একান্ত সাক্ষাৎকারে আইসিটি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীঃ একটি মাত্র আচরন দিয়ে মানুষের সামগ্রিক আচরন বিশ্লেষন করা যায় না

হাসানুজ্জামান তালুকদার
Published : 1 Oct 2014, 06:27 AM
Updated : 1 Oct 2014, 06:27 AM

নিজের দেওয়া বক্তব্য বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক সমাবেশে নিজেকে হজ্বের বিরোধী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ।

তিনি বলেন, "হজ্বে জনশক্তি নষ্ট হয়। হজের জন্য বাংলাদেশ থেকে এ বছর ২০ লাখ লোক সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নাই। কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।"

পরে তার এই বক্তব্য দেওয়া ভিডিওটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

মি. সিদ্দিকীর নিজের দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও তার এধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।

যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা থেকে মেক্সিকো যাবার পথে বিমানে ভ্রমনকালে সিটিজেন জার্নালিজমকে নিম্নোক্ত সাক্ষাতকারটি দেন বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। উক্ত সাক্ষাতকারের শুরুতে তিনি সাংবাদিকদের একহাত দেখে নেন। অত:পর তিনি তার বক্তব্য এবং পরিকল্পনার সংক্ষিপ্ত একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটি হুবুহু নিম্ন বর্ননা করা হলোঃ

সিটিজেন জার্নালিজম: আচ্ছা মিনিস্টার স্যার, আপনী যে বক্তব্য দিয়েছেন এতে করে বাংলাদেশের সর্বস্থরের জনগোষ্ঠী আপনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এমন কি আপনার নিজ দলেরও নেতা কর্মীরাও আপনার সমালোচনা করেছে। এতে করে আপনার মন্ত্রীত্ব কি চলে যেতে পারে? আপনী এর দায়ভার কিভাবে এড়াবেন?

লতিফ সিদ্দিকী: আমি আমার বক্তব্যের ১০০ ভাগ দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেব মানে, আমি যা বলব-তার দায়িত্ব নেব না, কে বলল আপনাকে? আমি একজন দায়িত্বশীল লোক। তাছাড়া আমাকে একটু রিক্স নিতেই হবে — আফটার অল ভাল কিছু করতে হলে। কবি বলেছেন; এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান। আপনার সাংবাদিকরা কি সব আলতু ফালতু ইদুর পুটি ব্যাপার নিয়ে সাক্ষাতকার নিতে আসেন আমার মাথা ব্যাথা করে। আপনারা শুধু দু'কলম লেখাই শিখেছেন। কোন গবেষনা এনালাইসিস শিখেন নি। আমাকে কি মখা – মহিউদ্দিন খান আলমগীর মনে করেছেন যে কিনা বলেছিল বীম কলাম ধরে আট দশ জন মানুষ ধাক্কা মেরে আট তলা বিল্ডিং ফেলে দিয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশে জার্নালিজমে উচ্চশিক্ষার মান আরো বাড়াতে হবে। আমি রাষ্ট্রপতি হতে পারলে তখন সাংবাদিক আর গনমাধ্যমের জন্য অনেক বেশী বাজেট আর সুযোগ সুবিধা রাখব। আর সব বিরুদ্ধ কথা তো সত্যিকারে বিরুদ্ধ নয়, ঐ যে মঞ্চে বসে আমি একজনকে বললাম যে আমার নির্বাচনের সময় সে আমাকে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছে, এটা কি সত্যি তাকে তিরস্কার করেছে? আমি তো সবার সামনে আমার বিপদ ও প্রয়োজনের সময় পাশে দাড়ানো এক বন্ধুকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। তখন আমাকে ঐ পঞ্চাশ হাজার টাকাই দিয়েছিল কে বলুন?

সিটিজেন জার্নালিজম: কিন্তু রিক্স নেবার বিষয়টা স্যার ঠিক বুঝতে পারিনি। আমাদের যদি সবকিছু খুলে বলেন তবে আমরাও আপনার পক্ষে, আপনাকে প্রমোট করার জন্য কাজ করতে পারবো।

লতিফ সিদ্দিকী: শুনুন, রাজনীতির অন্যতম একটি যোগ্যতা হচ্ছে এম্বিশান থাকতে হবে – আপনাকে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে আর দেশের জন্য কাজ করতে হলে হাই এম্বিশান থাকতে হবে, এই এম্বিশানই আপনাকে কাজ এবং ভবিষ্যতের পথে চালিত করবে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা মন্ত্রীত্ব দিয়েছেন আর কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়ে থ্যাংকু দিয়ে চুপচাপ শান্ত শিষ্ট হয়ে বসে থাকলাম তা তো হবে না। আমাকে আমার যোগ্যতা প্রমান দিয়ে রাষ্ট্রপতি হতে হবে। আর রাষ্ট্রপতি হতে হলে শুধু দলীয় ও দেশের লিংকআপে হয় না, বরঞ্চ সারা বিশ্বের সাথে পরিচিতি ও যোগােযাগ থাকতে হবে। আরে ভাই, আমি তো ছোটখাট মানুষ, আমার বহি:বিশ্বে কি কোন পরিচিত আছে? কিন্তু যেহেতু মন্ত্রী হয়েছি তাই রাষ্ট্রপতি হবার জন্য একটু চেষ্টা করে দেখি! আর তা না হলে রাজনীতি থেকে বিদায় – আর ভাল লাগে না। ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে আমার ফেসভেল্যুর কিছুটা মিল আছে সেটা লক্ষ্য করেছেন? তাই ভাবলাম তাকে দিয়েই শুরু করি। তিনি সম্প্রতি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বারাক ওবামার সাথে দেখা করতে ও ওবামার নৈশ ভোজের যোগ দিতে গিয়েছেন।

সিটিজেন জার্নালিজম: তার মানে আপনী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কে এক প্রকার (ইভ) টিজিং করে তার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেছেন এবং এই ফ্লোটা যদি ওবামা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয়? তার পরপরই আবার মেক্সিকো চলে যাচ্ছেন! এবং এই বক্তব্যের দ্বারা আপনী নিজেকে একজন এথিজম বিগ সেলিব্রটি হিসেবেও দাড় করিয়ে ফেলেছেন! মোটকথা আপনী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হতে চাইছেন স্যার?

লতিফ সিদ্দিকী: হ্যা, চাই তো! আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আবার যেহেতু বাংলাদেশে এখন জামায়াত-ই-ইসলাম নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে এই জাতীয় একটি ইসলামী প্রবাহ থাকা প্রয়োজন। এদিকে হেফাজত-ই-ইসলামও যেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বা এই প্রবাহে কিছুটা যুক্ত হতে পারে আমি সেটা আশা করি।

সিটিজেন জার্নালিজম: কিন্তু এতে করে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ও ইসলামী সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাবে বলে আপনার আশাংকা হয় না?

লতিফ সিদ্দিকী: দেখুন! জামায়াত-ই-ইসলামের মত অনেক পুরোনো ও গভীর শেকড়ের রাজাকারবাদী একটি রাজনৈতিক দলকে আমরা যখন কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পেরেছি তবে ভবিষ্যতে হেফাজত-ই-ইসলাম এর ব্যাপারে আপনার আশাংকায় আমরা ভীত হবো না মি. জার্নালিস্ট। এভরি থিংকস উইল আন্ডার আওয়ার কন্ট্রোল মাই ডিয়ার। আমরা বিজ্ঞান তথ্য প্রযুক্তিতে গড়া একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরী করে ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়ন করতে চাই।

সিটিজেন জার্নালিজম: মিনিস্টার স্যার, কিন্তু আপনার এতো চেষ্টা ও রিক্স সব কিছু যদি আপনার পরিকল্পনা না হয়। যদি হিতে বিপরীত হয়। আপনাকে যদি প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রীসভা থেকে বের করে দেন! তবে কি হবে, আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম কি হবে?

লতিফ সিদ্দিকী: প্রথমত – এতগুলো 'যদি' আমার প্রয়োজন নেই। অত:পর, সে ক্ষেত্রে আমি রাষ্ট্রপতি পদের যোগ্য নই – এটা প্রমান হয়ে যাবে। আর এজন্যই তো আমি 'রিক্স' টার্মটা ব্যবহার করেছি। আর সেক্ষেত্রে যদি বহি:স্কৃত হয়ে যাই তবে আর রাজনীতি করবো না।

সিটিজেন জার্নালিজম: আপনী প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপারেও কথা বলেছেন যে 'জয় সরকারের কেউ নয়, জয় কে?' ইত্যাদি! এটাও কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে প্রভাব পড়বে না যখন জয় তারই পুত্র?

লতিফ সিদ্দিকী: হ্যা, অবশ্যই পড়বে। জয় তো এখনো রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠছে না। কেউ বলছে না 'জয় কি, বা কে?' কিন্তু এখন দেখুন সবাই বলছে – জয় আমাদের ফিউচার লিডার। এতোদিন সবাই এটা জানতো বলে দাবী করে কিন্তু কেউ কিচ্ছু বলছিলো না। তাছাড়া ভবিষ্যতে জয়ের রাজনীতি কিভাবে তৈরী হবে? তার বলয় কি সে নিজেই তৈরী করে নিবে কিংবা আমাদেরও কিছু করার আছে? এসব কিছুই আমাদের চিন্তায় বা আলোচনায় নেই। এসব বিষয়তো; আমরা দলের সিনিয়র নেতা, আমরা আগে জানবো। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এসব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেন না। আমি চাই অনেক বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে। আমি দায়িত্ব নিতে চাই।

সিটিজেন জার্নালিজম: আপনী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না কি সজীব ওয়াজেদ জয়ের দায়িত্ব নিতে চান মি. মিনিস্টার?

লতিফ সিদ্দিকী: এই যে . . . . আপনারা সাংবাদিকরা কথার ফাঁক পেলেই শুধু প্যাচানো শুরু করেন। আমি কি বলেছি আমি সজীব ওয়াজেদ জয়ের দায়িত্ব নিতে চাই? আমি বলেছি আমি কাজের দায়িত্ব নিতে চাই। এবং রাজনীতিতে আমার এম্বিশান আছে। আমি আমার মেধা ও যোগ্যতা প্রমান করে দেখাতে চাই।

সিটিজেন জার্নালিজম: কিন্তু এভাবে যদি উল্টাপাল্টা ভাবে কথা বলেন যা হাই ক্লাসিক ও গভীর জ্ঞানের স্তরের কথা তবে সাধারন মানুষ তো বুঝবে না। আর আপনাদের রাজনীতির গুরুত্বপুর্ন অংশ হচ্ছে দেশের আপামর অধিকাংশ অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষদের নিয়ে। সাধারন মানুষের সেন্টিমেন্টে আঘাত পড়লে তো তারা আপনার বিরুদ্ধে চলে যাবে।

লতিফ সিদ্দিকী: একটি মাত্র আচরন দিয়ে কেউই একজন মানুষের সামগ্রিক আচরন বিশ্লেষন করে ফেলতে পারে না। তবে সামগ্রিক জনগোষ্টির আচরনের ভবিষ্যত প্রবাহ মাত্রাকে বিশ্লেষন ও প্রেডিকশন করা যেতে পারে। আপনারা সাংবাদিক বা গবেষকরা যেটা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা ও গবেষনা করে করে শিখেছেন ও করতে পারেন, আমরা রাজনীতিবিদরা সেটা খুব দ্রুতই অভিজ্ঞতা এবং অন্তর্জ্ঞানের সাহায্যে আরো নিখুতভাবে করে থাকি – করতে পারি।


সর্বশেষ তথ্য ও সংবাদ অনুযায়ী জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধির দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিউইয়র্ক সফর শেষ করে মি: সিদ্দিকী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পুরষ্কার নিতে মেক্সিকো গিয়েছেন।