এটা প্রেম ছিল, ‘রিলেশনশিপ’ নয়

ইমাম মেহেদী
Published : 25 March 2015, 05:42 PM
Updated : 25 March 2015, 05:42 PM

পড়ার আগে ছবিটা একটু ভালো করে দেখে নিন। আমার বন্ধু নির্ঝর প্রায়ই একটা কথা বলে, 'অনেকেরই রিলেশন আছে, কিন্তু প্রেম করে কয়জন?' তাছাড়া 'আমি তাকে ভালোবাসি', 'আমার
প্রেমিকা/প্রেমিক আছে', 'আমি প্রেম করছি' এসব কথাগুলো আজকাল বড়ই বেমানান।

'আমার জিএফ আছে', 'আমার বয়ফ্রেন্ড আছে' 'আমি একটা রিলেশন মেইনটেইন করছি', 'আমি একটা রিলেশনশিপে আছি, 'আমার এফেয়ার আছে' এগুলোই এখনকার স্মার্ট এক্সপ্রেশন।

ছবিতে যে দু'জনকে দেখতে পাচ্ছেন, তারা করেছিল প্রেম, 'এফেয়ার' না। তারপর পরিণয়।

কিছুদিন আগে আমি বাড়ী থেকে চট্টগ্রামে আসতেছিলাম। খুব সকালেই কুমিল্লা থেকে বাসে উঠেছিলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক পর চোখ পড়লো আমার বরাবর পাশের সিটে বসা এই দম্পতির
দিকে। চোখ পড়তেই দেখলাম, স্ত্রীলোকটি তার স্বামীরর কাঁধে মাথা সঁপেছে, আর পরস্পর এমনভাবে হাত ধরে রেখেছিল, যেন এই জীবনে আর কোনদিন হাত ধরার সুযোগ পাবে না। নির্ভাবনায় ঘুমাচ্ছে এই দম্পতি।

ভাইটার নাম মো: আজমল হোসেন, বোনটার নাম আমার জানা হয়নি এবং জিজ্ঞেসও করা হয়নি। আমি অপেক্ষা করছিলাম কখন তারা ঘুম থেকে উঠবে।

যখনই তাদের ঘুম ভাঙ্গলো, তখনই সিট ছেড়ে তাদের পাশে দাঁড়ালাম কথা বলার জন্য। 'ভাই কি চিটাগাং যাচ্ছেন?' এই বলে কথা শুরু করে দিলাম।

আজমল হোসেনের সাথে আমার অনেক কথাই হয়েছিল, তার স্ত্রীও কোন কোন কথায় যোগ দিয়েছিল, আবার কখনো কখনো শুধুই হেসেছিল।

আজমল হোসেন কুমিল্লায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কয়েক মাস টাকা জমিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখানোর জন্য।

প্রেম করে বিয়ে করেছে প্রায় দু'বছর হলো। তার স্ত্রীর গহনা বলতে ঐ ছোট্ট নাকের নোলক, এক জোড়া কাঁচের চুড়ি আর ফেরিওয়ালা থেকে কিনে দেয়া দুএক জোড়া কানের দুল। এতেই সে অনেক তুষ্ট। কতবার যে সে গর্ব করে বলেছিল, 'আমার স্বামী আমায় অন্যের বাড়ীতে কাজ করতে দেয়না', তার হিসেব নেই।

আরো শুনেছিলাম, তার স্ত্রী নাকি পাশের বাসায় টেলিভিশন দেখতে গিয়েছিল, এ কথা কানে আসার পরদিনই ধার করে টাকা নিয়ে স্ত্রীকে টেলিভিশন কিনে দিয়েছিল আজমল হোসেন।

আজমল হোসেনও থেমে নেই, স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই দুইবছরে একটি বারো নাকি তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি। এমন অনেক দিন আছে তার স্ত্রী দুপরে খায়না, স্বামী দূরদূরান্তে কাজের
মধ্যে কি খায় না খায় সেই দুশ্চিন্তায়।

কথা বলতে বলতে বুঝলাম, তারা আবার ঘুমাবে। 'আপনারা যদি আবার ঘুমিয়ে যান, আমি আপনাদের একটি ছবি তুলে নিয়ে যাব'। দম্পতি নীরবতায় সম্মতি জানালো।

আজ হঠাৎ করেই তাদের ছবিটি চোখে পড়লো, মনে মনে ভাবছি, তারা প্রেম করেছিল, নিশ্চয় 'রিলেশনশিপ' নয়।