মুক্ত মতের প্রকাশ ‍ও বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস

হাসান সরদার
Published : 3 May 2016, 08:05 PM
Updated : 3 May 2016, 08:05 PM

৩রা মে জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব মুক্ত গনমাধ্যম দিবস।কিন্তু বিশ্ব জুড়েই  সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিপন্ন; সাংবাদিকদের ধরপাকড় ও নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে৷বিশ্বে গনমাধ্যম কতটা মুক্ত তা একটু চোখ মেলে তাকালেই স্পষ্ট বুঝা যায়।সোমবার ইসরায়েলের একটি সামরিক আদালত এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে বিনা অভিযোগে ও বিনা বিচারে চার মাস আটকে রাখার নির্দেশ দেয়৷ ওমর নাজালকে গত ২৩শে এপ্রিল ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর ও জর্ডানের সীমান্তে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তিনি তখন বসনিয়ায় ইউরোপিয়ান ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস-এর একটি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে চলেছিলেন৷

ওদিকে রবিবার রাত্রে মিশরীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের মুখ্য কার্যালয় থেকে দু'জন সাংবাদিককে আটক করার ঘটনা নিয়ে কায়রো উত্তাল৷ বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘট থেকে শুরু করে পথবিক্ষোভ, সব কিছুই করার চেষ্টা করেছেন ও আজ মুক্ত গণমাধ্যম দিবসেও করছেন – পুলিশ ব্যাপকভাবে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও৷

গ্রেপ্তারকৃত দুই সাংবাদিক আমর বদর ও মাহমুদ আল-সাকা 'জানুয়ারি গেট' নামধারি একটি ওয়েবসাইটের হয়ে কাজ করেন৷ উভয়েই প্রেসিডেন্ট আল-সিসির সরকারের সমালোচক৷ বস্তুত তাদের গ্রেপ্তার থেকে নতুন করে প্রমাণ হচ্ছে, নিউ মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া কিভাবে রাজনৈতিক সচেতনতা ও প্রতিবাদের মুখ্য অস্ত্র ও মূল রণক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে৷

বাংলাদেশে ও একের পর এক মুক্তমনাদের হত্যার মাধ্যেমে মুক্তচিন্তার পথ যেমন রুদ্ধ করা হচ্ছে তেমনি সরকার প্রধান থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য এসব হত্যাকান্ডকে আর ও উসকে দিচ্ছে। যদিও এসব মুক্তমনাদের হত্যার বিষয়ে অপরাধী সনাক্তকরন কিংবা বিচারের কোন অগ্রগতি লক্ষ্যনীয় নয়।শুধু কি তাই আমাদের দেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকের উপর হামলা হয়েছে অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে মামলা দেওয়া হয়েছে সংবাদপত্রের সেন্সর আরোপ হয়েছে,সংবাদ মাধ্যেমের গলা চেপে ধরতে আইন ও করা হচ্ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেছেন, "সেন্সরশিপ বা আমাদের স্বাধীনতার ওপর আঘাত যে সব সময় সরকার বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আসছে তা নয়। কর্পোরেট দুনিয়া এখানে বড় ক্রিমিনাল। যারা বিজ্ঞাপনে অনেক টাকা খরচ করেন, তাদের মাধ্যমে অনেক কিছুই হয়… কর্পোরেট পেশি যখনই গণমাধ্যমের শক্তির সঙ্গে লড়তে আসছে, প্রায়ই আমরা হেরে যাচ্ছি।"

তার মতে, স্বাধীনতা থাকা আর সেই স্বাধীনতার চর্চা করতে পারা ভিন্ন বিষয়। ব্যবসায়ী থেকে গণমাধ্যমের মালিক হয়ে যাওয়া অনেকেই নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ব-সচেতন নন; যা থেকে সঙ্কটের সূচনা।

একটি গনতান্ত্রিক দেশে  গনতন্ত্র তখনই বিকশিত হতে পারে, যখন গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সাংবাদিকেরা যেমন আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করেন, তেমন আমাদেরও উচিত তাঁদের রক্ষা করা। বিশ্বের সর্বত্র নাগরিকদেরসুবিধার জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে আমাদের রক্ষা করতে হবে।