বাংলাদেশের সংবিধান

হাসান
Published : 25 April 2011, 09:49 AM
Updated : 25 April 2011, 09:49 AM

যে কোন সংগঠন বা সংস্থা কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন বা বিধিমালার আলোকে পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও থাকে সুনির্দিষ্ট্ নীতিমালা যাকে 'সংবিধান' বা Constitution বলা হয়। সংবিধান একটি রাষ্ট্রের দর্পন স্বরূপ। প্রতিটি রাষ্ট্রেরই একটি সুনির্দিষ্ট সংবিধান রয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান রচনার ইতিহাস
বাংলাদেশের সংবিধান তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণ গণপরিষদের সদস্য বলে পরিগণিত হয়। গণ-পরিষদের সদস্য ছিল ৪৩০।

– গণ-পরিষদের প্রথম অধিবেশণ বসে ১০ এপ্রিল, ১৯৭২। গণ-পরিষদের প্রথম স্পীকার ছিলেন শাহ আবদুল হামিদ এবং প্রথম ডেপুটি স্পিকার ছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ।

– বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির সদস্য ছিলেন ৩৪ জন। সংবিধান রচনা কমিটির প্রধান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য বেগম রাজিয়া বানু। সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। সংবিধান রচনা কমিটি ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেন।

– সংবিধানের খসড়া সর্ব প্রথম গণপরিষদে উত্থাপিত হয় ১২ অক্টোবর, ১৯৭২। সংবিধানের খসড়া গণপরিষদে উত্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন। ৪ নভেম্বর, ১৯৭২ বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া গণপরিষদে গৃহীত হয়। এজন্য ৪ নভেম্বর 'সংবিধান দিবস' হিসাবে পালিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর বা প্রবর্তিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২।

– বাংলাদেশের প্রথম হস্তলিখিত সংবিধান ছিল ৯৩ পাতার। হস্তলিখিত সংবিধানটির মুল লেখক ছিলেন আব্দুর রউফ। হস্তলিখিত সংবিধানটির অঙ্গসজ্জা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। গণপরিষদের সদস্যরা হস্তলিখিত মূল সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজী লিপিতে স্বাক্ষর করে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭২। গণপরিষদের ৩০৯ জন সদস্য হস্তলিখিত মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি।

– বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় রাষ্ট্রপ্রতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সংবিধানের সংশোধনী : বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৪ বার সংশোধনী আনা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। সংবিধান সংশোধনের জন্য ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে অনুমোদন দিতে হয়। সংবিধানের ১৪২ ধারা বলে এই সব সংশোধনী সমূহ আনা হয়েছে।

প্রথম সংশোধনী : উত্থাপিত হয় ১২ জুলাই ১৯৭৩। গৃহীত হয় ১৫ জুলাই ১৯৭৩ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৭ জুলাই ১৯৭৩। এ সংশোধনী আনীত ও গৃহীত হওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা গণহত্যাজনিত অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতা বিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল তাদের বিচারের জন্য সরকারকে উপযুক্ত ক্ষমতা প্রদান। এটি পূর্বে সংবিধানে এমনকি প্রচলিত অন্য কোন আইনেও ছিল না। এ লক্ষ্যে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের সাথে ৪৭(৩) অনুচ্ছেদ যোগ করা হয় এবং ৪৭(ক) নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয। ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে যুদ্ধ অপরাধীদের আইনের আশ্রয়, প্রকাশ্য বিচার সুপ্রীম কোর্টে মামলা দায়ের করার অধিকার প্রভূতি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

দ্বিতীয় সংশোধনী : উত্থাপন করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩। গৃহীত হয় ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বাড়ানো হয়, নিবর্তনমূলক আটক এবং রাষ্ট্রপতিকে যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এবং মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মামলা করার অধিকাও হিত করা হয়। প্রধানত এই সংশোধনী দেশের নাগরিকদের বিনা বিচারে আটকের বিধান, মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার বিধান এবং সংসদ অধিবেশন ৬০ দিনের বদলে ১২০ দিনের মধ্যে আহ্বান করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। উত্থাপনকারী : আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

তৃতীয় সংশোধনী : উত্থাপন করা হয় ২১ নভেম্বর ১৯৭৪। গৃহীত হয় ২৩ নভেম্বর ১৯৭৪ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায় ২৭ নভেম্বর ১৯৭৪। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৬ মে, ১৯৭৪ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত দিল্লী চুক্তির বৈধতা দেয়া হয়েছে। দিল্লী চুক্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমানা ১৫টি স্থানে রদবদল করতে হয়েছে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে দহগ্রাম আঙ্গুরপোতা ও ভারতকে বেরুবাড়ী হস্তান্তর এবং ২৫ বছর মেয়াদী ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তির সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়। এতে সংবিদানের ২(ক) উপ-অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা হয। উত্থাপনকারী : আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

চতুর্থ সংশোধনী:
উত্থাপন করা হয় ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫। গৃহীত হয় ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদনও লাভ করে একই দিন অর্থাৎ ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫। এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত সংশোধনী। এর মাধ্যমে ১৯৭২ এর সংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র ভূ-লুণ্ঠিত করা হয় এবং স্বৈরাচারী ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করা হয। এটি ছিল এদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এক দিনে একটি বিল পাশ হওয়ার ঘটনা। এ সংশোধনীর মাধ্যমে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি, সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, রাষ্ট্রপতি ও সংসদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি প্রভৃতি বিধান সংযোজিত হয়। এর মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আজীবন প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকা ও একমাত্র ক্ষমতাসীন দলের অস্তিত্বের বিপরীতে অন্য সকল রাজনৈতিক দলকে বেআইনি ঘোষণার ব্যবস্থা করা হয। এর দ্বারা রাষ্ট্রপতির ব্যাপক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয। যার মধ্যে মন্ত্রীপরিষদ ও উপরাষ্ট্রপতিকে তার কাছে জবাবদিহি করা, যে কোন সময়ে মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দেয়ার অধিকার, যে কোন আদেশ দান ও চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতিকে আইনের উর্ধ্বে রাখা, প্রতিরক্ষা বিভাগের সর্বাধিনায়ক করাসহ প্রভূতি বিষয় নিশ্চিত করা হয়। এর মাধ্যমে সংসদ একটি গুরুত্বহীন ও ক্ষমতাহীন বিভাগে পরিণত হয়। নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার সুপ্রিম কোর্টের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় স্থানান্তরিত হয় এবং রাষ্ট্রপতিকে এক ব্যাপক ক্ষমতাধর স্বৈরাচারী শাসক হবার সব রকমের সুযোগ তৈরি করে দেয়।

– চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম গণতন্ত্র তিরোহিত হয়। উত্থাপনকারী আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর।

পঞ্চম সংশোধনী : উত্থাপন করা হয় ৪ এপ্রিল ১৯৭৯। গৃহীত হয় ৫ এপ্রিল ১৯৭৯, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ৬ এপ্রিল ১৯৭৯। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানের পর হতে ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকান্ডের ফরম্যান ও প্রবিধানের বৈধতা দান করা হয়। এ সংশোধনীর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হল :

১. সংবিধানে প্রারম্ভে প্রস্তাবনায় 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করা হয।

২. ৪টি মূলনীতির ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে 'সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস' এবং 'সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার অর্থে 'সমাজতন্ত্র' প্রতিস্থাপন করা হয়।

৩. সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'মুক্তিসংগ্রাম' শব্দগুচ্ছের পরিবর্তে 'স্বাধীনতা যুদ্ধ' শব্দগুচ্ছ সন্নিবেশিত করা হয়।

৪. 'ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ' এর বৈধতা দেয়া হয।

৫. এদেশের জনগণের নাগরিক পরিচয় 'বাংলাদেশী' বলে নির্দিষ্ট করা হয। উত্থাপনকারী সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান।

ষষ্ঠ সংশোধনী : ষষ্ঠ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ১ জুলাই ১৯৮১। গৃহীত হয় ৯ জুলাই ১৯৮১ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ৯ জুলাই ১৯৮১। এ সংশোধনী ছিল উপ-রাষ্ট্রপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরণ। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের জন্য এ সংশোধনী আনা হয। সংবিধানের ৫০ ও ৬২(২) অনুচ্ছেদের বিধানমতে রাষ্ট্রের লাভ জনক পদে আসীন কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সংবিধানের ৬২(২) (ক) ধারা সংযোজন করার মাধ্যমে তা সংশোধন করা হয, যেখানে বলা হয়েছে যে কেউ রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উপ-প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী হওয়ার কারনে প্রজাতন্ত্রের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না। এর মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করে দেয়। উত্থাপনকারী : সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান।

সপ্তম সংশোধণী : উত্থাপন করা হয় ১০ নভেম্বর ১৯৮৬। গৃহীত হয় ১০ নভেম্বর ১৯৮৬। এ সংশোধনী ছিল পঞ্চম সংশোধনীর ধারাবাহিকতা মাত্র। পাঁচ ঘন্টার ব্যবধানে উত্থাপিত ও গৃহীত এই বিলটি একই দিনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের 'বাষট্টি' শব্দটির পরিবর্তে 'পয়ষট্টি' শব্দটি প্রতিস্থাপিত হয় এবং ২৪ মার্চ ১৯৮২ থেকে ১১ নভেম্বর, ১৯৮৬ পর্যন্ত সামরিক সরকারের সকল কর্মকান্ডের বৈধতা দেয়া হয।

উত্থাপনকারী : আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিচারপতি একে এম নুরুল ইসলাম।

অষ্টম সংশোধনী : অষ্টম সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ১১ মে, ১৯৮৮, গৃহীত হয় ৭ জুন, ১৯৮৮ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন '৯ জন ১৯৮৮। এই সংশোধনটি আনয়ন করা হয় তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠা আন্দোলনকে অবদমন বা স্তিমিত করার কৌশল হিসেবে। এর মাধ্যমে সংবিধানের যেসব পরিবর্তন নিয়ে আসা হয় তা হল-
১. ৩০ নং আইনের ধারা বলে ২(ক) অনুচ্ছেদে সংযোজন, যেখানে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।

২. ৩০ নং অনুচ্ছেদের ৩টি উপ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি-যাতে রাষ্ট্র থেকে সাহসিকতা বা একাডেমিক বিষয় ছাড়া কোনরূপ খেতাব, ভূষন, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষন দেয়ার বিষয়টি নিষিদ্ধ ছিল, এই পরিবর্তনের ফলে তা আর নিষিদ্ধ রইল না। এছাড়া প্রেসিডেন্টের অনুমোদন ব্যতীত বিদেশী রাষ্ট্র থেকে অনুরূপ খেতাব গ্রহণ করা বৈধ ছিল না। এই সংশোধনী সেই বাধা দূর করেছে।

৩. সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। সংবিধানে ১০০ নং অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপন করে বলা হয় যে রংপুর, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। প্রধান বিচারপতি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারককে মনোনয়ন দিয়ে প্রতিটি বেঞ্চে পাঠাবেন। উল্লেখ্য যে, শেষোক্ত পরিবর্তনটি ১৯৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশ বলে বাতিল ঘোষণা করা হয়। এছাড়া এ সংশোধনীতেই রাজধানীর ও ভাষার বানানে পরিবর্তন এনে উধপপধ কে উযধশধ এবং ইবহমধষর কে ইধহমষধ করা হয়। উত্থাপনকারী : সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

নবম সংশোধণী : উত্থাপন করা হয় ৬ জুলাই ১৯৮৯, গৃহীত হয় ১০ জুলাই ১৯৮৯ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ১১ জুলাই, ১৯৮৯। এ সংশোধনীর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তির দুই বারের অধিক প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নিয়ম-কানুন জারি করা হয়েছে। অবশ্য দ্বাদশ সংশোধনীর পর এ সংশোধনীর কার্যকারিতা আর নেই। উত্থাপনকারী : সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

দশম সংশোধনী : দশম সংশোধনী গৃহীত হয় ১২ জুন, ১৯৯০ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২৩ জুন, ১৯৯০। উত্থাপনকারী আইন ও বিচারমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম। এ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৩০ টি মহিলা আসনকে আরও ১০ বছরের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। এ ব্যবস্থা ছিল অনিবার্য অনুসঙ্গ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত খুটিনাটি এতে উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া সংবিধানের ইংরেজী ও বাংলা ভাষ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত যে অসঙ্গতি ছিল তা দূর করা হয়।

একাদশ সংশোধনী : একাদশ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ২ জুলাই, ১৯৯১। গৃহীত হয় ৬ আগস্ট, ১৯৯১ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১০ আগস্ট, ১৯৯১। উত্থাপনকারী; আইন ও বিচারমন্ত্রী মির্জা গোলাম হাফিজ।

একাদশ সংশোধনীটিও সাংবিধানিক সংকট উত্তরনের লক্ষ্যে সম্পাদিত হয়। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সরকার প্রধান এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করলে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির কার্যভার গ্রহণ করেন। কিন্তু সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের লাভজনক পদে থেকে কেউ রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন না। তিন জোটের সমর্থনের কারনে তিনি সেখানে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করেন, ফলে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে তার পূর্বপদে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচালিত সকল কর্মকান্ডের বৈধতা প্রদান কর হয়।

দ্বাদশ সংশোধনী : দ্বাদশ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ২ জুলাই, ১৯৯১। গৃহীত বা সংসদে পাশ হয় ৬ আগস্ট, ১৯৯১। উত্থাপনকারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই সংশোধনীর মূল লক্ষ্য ছিল তিন জোটের ঘোষনা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয পদ্ধতির সরকার প্রবর্তন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ সালে গৃহীত গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন লাভের পরে ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে এই সংশোধনী প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং সংবিধানের ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন ও সংশোধনী আনয়ন করা হয়। এই সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাস করে বলা হয়, তিনি সংসদ-সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হবেন এবং স্বাধীনভাবে তিনি দুটি কাজ করতে পারবেন। আর তা হল-
১. অধিকাংশ সংসদ সদস্যগণের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ।

২. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ এর মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত হয়, সকল নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভার হাতে ন্যাস্ত হয়। সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যকার বিরতি ৬০ দিন নির্ধারণ করা হয।

ত্রয়োদশ সংশোধনী : ত্রয়োদশ সংশোধনী উত্থাপন করা হয় ২১ মার্চ ১৯৯৬ গৃহীত তথা সংসদে পাশ হয় ২৭ মার্চ, ১৯৯৬ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ২৮ মার্চ, ১৯৯৬। উত্থাপনকারী : শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।

এ সংশোধনীর মাধ্যমে ভবিষ্যতে সকল জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য 'নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা' প্রবর্তন করা হয়। এই সরকার সংসদ ভেঙ্গে দেবার পর দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং নির্বাচনের পর প্রধামন্ত্রীর ক্ষমতা গ্রহনের সঙ্গে সঙ্গে এর মেয়াদ শেষ হবে। সংশোধনীর ফলে সংবিধানে আনীত এ বিষয়গুলো ব্যাপক এবং বিস্তারিত। এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান, তার যোগ্যতা, দায়িত্ব, পদত্যাগ বা ক্ষমতা হস্তান্তর থেকে শুরু করে সরকারের সহযোগিতার জন্য ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ, তাদের যোগ্যতা, কর্তব্য, শপথ গ্রহণ পদত্যাগ প্রভৃতি বিষয়গুলো বর্ণিত হয়েছে।

চতুর্দশ সংশোধণী : প্রথম উত্থাপন করা হয় ১৭ মার্চ ২০০৪ ; পুনরায় উত্থাপন করা ২৮ এপ্রিল, ২০০৪; সংসদে পাশ হয় ১৬ মে, ২০০৪ এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ১৭ মে, ২০০৪। ২২৬-১ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। উত্থাপনকারী আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। বিশেষত সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ পূরনের লক্ষ্যে অর্থাৎ জাতীয় সংসদে মহিলা আসন সংরক্ষনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই সংশোধনী আনীত হলেও একই সাথে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী সংযোজিত হয়েছে।

বিষয়বস্তু
১. ৪৫টি সংরক্ষিত মহিলা আসন আগামী ১০ বৎসরের জন্য সংরক্ষন এবং আনুপাতিক হারে আসন বন্টন।
২. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি সরকারী অফিসসহ নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষন ও প্রদর্শন।
৩. সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বয়স ৬৫ থেকে ৬৭, বছর মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বয়স নিয়োগ লাভের তারিখ হতে ৫ বছর বা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত এবং সরকারি কর্মকমিশনের সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যদের বয়স ৬২ থেকে ৬৫ তে উন্নীত করণ।
৪. নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ করাতে স্পীকার ব্যর্থ হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
সংবিধানের বিভাগ, বিষয় ও অনুচ্ছেদে
অধ্যায়/ভাগ বিষয় অনুচ্ছেদ
প্রথম প্রজাতন্ত্র ১-৭

দ্বিতীয় রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ৮-২৫

তৃতীয় মৌলিক অধিকার ২৬-৪৭

চতুর্থ নির্বাহী বিভাগ ৪৮-৬৪
১ম পরিচ্ছেদ-রাষ্ট্রপতি ৪৮-৫৪
২য় পরিচ্ছেদ-প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভা ৫৫-৫৮(ক)
৩য় পরিচ্ছেদ-স্থানীয় শাসন ৫৯-৬০
৪র্থ পরিচ্ছেদ-প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ ৬১-৬৩
৫ম পরিচ্ছেদ-অ্যাটর্নি জেনারেল ৬৪

পঞ্চম আইনসভা ৬৫-৬৩
১ম পরিচ্ছেদ-সংসদ ৬৫-৭৯
২য় পরিচ্ছেদ-আইন প্রণয়ন ও অর্থ সংক্রান্ত পদ্ধতি ৮০-৯২
৩য় পরিচেছদ-অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতা ৯৩

ষষ্ঠ বিচারবিভাগ ৯৪-১১৭
১ম পরিচ্ছেদ-সুপ্রীম কোর্ট ৯৪-১১৩
২য় পরিচ্ছেদ-অধ:স্তন আদালত ১১৪-১১৬
৩য় পরিচ্ছেদ-প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল ১১৭

সপ্তম নির্বাচন ১১৮-১২৬

অষ্টম মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ১২৭-১৩২

নবম বাংলাদেশের কর্মবিভাগ ১৩৩-১৪১
১ম পরিচ্ছেদ-কর্মবিভাগ ১৩৩-১৩৬
২য় পরিচ্ছেদ-সরকারী কর্মকমিশন ১৩৭-১৪১
ক. জরুরী বিধানাবলী ১৪১ক-১৪১গ

দশম সংবিধান সংশোধন ১৪২

একাদশ বিবিধ ১৪৩-১৫৩

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫৩টি ধারা

প্রথম ভাগ : প্রজাতন্ত্র
অনুচ্ছেদ
১. প্রজাতন্ত্র, ২. প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় সীমানা, ২-ক, রাষ্ট্রধর্ম, ৩. রাষ্ট্র ভাষা, ৪. জাতীয় সঙ্গীত, পতাকা ও প্রতীক, ৫. রাজধানী, ৬. নাগরিকত্ব, ৭. সংবিধানের প্রধান্য।

দ্বিতীয় ভাগ : রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনিতি
৮. মূলনীতিসমূহ, ৯. স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন, ১০. জাতীয় জীবনে মহিলাদের অংশগ্রহণ, ১১. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ১২. [বিলুপ্ত], ১৩. মালিকানার নীতি, ১৪. কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি, ১৫. মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, ১৬. গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষিবিপ্লব, ১৭. অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা, ১৮. জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা, ১৯. সুযোগের সমতা, ২০. অধিকার ও কর্তব্যরূপে কর্ম, ২১. নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য, ২২. নির্বাহী বিভাগ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, ২৩. জাতীয় সংস্কৃতি, ২৪. জাতীয স্মৃতি নিদর্শন প্রভূতি, ২৫. আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন

তৃতীয় ভাগ : মৌলিক অধিকার
২৬. মৌলিক অধিকারের সহিত অসামাজ্ঞস্য আইন বাতিল, ২৭. আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ২৮. ধর্ম প্রভৃতি কারণের বৈষম্য, ২৯. সরকারী নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা, ৩০. বিদেশী খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ, ৩১. আইনের আম্রয় লাভের অধিকার, ৩২. জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ, ৩৩. গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ, ৩৪. জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধকরন, ৩৫. বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষন, ৩৬. চলাফেরার স্বাধীনতার, ৩৭. সমাবেশের স্বাধীনতা, ৩৮. সংগঠনের স্বাধীনতা, ৩৯. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা, ৪০. পেশা বা বৃত্তির-স্বাধীনতা, ৪১. ধর্মীয় স্বাধীনতা, ৪২. সম্পত্তির অধিকার, ৪৩. গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষন, ৪৪. মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ, ৪৫. শৃঙ্খলামূলক আইনের ক্ষেত্রে অধিকারের পরিবর্তন, ৪৬. দায়মুক্তি-বিধানের ক্ষমতা, ৪৭. কতিপয় আইনের হেফাজত, ৪৭ক. সংবিধানের কতিপয় বিধানের অপ্রযোজ্যতা

চতুর্থ ভাগ : নির্বাহী বিভাগ
১ম পরিচ্ছেদ-রাষ্ট্রপতি
৪৮. রাষ্ট্রপতি, ৪৯. ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার, ৫০. রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ, ৫১. রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তি, ৫২. রাষ্ট্রপতির অভিশংসন, ৫৩. অসামর্থের কারনে রাষ্ট্রপতির অপসারন, ৫৪. অনুপস্থিতি প্রভূতির কালে রাষ্ট্রপতি পদে স্পীকার।
২য় পরিচ্ছেদ-প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভা
৫৫. মন্ত্রীসভা, ৫৬. মন্ত্রিগণ, ৫৭. প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ, ৫৮. অন্যান্য মন্ত্রীর পদের মেয়াদ
তৃতীয় পরিচ্ছেদ-স্থানীয় শাসন
৫৯. স্থানীয় শাসন, ৬০ স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা
৪র্থ পরিচ্ছেদ-প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ
৬১. সর্বাধিনায়কতা, ৬২. প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগে ভর্তি প্রভূতি, ৬৩. যুদ্ধ
৫ম পরিচ্ধে-অ্যাটর্নি জেনারেল
৬৪. অ্যাটর্নি জেনারেল

পঞ্চম ভাগ : আইনসভা
১ম পরিচ্ছেদ-সংসদ
৬৫. সংসদ-প্রতিষ্ঠা, ৬৬. সংসদে নির্বাচিত হইবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা, ৬৭. সদস্যদের আসন শূন্য হওয়া, ৬৮. সংসদ সদস্যদের পারিশ্রমিক প্রভূতি, ৬৯. শপথ গ্রহণের পূর্বে আসন গ্রহণ বা ভোটদান করিলে সদস্যের অর্থদণ্ড, ৭০. পদত্যাগ ইত্যাদি কারনে আসন শূন্য হওয়া, ৭১. দ্বৈত-সদস্যতায় বাধা, ৭২. সংসদের অধিবেশন, ৭৩. সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও বাণী, ৭৩ক. সংসদ সম্পর্কে মন্ত্রীগণের অধিকার, ৭৪. স্পিকার ও ডেপুটি স্পকিার, ৭৫. কার্যপ্রণালী-বিধি, কোরাম প্রভূতি, ৭৬. সংসদের স্থায়ী কমিটিসমূহ, ৭৭. ন্যায়পাল, ৭৮. সংসদ ও সস্যদের বিশেষ অধিকার ও দায়মুক্তি, ৭৯. সংসদ-সচিবালয়
২য় পরিচ্ছেদ-আইন প্রণয়ন ও অর্থ সংক্রান্ত পদ্ধতি
৮০. আইন প্রণয়-পদ্ধতি, ৮১. অর্থবিল, ৮২. আর্থিক ব্যবস্থাবলী সুপারিশ, ৮৩. সংসদের আইন ব্যতীত করারোপে বাধা, ৮৪. সংযুক্ত তহবিল ও প্রজাতন্ত্রের সহকারী হিসাব, ৮৫. সরকারী অর্থের নিয়ন্ত্রন, ৮৬. প্রজাতন্ত্রের সরকারী হিাসাবে প্রদেয় অর্থ, ৮৭. বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি, ৮৮. সংযুক্ত তহবিলের উপর দায়, ৮৯. বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি সম্পর্কে পদ্ধতি, ৯০. নির্দিষ্টকরণ আইন, ৯১. সম্পূরক ও অতিরিক্ত মঞ্জুরী, ৯২. হিসাব, ঋণ প্রভূতির ভোট, ৯৩. [বিলুপ্ত]
৩য় পরিচ্ছেদ-অধ্যাদেশ প্রণয়ন-ক্ষমতা
৯৩. অধ্যাদেশ প্রণয়ন ক্ষমতা

(ষষ্ঠ ভাগ : বিচার বিভাগ) ১ম পরিচ্ছেদ-সুপ্রীম কোর্ট
৯৪. সুপ্রীম কোর্ট প্রতিষ্ঠা, ৯৫. বিচারক নিয়োগ, ৯৬. বিচারকদের পদের মেয়াদ, ৯৭. অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, ৯৮. সুপ্রীম কোর্টের অতিরিক্ত বিচারকগণ, ৯৯. বিচারকগণের অক্ষমতা, ১০০. সুপ্রীম কোর্টের আসন (১০) হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার, ১০২. কতিপয় আদেশ ও নির্দেশ প্রভূতি দানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতা, ১০৩. আপিল বিভাগের এখতিয়ার, ১০৪. আপীল বিভার্গে পরোয়ানা জারী ও নির্বাহ, ১০৫. আপিল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা, ১০৬. সুপ্রীম কোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার, ১০৭. সুপ্রীম কোর্টের বিধিপ্রণয়ন-ক্ষমতা, ১০৮. কোর্ট অর রেকর্ড রূপে সুপ্রীম কোর্ট, ১০৯. আদালত সমূহের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রন, ১১০. অধস্তন আদালত হইতে হাইকোর্ট বিভাগের মামলা স্থানান্তর, ১১১. সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বাধ্যতামূলক কার্যকারিতা, ১১২. সুপ্রীম কোর্টের সহায়তা, ১১৩. সুপ্রীম কোর্টের কর্মচারীগণ
২য় পরিচ্ছেদ-অধস্তন
১১৪. অধ:স্তন আদালতসমূহ প্রতিষ্ঠা, ১১৫. অধ:স্তন আদারতে নিয়োগ, ১১৬. অধ:স্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রন ও শৃঙ্খলা, ১১৬ক. বিচার বিভাগীয় কর্মচারীগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন
৩য় পরিচ্ছেদ-প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল
১১৭. প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালসমুহ
ষষ্ঠ ভাগ : জাতীয় কল-[বিলুপ্ত]

সপ্তম ভাগ : নির্বাচন
১১৮. নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা, ১১৯. নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, ১২০. নির্বাচন কমিশনের কর্মচারগিণ, ১২১. প্রতি এলাকার জন্য একটি মাত্র ভোটার তালিকা, ১২২. ভোটার-তালিকায় নামভুক্তি যোগ্যতা, ১২৩. নির্বাচন-অনুষ্ঠানের সময়, ১২৪. নির্বাচন সম্পর্কে সংসদের বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা, ১২৫. নির্বাচনী আইন ও আইনের বৈধতা, ১২৬. নির্বাচন কমিশনকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তাদান।

অষ্টম ভাগ : মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক
১২৭. মহাহিসাব নিরীক্ষক পদের প্রতিষ্ঠা, ১২৮. মহা হিসাব নিরীক্ষকের দায়িত্ব, ১২৯. মহা হিসাব নিরীক্ষকের কর্মের মেয়াদ, ১৩০. অস্থায়ী মহা হিসাব নিরীক্ষক, ১৩১. প্রজাতন্ত্রের হিসাব রক্ষার আকার ও পদ্ধতি, ১৩২. সংসদে মহা হিসাব নিরীক্ষকের রিপোর্ট উপস্থাপন

নবম ভাগ : বাংলাদেশের কর্মবিভাগ
১ম পরিচ্ছেদ- কর্মবিভাগ
১৩৩. নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী, ১৩৪. কর্মের মেয়াদ, ১৩৫. অসামরিক সরকারী কর্মচারীদের প্রভূতি, ১৩৬. কর্মবিভাগ পুনর্গঠন
২য় পরিচ্ছেদ-সরকারী কর্মকমিশন
১৩৭. কমিশন প্রতিষ্ঠা, ১৩৮. সদস্য নিয়োগ, ১৩৯. পদের মেয়াদ, ১৪০. কমিশনের দাযিত্ব, ১৪১. বার্ষিক রিপোর্ট

দশম ভাগ : সংবিধান সংশোধন
১৪২. সংবিধানের বিধান সংশোধনের ক্ষমতা।

একাদশ ভাগ : বিবিধ
১৪৩ প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি, ১৪৪. সম্পত্তি ও কারবার প্রভূতি সম্পর্কে নির্বাহী কর্তৃত্ব, ১৪৫. চুক্তি ও দলিল, ১৪৫ক. আন্তর্জাতিক চুক্তি, ১৪৬. বাংলাদেশের নামে মামলা, ১৪৭. কতিপয় পদাধিকারীর পারিশ্রমিক প্রভূতি, ১৪৮. পদের শপথ, ১৪৯. প্রচলিত আইনের হেফাজত, ১৫০. ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী, ১৫১. রহিতকরণ, ১৫২. ব্যাখ্যা, ১৫৩. প্রবর্তন, উল্লেখ, নির্ভরযোগ্য পাঠ

তথ্য কনিকা
বিভিন্ন পদের জন্য নূন্যতম বয়স
পদ – ন্যূনতম বয়স
– রাষ্ট্রপতি – ৩৫ বৎসর
– প্রধানমন্ত্রী – ২৫ বৎসর
– মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী – ২৫ বৎসর
– স্পীকার – ২৫ বৎসর
– সংসদ সদস্য – ২৫ বৎসর

– বাংলাদেশের সংবিধান প্রস্তাবনা দিয়ে শুরু এবং ৪টি তফসিল দিয়ে শেষ হয়েছে।
– সংবিধানের প্রস্তাবনার উপরে লেখা আছে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম'

৪টি তফসিল
প্রথম তফসিল : অন্যান্য বিধান সত্ত্বেও কার্যকর আইন
দ্বিতীয় তফসিল : রাষ্ট্রপতি নির্বাচন (বিলুপ্ত)
তৃতীয় তফসিল : শপথ ও ঘোষণা
চতুর্থ তফসিল : ক্রান্তিকাল ও অস্থায়ী বিধানমালা

– সরকারী বিল : সংসদে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের উত্থাপিত বিলকে 'সরকারী বিল' বলে।
– 'বেসরকারী বিল' : সংসদে মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ছাড়া অন্য সংসদ সদস্য কর্তৃক উত্থাপিত বিলকে 'বেসরকারী বিল' বলে।
– জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি : বর্তমানে জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটি ৪৮টি। এর মধ্যে মন্ত্রাণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ৩৭টি এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ১১টি।
– জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিকে বলা হয় 'মিনি পার্লামেন্ট'।
– বাংলাদেশের সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকারক হল সুপ্রীম কোর্ট
– বাংলাদেশের সরকারী কর্মকমিশন সংস্থাপনমন্ত্রণালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট
– বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (ইঈঝ) ক্যাডার সংখ্যা ২৮টি
– জরুরী অবস্থার সময় সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৪০ এবং ৪২ নং অনুচ্ছেদ স্থগিত করা হয়।
– সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ৮, ৪৮, ৫৬ অনুচ্ছেদের কোন বিধানাবলীর সংশোধনের জন্য গণভোট প্রয়োজন হয়।
আইন সম্পর্কিত কতিপয় শব্দ
– ৫৪ ধারা বিনা ওয়ারেন্টে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করার ক্ষমতা
– ১৪৪ ধারা মানুষের চলাচল আচরণ এবং কর্মকান্ডের উপর বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রন। যেমন ৪ জনের বেশি একত্রে চলাচল নিষিদ্ধ, আগ্নেয়াস্ত্র বহন এবং এক জায়গায় একত্র-হওয়া বা করা নিষিদ্ধ।
– ১৫৪ ধারা- এই ধারায় এজাহার রেকর্ড করা হয়।
– ১৬৪ ধারা- এই ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
– ১৭৩ ধারা এই ধারায় চার্জশীট দাখিল করা হয।
– ৪২০ ধারা- বাংলদেশের পেনাল কোর্ডের একটি ধারা যেখানে প্রতারণার জন্য শাস্তির বিধান রাখা আছে।
– FIR- First Information Report ৎঃ এটি প্রাথমিক তথ্য বিবরণী যা এজাহার নামে পরিচিত।
– PP-Public Procecutor-যার মাধ্যমে সমস্ত ক্রিমিনাল মামলা প্যারোল নির্বাহী আদেশে মুক্তি।

– বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আইন
-আইন – পাসের সময় সংশোধিত হয়
– দণ্ডবিধি- ১৮৬০
– পুলিশ আইন- ১৮৬১
– স্বাক্ষ্য আইন – ১৮৭২
– চুক্তি আইন – ১৮৭২
– সাবালকত্ব আইন- ১৮৭৫
– অস্ত্র আইন- ১৮৭৮
– সম্পত্তি হস্তান্তর আইন- ১৮৮২
– ট্রাস্ট অ্যাক্ট- ১৮৮২
– বিস্ফোরক আইন- ১৮৮৪
– ফৌজদারী কার্যবিধি- ১৮৯৮
– তামাদি আইন- ১৯০৮
– সরকারী গোপনীয়তা আইন- ১৯২৩
– সাকসেশন অ্যাক্ট- ১৯২৫
– বাল্য বিবাহ আইন- ১৯২৯ -১৯৮৪
– আরবিট্রেশন অ্যাক্ট- ১৯৩৭
– ট্রেড মার্কস অ্যাক্ট- ১৯৪০
– ভবঘুরে আইন- ১৯৪৩
– ট্রেজারি রুলস- ১৯৪৪
– আনসার আইন- ১৯৪৮
– মুসলিম পারিবারিক আইন- ১৯৬১ -১৯৮৬
– স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা নিবন্ধীকরন ও নিয়ন্ত্রন আইন – ১৯৬১
– বিশেষ ক্ষমতা আইন- ১৯৭৪
– শিশু আইন- ১৯৭৪
– স্থানীয় শাসন অধ্যাদেশ- ১৯৭৬
– যৌতুক নিরোধ আইন- ১৯৮০ -১৯৮৬
– বিবাহ ও তালাক নিবন্ধীকরণ আইন- ১৯৭৪ -১৯৭৫
– ন্যায়পাল আইন – ১৯৮০
– বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা – ১৯৮১
– ভূমিকা সংস্কার অধ্যাদেশ – ১৯৮৪
– পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ – ১৯৮৫
– বাংলাভাষা প্রচলন আইন- ১৯৮৭
– মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন- ১৯৯০
– প্রাথমিক শিক্ষা (বাদ্যতামূলক আইন)- ১৯৯০
– ব্যাংক কোম্পানি আইন- ১৯৯১
– কোম্পানি আইন- ১৯৯৪
– সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন (বিশেষ বিধান)- ১৯৯৪
– নারী ও শিশু নির্যাতন আইন- ২০০০
– অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ- ২০০১
– আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আইন- ৯ এপ্রিল, ২০০২
– দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল আইন – ১ ডিসেম্বর, ২০০২
– যৌথবাহিনীর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ- ৯ জানুয়ারি ২০০৩
– দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪
– জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন আইন- ২ ডিসেম্বর, ২০০৪ -২ জুন, ২০০৬
– ধুমপান ও তামাকজাতপণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রন- ১৫ মার্চ, ২০০৫
– ভূমি রেজিস্ট্রেশন আইন কার্যকর হয় – ১ জুলাই, ২০০৫
– কর ন্যায়পাল আইন- ১০ জুলাই, ২০০৫
– বাংলাদেশ শ্রম আইন – ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০০৬
– ভ্রাম্যমান আদালত অধ্যাদেশ – ১ নভেম্বর, ২০০৭
– তথ্য অধিকার আইন- ২৯ মার্চ, ২০০৯
– ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন- ১ এপ্রিল, ২০০৯
– গ্রাম সরকার (রহিতকরন) বিল- ৬ এপ্রিল, ২০০৯
– শেখ পরিবারের সদস্যগণের নিরাপত্তা বিল- ১৩ অক্টোবর, ২০০৯
(মূল)।
***
আপডেট চলবে-

***
আমার আগের পোস্ট –
নববর্ষের সাতকাহন
পোস্টে আপনাদের পরামর্শ আশা করছি।