শেখ হাসিনার নোবেল পুরষ্কার নয়, ধিক্কার পাওয়া উচিত

আইসি হট
Published : 30 June 2011, 03:31 PM
Updated : 30 June 2011, 03:31 PM

কিছু কিছু আওয়ামী তোষামোদকারী এবং পদলেহনকারী বিভিন্ন অযুক্তি-কুযুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যে, মুঃ ইউনুসের পরিবর্তে শেখ হাসিনারই নোবেল পুরষ্কার পাওয়া উচিত ছিল | স্বদেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনা বা শেখ মুজিবের চেয়ে অন্য কোনো বাংলাদেশী বেশি পরিচিতি এবং প্রাধান্য পাবে – তা আসলে এসব তোষামোদকারী এবং পদলেহনকারী শ্রেণীর মানুষরা মেনে নিতে পারছে না |

আওয়ামী তোষামোদকারী এবং পদলেহনকারীদের অন্যতম একজন হলেন মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী | তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, নোবেল পুরষ্কার খুবই পক্ষপাতদুষ্ট এবং এই পক্ষপাতদুষ্ট পুরষ্কারটি পাওয়ার জন্য শেখ হাসিনা খুবই যোগ্য একজন মানুষ | নোবেল পুরষ্কার যে অনেক আগে থেকেই বিতর্কিত হয়ে আসছে তা সবাই জানে | এটি নতুন কিছু নয় | এটি প্রমাণ করার জন্য এত গবেষণা (!) করার দরকার হয় না, এত বস্তা বস্তা ওয়েব-লিঙ্ক ঘাঁটাঘাঁটিরও প্রয়োজন হয় না | তাছাড়া – কেউ যদি নোবেল পুরষ্কারের পক্ষপাতিত্ব প্রমাণ করারই চেষ্টা করবেন, তাহলে সেই পক্ষপাতদুষ্ট পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্য হিসাবে শেখ হাসিনাকে অধিষ্ঠিত করারই বা চেষ্টা করবেন কেন ? ব্যাপারটা হাস্যকর নয় কি ?

মুঃ ইউনুস ভালো কি মন্দ, তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য নাকি যোগ্য নন, তাঁর গ্রামীন ব্যাংক সঠিক না বেঠিক – সেসব আমার বলার বিষয় নয় | আমার বলার বিষয় এই যে, শেখ হাসিনার মতো ভন্ড একজন মানুষের একমাত্র পুরষ্কার হিসাবে যা পাওয়া উচিত তা হছে ধিক্কার !

১) পার্বত্য শান্তি চুক্তি
শান্তি চুক্তির এক যুগ পরেও প্রকৃত শান্তির চেহারা দেখেনি পার্বত্যবাসী | পার্বত্য অঞ্চল এখনো অশান্ত | এখনো সেখানে দাঙ্গায় মানুষ মরছে, ঘর-বাড়ী পুড়ছে | আজও পার্বত্য এলাকার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে, মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, লুণ্ঠিত হচ্ছে নারীর অধিকার ও সম্ভ্রম | জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা নিজেই অভিযোগ তুলেছেন যে, আওয়ামী সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয় বরং এ চুক্তি নিয়ে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন | তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, সরকার নিজেদেরকে চুক্তির স্বপক্ষের দাবি করলেও সরকারের একটি মহল চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দিতে চুক্তি বিরোধী উপজাতি সংগঠন ইউপিডিএফকে লালন করছে | অন্যদিকে ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) এই চুক্তিকে ভাওতাবাজির চুক্তি বলে আখ্যায়িত করেছে | আর পার্বত্য সমধিকার আন্দোলন পার্বত্য চুক্তিকে কালো চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে দিনটিকে কালো দিবস হিসাবে পালন করে যাচ্ছে | চুক্তি পক্ষের জনসংহতি সমিতি ও চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ এর মধ্যে ভাতৃঘাতি দন্দ্ব সংঘাত নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে | এটি তাহলে কিসের চুক্তি, এই চুক্তির ভবিষ্যতই বা কি ? ধিক্কার !

২) জাতীয়তাবাদ
কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, "মহান মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি, নৃ-গোষ্ঠীদের ভূমিকা রয়েছে | … দেশের সকল এলাকার জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের নাগরিক |" তাই যদি সত্যি হয় তাহলে শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ না বলে বাঙালী জাতীয়তাবাদ বলেন কেন ? বলেন একারণে যে, শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব যেমন আদিবাসীদের আলাদা জাতিসত্ত্বা স্বীকার করতেন না, তিনি নিজেও আসলে তা স্বীকার করেন না | তাহলে লোক দেখানো এই শান্তি চুক্তির কারণ কি ? কারণ বিশ্ববাসীর বাহবা কুড়ানো এবং বাড়তি কিছু ভোটের প্রত্যাশা | ধিক্কার !

৩) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
শেখ হাসিনা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন | মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিচারের শপথ নিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছেন | আসলেই কি তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন ? করেন না | করলে তার সরকারেই কিভাবে মন্ত্রী পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীর স্থান হয় ? তিনি কিভাবে একজন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীর সাথে আত্মীয়তা করেন ? ধিক্কার !

৪) ধর্ম নিরপেক্ষতা
শেখ হাসিনা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে চান | বাহাত্তরের সংবিধানের একটি মৌলিকতা হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষতা | রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামকে মেনে নিয়ে এবং সংবিধানে 'বিসমিল্লাহ' সংযুক্ত রেখে তিনি কোন পথে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাচ্ছেন ? জনগণ ভুলে যায়নি যে, শেখ হাসিনা নিজেই একসময় রাষ্ট্রধর্মের বিরোধীতা করেছিলেন | আবার শেখ হাসিনা যে অতীতে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের সাথেও হাত মিলিয়ে ছিলেন তাও জনগণ জানে | শেখ হাসিনার কাছে ধর্মের কোনো গুরুত্ব নেই, ধর্মকে তিনি প্রয়োজনীয় কিংবা অপ্রয়োজনীয় মনে করেন শ্রেফ ক্ষমতার জন্য | ধিক্কার !

৫) স্বদেশ প্রেম
কয়েকদিন আগে তিনি দাবি করেছেন যে, এদেশটাকে কেউ তাঁর চেয়ে বেশি ভালো বাসে না | দেশের প্রতি তাঁর এতই ভালবাসা যে, তিনি তাঁর সন্তানদের দেশের মাটিতে না রেখে বিদেশের নিরাপদ জীবন বেছে নিতে দিয়েছেন | ছেলেকে বিদেশী মেয়ে বিয়ে করিয়েছেন | যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে না পারলেও মেয়েকে দেশে না এনে আরেক দেশে গিয়ে বসবাস করতে দিয়েছেন | হায় রে দেশ প্রেম ! মোল্লারা যেমন ধর্মের দোহাই দিয়ে জীবন যাপন করলেও নিজের সন্তানকে মাদ্রাসায় না পাঠিয়ে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠায়, শেখ হাসিনাও তেমনি মুখে দেশের কথা বললেও সন্তানের ক্ষেত্রে বিদেশকেই শ্রেয় বিবেচনা করেন | ধিক্কার !

এত কিছুর পরও কেউ যদি শেখ হাসিনার পক্ষে সাফাই গায় এবং তাঁকে নোবেল পুরষ্কারের যোগ্য মনে করেন, তাহলে কি সেই সাফাইকারীকেও ধিক্কার জানানো উচিত নয় ?