি আমরা স্বাধীন? প্রশাসন ও সরকারের কাছে দাবি রাখছি – আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর গেরান্টি চাই।