আর নয় ধর্ষণ! এবার ‘বলি’ দেবো ‌হুঁ

কামরুল হাসান জনি
Published : 27 Jan 2013, 06:14 PM
Updated : 27 Jan 2013, 06:14 PM

বছরের শুরু থেকে রীতিমত চোখ-কান একটাই শব্দ দেখে ও শুনে শুধু বিরক্ত নয় অস্থির হয়ে গেছে। বিবেক বার বার চিৎকার করে যাচ্ছে এখনো কিছুই করছো না তোমরা? আর আমরাও যেন চুপ মেরে হাত গুটিয়ে বসে আছি। হচ্ছেটা কি দেশে? ঘটনা- মামলা- আসামীরা গ্রেফতার! সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অপরাধ! চলছে তো চলছে…..।

গত এক মাসের ছোট একটি তালিকা সংযুক্ত করছি। যেগুলো চোখে পড়েছে, এর বাইরেও রয়ে গেছে অনেক! কারণ এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ঘটনার জন্মদাতা কারা? কেনই বা জন্ম এই ঘটনার? এমন প্রশ্ন সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, নারী সংগঠন কর্মীরা আমার থেকে বেশিই ধারণা দিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে আমি শুধু আমার ছোট খাট চিন্তা তুলে ধরলাম।

শনিবার ৫ জানুয়ারী রাজধানীর শাহআলী থানা এলাকায় এক শিশু(১০)কে গণধর্ষণ করার পর শ্বাসরোধ করে হত্যা। ১০ জানুয়ারি ভোলার লালমোহনে সপ্তম শ্রেণীর মাদ্রাসার ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়। কুষ্টিয়ায় ১২ জানুয়ারি নানার বাড়ি থেকে ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হয় এক মাদ্রাসার ছাত্রী। নীলফামারীর চড়াইখোলাতে ১৩ জানুয়ারি বিয়ে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে ১২ বছরের কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুই বখাটে। ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে সাত বখাটে। ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত তিন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এছাড়াও উক্ত এলাকায় আপন চাচা কৃর্তক ধর্ষিত হয়ে ছয় মাসের অন্তসত্বা হয়ে পড়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিশোরী (২০)। ঘটনা জানাজানি হলে ধর্ষক মহিউদ্দিনকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। ২২ জানুয়ারি চাকরির প্রলোভনে ফুঁসলিয়ে গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে খুলনার ডুমুরিয়ার নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এক ইন্স্যুরেন্স কর্মী। ২৪ জানুয়ারী চলন্ত বাসে মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানরায় আশুলিয়ার এক গার্মেন্টস কর্মীকে(১৮) ধর্ষণ করে বাস চালক ও হেলাপর। একই দিন পটুয়াখালী উপজেলার শিয়ালী এলাকায় দুই বোন ধর্ষণের শিকার হয়। ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার একটি ইটভাটার পুকুর থেকে শিশুর(১১) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধর্ষণের পর হত্যা করে তার লাশ ওই পুকুরে নিক্ষেপ করেছে বলে পুলিশের ধারনা।

বাগেরহাটের শরণখোলায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে ধর্ষণকারী হুমকির মুখে স্থানীয় ধাত্রীকে দিয়ে তার গর্ভপাত ঘটাতে গেলে ২৫ জানুয়ারি ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। লিখতে বসে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য, গত ২৬ জানুয়ারি মাইজভান্ডার দরবারের ওরশ শরীফে এসে গণধর্ষনের শিকার হয়েছে ৪৫ বছর বয়সী এক মহিলা। এই ঘটনায় থানা পুলিশ ধর্ষক ৩ নরপশুকে একটি সিএনজি ট্যাক্সি সহ আটক করেছে। এছাড়াও গত বছর দেশে ৭৭১ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫৭ জন নারীই গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১০৬ জনকে।

ধর্ষণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে প্রথমত আমি দোষারপ করছি। সমাজ, সংস্কৃতি, মানুষের আবেগ, অনুভূতি, মূল্যবোধের চরম অধঃপতন, আইন শৃঙ্খলা বিভাগের নতজানু ভাব ও পশ্চিমী সংস্কৃতির অধিক প্রচার প্রসার ধর্ষণের অন্যতম কারণ। এছাড়াও যৌন উত্তেজনা মূলক পোশাক, নগ্নতা, অশ্লীল চলচ্চিত্র নিমার্ণ-প্রদর্শণ ও চলচ্চিত্রে ধর্ষণের দৃশ্য উপস্থাপন, ব্লু-ফিল্ম, অশ্লীল ছবি সম্বলিত যৌন উত্তেজক অবৈধ পত্র পত্রিকা, মাত্রা অতিরিক্ত অনলাইন ভিত্তিক অশ্লীল ওয়েব সাইড ও এর প্রচার।

বাস্তবতা হলো এই অশ্লীলতা এমন একটি পর্যায়ে পৌছে গেছে এখন পাবলিক এর উপর পড়া বাদ দিয়ে দেখা শুরু করেছে। আর এত বেশি দেখছে ও শিখেছে যাতে ধর্ষণের মত অপরাধ তাদের কাছে কিছুই মনে হয় না। না হয় দেখুন, ওয়েব সাইড গুলোতে গা-গরম হওয়ার মত গানের দর্শক বিলিয়ন-মিলিয়ন ছাড়িয়ে যা একটি ভাল মানের নাটক-চলচ্চিত্রের রোমান্স কেড়ে নিচ্ছে। ঐ সব ওয়েব সাইড থেকে যা শিখছে তাই কাজে লাগানোর চেষ্টায় আছে পাবলিক তাই অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি। ইদানিং কিছু হ্যাকার পর্নো সাইড হ্যাকের উদ্যোগ নিয়েছে আমি তাদের সাধুবাদ জানায়।

কলকাতার একটি অনলাইন নিউজ পত্রিকায় পুরীর শঙ্করাচার্য ধর্ষণের কারণ হিসেবে পশ্চিমী সংস্কৃতিকে দায়ি করে। তিনি বলেন পশ্চিমী সংস্কৃতিকে অনুসরণ না করে অনুকরণ করা হয়। ২০১১ সালে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ পুলিশের মহাপরিচালক বি দীনেশ রেড্ডি হায়দারাবাদে এক বৈঠকে ধর্ষণের কারণ হিসেবে মেয়েদের সালোয়ার কামিজের মতো ফ্যাশননেবল পোশাকে দায়ি করেন। এসব পোশাক ধর্ষকদের ইন্ধন জোগায় বলে তিনি মন্তব্য করেন। কিন্তু তার এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমও এবং নারী সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

কারণ ব্যাখ্যা করতে গেলে কলম বন্ধ হবে না, কিন্তু আমাদের বন্ধ করতে হবে ধর্ষণের মত জঘণ্য অপরাধ। সমাজ সংস্কৃতির উন্নতি, মানব মনে মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি, অবাধে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রচার বন্ধ, পর্নো ওয়েব সাইড বন্ধ করা ( আরব গ্লাফে সব ধরণের পর্নো সাইড প্রচার বন্ধ) এবং পিতামাতাদের সন্তানের প্রতি সঠিক ধারণা রাখা তারা কি করছে? কি শিখছে? ইত্যাদি। সর্বোপরি আত্মা সচেতনতার সাথে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারলেই এই ধরণের জঘন্য অপরাধ ও অপরাধী সৃষ্টি থেকে আমাদের সমাজ মুক্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। আর নয় ধর্ষণ! এবার ধর্ষণকারীকে বলি দেবো ‌ 'হুঁ'।