আমরা প্রাইমারি স্কুল থেকে পাশ করা প্রাইমারি সিটিজেন!

ইঁচড়েপাকা
Published : 17 Feb 2012, 07:17 AM
Updated : 17 Feb 2012, 07:17 AM

প্রাইমারী স্কুলের গন্ডী পার করেছি প্রায় ১৫ বছর আগে। বাবা সরকারী চাকুরীজিবী হওয়ায় বা আশেপাশে কিন্ডার গার্টেন স্কুল না থাকায় যেকোন কারণেই পড়তে হয়েছে সরকারী প্রাইমারী স্কুলে। ৫ বছর পড়েছি প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। স্কুলে ৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। এসব শুনতে নিশ্চয়ই বিরক্ত লাগছে। নাহ, আমিও এসব প্যাঁচাল পাড়তে বসিনি। আসল কথায় আসছি। একটু সামনে দেখুন, ভূমিকাটা শেষ করে নেই। তো স্কুলে ছিলেন ৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তাদের মধ্যে মাত্র ২ জন ছিলেন পুরুষ, বাকী ৪ জন-ই মহিলা। আমার জানা মতে, সম্ভবত আমার সাথে আমার সহপাঠী সবাই একমত হবেন যদি তারা কেউ থেকে থাকেন এখানে, শিক্ষক দুজন-ই ছিলেন খুব-ই আন্তরিক পাঠদানের ব্যাপারে। কিন্তু সমস্যা ছিলো শিক্ষিকাদের মধ্যে। একজন শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী এবং তিনি পুরুষ শিক্ষকদের মত ততটা পারদর্শী না হলেও ভালোই ছিলেন। কিন্তু বাকী তিন শিক্ষিকা ছিলেন…..কি বলবো বুঝতে পারছি না। প্রথম দুটো ক্লাস ঠিক-ই নিতেন। কিন্ত টিফিন পিরিয়ডের পর-ই শুরু হতো অন্যরকম পাঠদান। ক্লাসে আসতেন, কিছু একটা লিখতে দিতেন। মাথার খোঁপা খুলে চুলগুলো ছেঁড়ে দিতেন। তারপর ক্লাসের পশ্চাদপদ বা পড়া কম পারা কোন মেয়ে কে ডেকে নিয়ে মাথার উকুন বেছে দিতে বলতেন, মাথা বানিয়ে দিতে বলতেন। আর আমরা বাকীরা লিখেই যেতাম, লিখেই যেতাম…। কখনো কখনো ক্লাস পিরিয়ড শেষ হয়ে যেতো। শেষ হলে পরবর্তী দিনের পড়া দিয়ে চলে যেতেন। আর আমাদের কারো লেখা যদি আগে শেষ হয়ে যেতো, তখন চুপচাপ বসে থাকতাম। একদিন দুদিন না ভাই দিনের পর দিন চলতো এরকম অদ্ভুত পাঠদান। সঙ্গত কারণেই স্কুলের নাম এবং সেই শিক্ষিকাদের নাম বলছি না। যত যাই হোক আমার-ই তো গুরু ছিলেন তারা, একটা বর্ণ হলেও তো শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এরকম পাঠদানে কতটুকু উপকৃত হয়েছি আমরা? কতটুকু শিখতে পেরেছি? এভাবে পড়িয়ে কি-বা শেখানো সম্ভব?

আজ দৈনিক সমকাল এ একটা খবর পড়লাম,"ভৈরবে ৩৯০ শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক!" শিরোনামে। সেখানে বলা হয়েছে, "এক শিক্ষক দিয়ে চলছে ৩৯০ শিক্ষার্থীর বাঘাইয়াকান্দি রেজিস্ট্রার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এ স্কুলে অনুমোদিত শিক্ষকের পদ ৪টি হলেও আছেন দু'জন। তাদের মধ্যে পিটিআই ট্রেনিংয়ে আছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক লাকী বেগম। সহকারী শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ৩৯০ শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করছেন।

এতে করে প্রথম সেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী এবং দ্বিতীয় সেশনে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস নেওয়া একজন শিক্ষিকার পক্ষে মোটেই সম্ভব হচ্ছে না।"
আসলেই কি সম্ভব? একজনের পক্ষে এতোজনকে একসাথে পড়ানো? এভাবে কি বা কতটুকু শিখতে পারছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম?