র‌্যাগিং বন্ধ করুন

মোঃ ইব্রাহিম হুসাইন
Published : 5 March 2018, 01:46 AM
Updated : 5 March 2018, 01:46 AM

সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন শিক্ষার্থী অনেক সাধ, অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। পরিবারের অতি আপনজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয় বাড়ি ছেড়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ নতুন, অজানা-অচেনা এক পরিবেশে প্রবেশ করেন। তিনি তখন এক অজানা আশঙ্কায় এবং গৃহকাতরতায় ভোগেন। এমন অবস্থায় তার প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের কাছ খেকে স্নেহ-ভালবাসা, মানসিক সমর্থন ও সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেন দেশের শিক্ষিত ও সভ্য সমাজ। এরাই জাতির ভবিষ্যৎ। এদের কাছে নবাগত শিক্ষার্থীরা ভদ্র ও শালীন আচরণ, সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা ও সঠিক দিক-নির্দেশনা আশা করেন। ফেলে-আসা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের অভাব পূরণ করবেন এরাই- তাদের কাছে নবাগতদের এটাই প্রত্যাশা।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কতিপয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে অনিয়ন্ত্রিত নির্যাতন করেন, যাকে র‌্যাগিং বলা হয়। 'চেইন-অব-কমান্ড' কায়েমের জন্য তারা এ ধরনের নির্যাতন করে থাকেন। নবীন শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণ এই র‌্যাগিং এর ভয়ে আতঙ্কিত থাকেন। তারা ভয়শূন্য চিত্তে, মুক্তমনে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিচরণ করতে পারেন না, জ্ঞানচর্চা করতে পারেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে নবাগত শিক্ষার্থীরা কিভাবে লেখাপড়ায় মনোযোগী হবেন- কিভাবে ভালো ফলাফল করবেন?

র‌্যাগিং প্রদানকারী জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, দুই-এক বছর আগে আপনারা যখন র‌্যাগিং এর শিকার হয়েছিলেন, তখন আপনাদের কেমন লেগেছিল? যে আচরণ, যে শাস্তি আপনারা নিজেরা পছন্দ করেননি, সেই আচরণ কিভাবে অন্যকে দেন? কিভাবে র‌্যাগিং দিয়ে মজা পান? কোনো বিবেকবান মানুষ তো অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পেতে পারে না।

আমার বিশ্বাস, আপনারা ভদ্র ও সভ্য মানুষ। আপনারা একটু ভেবে দেখুন, ভিনদেশি এক অপসংস্কৃতি এই 'র‌্যাগিং' এর ফলে কত সম্ভাবনাময় নবাগত শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন ও ভারসম্যহীন হয়ে পরে। র‌্যাগিংয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জীবনের কি কোনো ক্ষতিপূরণ হয় বা হওয়া সম্ভব? সম্ভব নয়। অতএব, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এই র‌্যাগিং বন্ধ করুন। বিকশিত হতে দিন সকল শিক্ষার্থীর সম্ভাবনার ফুল। এগিয়ে নিয়ে যান দেশকে আলোর পথে, উন্নতির চরম শিখরে। বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলুন এক স্বর্গীয় উদ্যানে- এক আনন্দ বিহারে।

মোঃ ইব্রাহিম হুসাইন
শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ
শেখ ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ
মিরপুর-২, ঢাকা-১২১৬