খালেদার ঘরে ফেরা এবং জাতির অর্জন

আশফাক আবীর হাসিব
Published : 5 April 2015, 05:48 PM
Updated : 5 April 2015, 05:48 PM

দীর্ঘ তপস্যার পরে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বিশেষ কার্যালয় থেকে বের হলেন। শুধু তাই নয় তাঁর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিলেন এবং জামিন লাভ করে বাসায় ফিরলেন। এটা দেশবাসীর জন্য অবশ্যই বিশেষ দিন।
দীর্ঘ তিন মাসের কর্মব্যস্ত অফিস শেষে বাসায় প্রত্যাবর্তন করলেন বেগম জিয়া।
একটানা দীর্ঘ দিন দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের রেকর্ড অর্জন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনে(নিধনে) অনবদ্য ভূমিকা রাখায় বেগম জিয়া অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ প্রশংসা এবং পদকের দাবীদার !!

সরকারের তরফ থেকে তাঁকে বারংবার বলা হয়েছে যে তিনি যেন বাসায় চলে যান। তিনি তত্ত্বাবধারক সরকারের দাবীতে তথাকথিত আন্দোলন চালিয়ে গেলেন এবং দেশের জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে বিশেষ অবদান রাখলেন! দীর্ঘ ৯২ দিনে আপোষহীন আন্দোলনের মাধ্যমে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে তিনি কি অর্জন করলেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন। আমরা অবশ্যই তার আপোষহীনতার প্রমান পেয়েছি বিভিন্ন বিশেষ বিষয়ে। যেমন পেট্রোল বোমা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি আপোষহীন ছিলেন।

বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের প্রশ্নে এতোটাই আপোষহীন ছিলেন যে পুত্রবিয়োগের সময়ও তিনি বের হলেন না কিংবা অন্যের প্রাননাশ করা থেকে বিরত করলেন না তার অনুগতদের। মাঝখান থেকে শত মায়ের বুক খালি হল। আজ তিনি বের হলেন এবং গাড়িবহর নিয়ে আদালতে গেলেন আবার জামিনও পেলেন। বাহ…!

অন্যদিকে বড় যুবরাজ, যিনি চিকিৎসার জন্য আইনের বিশেষ ব্যবস্থা প্যারোলে মুক্ত, তিনি তার বেফাঁস মন্তব্য চালিয়ে গেলেন এবং পেট্রোল আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য হুকুমাত নাযিল করে চললেন। এ যেন এক রূপকথা। তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন অবৈধ এবং তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া কোন নির্বাচনে তারা যাবেননা। কিন্তু আমরা কি দেখলাম, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার টিকিট কাটলেন। পেট্রোলবোমা বন্ধ, আন্দোলন স্তিমিত, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু কফিনে ঢুকে গেল। কারন তিনটি সিটি কর্পোরেশনের গদি তাদের নাকের সামনে মুলোর মত ঝুলে আছে। নগরের অলিখিত জমিদারতো তারাই ছিলেন। আর এখন শুরু হতে যাচ্ছে জমিদারি পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। তাই সব কর্মসূচী স্থগিত। প্রজন্মের ভবিষ্যতের প্রশ্ন যেখানে জড়িত ছিল সেই এসএসসি পরীক্ষার সময়ে সব মহলের অনুরোধ উপেক্ষা করেও জননিধন অব্যাহত রেখেছিল খালেদার নেতৃত্বাধীন জোট। সেখানে আকস্মিক সব কর্মসূচী স্থগিতের কারন জাতি বোঝে।কেন যে সরকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ঘোষনা আরও আগে দিলেননা জানিনা। গদি এবং ক্ষমতাই যে তাদের কাছে মুখ্য বিষয়। তাই খালেদা-নিজামি-তারেক গংদের আন্দোলন গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ছিলনা, ছিল গদি পুনরুদ্ধারের জন্য। মসনদের বিপরীতে খালেদাদের কাছে জন-নিরাপত্তা এবং প্রজন্মের ভবিষ্যত মূল্যহীন ছিল, যা এখন প্রমানিত সত্য। তিনটি সিটির গদির লোভ সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। এরা ক্ষমতার কাঙ্গাল। এই বিষয়গুলোই জাতির অনেক বড় অর্জন। মুখোশ উন্মোচন অনেক বড় অর্জন।

গণবিরোধী, জানমাল ক্ষয়কারী হরতাল, পেট্রোলবোমার বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিবাদ জানিয়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার যে সামাজিক যুদ্ধ চলেছে, তাতে বিজয় জাতির অর্জন। কিন্তু জাতি ভুলে যায় না, ভুলতে পারেনা। যে পেট্রোল বোমায় স্বজন হারা হয়েছে জনতা, সেই বোমা নিক্ষেপকারী, নির্দেশ দাতাদের জাতি ক্ষমা করবে না। শান্তিপ্রিয় জনগন তাদের ক্ষমতা অর্থাৎ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই এসবের জবাব দেবে। বেগম খালেদা জিয়ার জনগনকে বোকা ভাবা ঠিক হয়নি। ভক্ষককে রক্ষকের দায়িত্ব জনগন প্রদান করবে না।

বিলেতে বসে প্রিন্সের তৈরি রেসিপি টেষ্ট করার জন্য গোটা বাংলাদেশকে রান্নার চুলোয় পরিনত করেছেন বেগম জিয়া। আর জ্বালানী ছিল ৭১, ৭৫ এর দেশদ্রোহী চক্র। এভাবে হয় না, এভাবে হবেনা ম্যাডাম জিয়া। জনগনের ভাষা বুঝতে হবে। পেট্রোল বোমা বুঝেছেন, মানুষ বোঝেননি।

বেগম জিয়া বাসগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছেন, এটা জাতির জন্য অনেক স্বস্তিকর, অনেক প্রশান্তিদায়ক খবর। কিন্তু বিস্ময়ের বিস্ময় হচ্ছে বেগম জিয়ার অনুগত কর্মীরা, যারা তার নির্দেশে আইন অমান্য করে পেট্রোল বোমা মেরেছেন তাদেরকে তিনি কি উপহার দিলেন। যারা তার নির্দেশে হামলা করতে গিয়ে নিজেরা মারা পড়েছে, পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন, তাদের কি হবে। বেগম জিয়া তাদেরকে অথৈ জলে ফেলে রেখে ব্যক্তিগত মামলায় জামিন নিয়ে ঘরে ফিরলেন। জনগনের এই অংশকে কি পরবর্তীতে সাথে পাবেন বেগম জিয়া? জনগনের মন বুঝুন, কারন জনগনই আপনাদের রাজনৈতিক অবস্থানের নিয়ন্ত্রক।

বেগম জিয়ার প্রতি একটি বিশেষ অনুরোধ। জনাব তারেক রহমানকে ইতিহাস জেনে, বুঝে ইতিহাসবিদ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে উপকৃত করুন। আর যদি কোন মানসিক বিকৃতি ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে বিলেতের কোন বিখ্যাত মানসিক-চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিন। না হলে এভাবে ইতিহাস তৈরি করতে থাকলে একদিন হয়তো উনি ভন্ড পীরের মত নিজেকে নব্য পয়গম্বর ঘোষনা করে বসবেন (নাউযুবিল্লাহ)।