শিক্ষার সৎ সন্তান ’প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়’

ফখরুল ইসলাম হিমেল
Published : 19 Jan 2017, 03:36 AM
Updated : 19 Jan 2017, 03:36 AM

আজকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচলিত কিছু ধারণা নিয়ে কথা বলবো। প্রসঙ্গটা আগে অনেক বারই মাথায় এসেছিল, কিন্তু সামনে আনি নাই। কিন্তু বাংলাদেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা পীঠের একজন শিক্ষক যখন বলে 'প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চা', তখন আমার টনক নড়ে। বুঝলাম এ ভাবনার বিষ সমাজকে নীল করে দিয়েছে, তা না হলে, তথাকথিত ওই শিক্ষক পর্যন্ত এ ধারণা কেন পোষণ করবে? অবশ্য আমি একটি উত্তর দিয়েছি, এ রকম ছাগল ছানা চড়াতে টাকার বিনিময়ে আপনার মত রাখাল মাঝে মাঝে এ প্রাইভেট আঙিনায় আসে। যাই হউক, এ প্রচলিত ধারণা খণ্ডাতে আজ কথাগুলো লিখলাম সবার সন্মান সমুন্নত রেখে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি বছর চারেক ধরে। অনেকেই বলবেন না, 'মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ! প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বি স্পেসিফিক'!

আমার প্রায়ই মনে হয়, এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মাপকাঠিটা বরাবরই গলদঘর্ম। এজন্য শিক্ষা দানকারী বিদ্যাপীঠ গুলো ভালো শিক্ষক চিনে নিয়োগ দিতে পারে না (Yardstick is surely inappropriate)। ফলশ্রুতিতে তারাও একটা অসুস্থ ছাত্র সমাজ উপহার দেয় (একটি বাঁশ যেমন, তার কঞ্চি আলাদা হওয়ার কথা নয়)।

আর এ সমাজ তখন অসুস্থ চিন্তাগুলিই সুস্থধারা হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে। কিছু ভ্রান্ত ধারণা তখন সমাজ লালন করে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রচলিত কিছু ধারণা এমনঃ

১। বিশ্ববিদ্যালয়-পাবলিক বনাম প্রাইভেট: আমাদের দেশে শিক্ষিতরাই ভাবে পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা জিনিস। অথচ বহির্বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ই। যেমন: কেম্ব্রিজ, হারভার্ড, স্ট্যনফরড বিশ্ববিদ্যালয় সবই প্রাইভেট। কিন্তু ওখান থেকে ডিগ্রী নিলে সবাই সাবাস বলে!

২। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সম্পর্কিত মূল্যায়নঃ

আপনি আমি ঢাবিতে/রাবিতে সুযোগ পেয়েছি বলে আপনি-ই, আমি-ই বাংলাদেশের সেরা মেধাবি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়ে তাদের সকলেই গাধা-গরু – এই ধরনের সংকীর্ণ চিন্তাভাবনা অন্তত উচ্চ শিক্ষিত কারো কাছে থেকে প্রত্যাশিত নয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেমন আইনস্টাইন হয়ে যায়নি সেরকম সেখানকার সবাই চতুষ্পদ জন্তুবিশেষ – এই ধরনের চিন্তা থেকে বের হয়ে আসাটা বোধকরি খুবই প্রয়োজন।

৩। আমি নিজে জানি কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন এমন শিক্ষক আছে যাদের QUALIFICATION আর কীর্তি দেখলে নিজেকেই এ সমাজের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে। তাছাড়া ওখানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সমন্ধে সবার-ই জানা। তাই বলে তো সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর খারাপ না।

৪। আবার অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগে যে Qualification-এর শিক্ষক আছে, তা একটি পুরো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তাই বলে সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভালও বলা যাবে না।

জনাব ভালমন্দ সব জায়গাই আছে, ঢালাওভাবে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা উচিৎ নয়। আপনি আলু, চিনি,পানি কিংবা ডিম একই পরিমাপক দিয়ে পরিমাপ করতে পারেন না, কারণ পরিমাপকগুলো আলাদা। এইবিশেষ শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট খারাপ বা ভালো, তা ঢালাওভাবে বলা যায় না; যেমনটি বলা যায় না যে ওমুক জেলার মানুষ ভালো কিংবা খারাপ।

সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। এগুলো এড়াতে হবে নিজের অর্জিত শিক্ষা দিয়ে। জীবনের বেড়ে ওঠা বা সামাজিকীকরণেরই এক-একটা অংশ, কিন্তু সব অংশ নিতেও নেই, নিলে নিজের সুস্থ অংশটুকুও বাঁচবে না। সবার সুস্থ চিন্তার উদয় হউক। আর সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মনোমুগ্ধকর এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হোক- এই কামনায় আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। ধন্যবাদ।