আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও কিছু অহেতুক অস্থিরতা-আতংক।

আশফাক আবীর হাসিব
Published : 9 Nov 2016, 06:09 PM
Updated : 9 Nov 2016, 06:09 PM

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে অভিনন্দন।

কিন্তু এই উপলক্ষে কয়েকদিন ধরে দেশের মধ্যে ও আমেরিকায় থাকা কিছু বাঙালী ডেমোক্রেটদের আকুতি লক্ষ করলাম।
হিলারির পক্ষে কোমর বেধে অফ লাইন-অনলাইনে ভোটের আহাজারি। প্রচার হল, ট্রাম্প জিতলে বাঙালী সহ সকল অভিবাসীকে আমেরিকা থেকে বের করে দেবেন।

কিন্তু ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে বিজয় ভাষনে ঘোষনা করলেন, 'আমি সকল আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হবো।' আরও বলেন, অভিবাসীরা মহান মানুষ। সকলকে একই সূত্রে গাঁথার অঙ্গীকার করেন।

কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও মাদার সংগঠন আরএসএসের বিজয়ের আগে/পরে ইন্ডিয়ার বিভিন্ন স্থানে দাবী উঠেছিল বা প্রস্তাব করেছিল, যারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময় ইন্ডিয়া গেছে তাদের ফেরত পাঠাবে। কয়জন ফেরত আসছে??

কিছুই হবে না। সব মাঠ গরম করার, ভোট ব্যাংক দখলের রাজনৈতিক বক্তৃতা। তাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন হবে না। কস্মিনকালেও ইন্ডিয়ায় যদি কোন ইসলামী দল ক্ষমতায় আসে বা ধরেন জাকির নায়েককেও যদি ক্ষমতা দেয়া হয়, তারাও কোনো কিছু ওলট-পালট করবে না। তাদের কাছেও মুখ্য বিষয় থাকবে তাদের ভূখন্ডের নিরাপত্তা, তাদের জনগণের নিরাপত্তা, তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে কে ক্ষমতায় থাকলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দেবে না, তাদের পক্ষেই ইন্ডিয়া থাকবে। মিঃ নরেন্দ্র মোদী নির্বাচিত হওয়ার পরে বিএনপি'র মিষ্টি বিতরনে মনে হয়েছিল, বেগম জিয়ার বয়স কমপক্ষে ৪০ বছর কমে গেছে!!!

পররাষ্ট্রনীতি নামক বিষয়টা বুঝতে হবে।

আমেরিকার ক্ষেত্রেও তাই। আবেগ দিয়ে ভূ-রাজনীতি হয় না। বিষয়টা গিভ এন্ড টেকের।
মানচিত্রের প্রশ্নে অন্যান্য অনেক কিছুই খুবই গৌণ হয়ে যায়।

এখন যারা হিলারির জন্য জান কোরবান করেছিল এটা ভেবে যে, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলেই রাতারাতি বাংলাদেশে বা বিশ্বে বিশাল বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবেন, তারা স্বপ্নে মিঠাই খায় আর ঘুম ভেঙ্গে দেখে কাথার অর্ধেক নাই। আর এখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে একারনে সব অভিবাসীকে আমেরিকা থেকে বের করে দিবেন, আর পৃথিবীর সব মুসলিমকে উনি মঙ্গল গ্রহে নির্বাসনে পাঠাবেন, এটা মনে করা চিলে কান নেয়ার সমতুল্য। আমেরিকায় গমনেচ্ছু অনেকেই এই ভেবে হতাশ, হয়ত তাদের আর আমেরিকায় ঢুকতে দেয়া হবেনা। হতাশার কিছুই নাই, আপনার মেধা-শ্রম ওদের দরকার।
এমন ভাবনা বা প্রচার করা অস্থিরতা তৈরির প্রাথমিক পর্যায়।

সুতরাং অহেতুক অস্থিরতা বা অপপ্রচার না করাই উত্তম। বৈশ্বিক রাজনীতি তার নিজের নিয়মেই চলবে। চলমান ভু-রাজনীতির মধ্যে আমাদের ঠিকভাবে পরিকল্পনা করে সুবিধা ঘরে তুলতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্ব সে পথেই হাটছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বের হয়ে বর্তমান সরকারের দৃঢ়চেতা মনবলে অত্যন্ত শক্ত মেরুদণ্ড নিয়ে বিশ্বের বুকে আমরা এগিয়ে চলেছি এবং এই পথচলা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।

আমেরিকার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন। আপনার নেতৃত্ব দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।
পৃথিবী কি নরকেই থাকবে, নাকি স্বর্গের দেখা পাওয়া যাবে ?