ছোটবেলার রোজা বড়বেলার অনুভূতি

ইমাম মেহেদী
Published : 19 June 2015, 08:00 PM
Updated : 19 June 2015, 08:00 PM

ছোটবেলার রোজাগুলোর কথা মনে আছে? আপনি সারাদিনে কতবার থুতু ফেলতেন জানিনা, কিন্তু আমার হাজার বারের কম হতো না । লোকসমক্ষে গেলে তো আরো বেশি বেশি থুতু ফেলতাম; পাছে ভাবে আমি রোজা রাখিনি! কষ্ট করে রোজা রাখবো, আর মানুষ ভাববে বেরোজদার!! তা কি হয়!!! মাঝে মাঝে ভুল করে পানি খেয়ে ফেলতাম, মনে মনে কিন্তু খুব খুশিই হতাম। । ভাবতাম; ইস, ভুলে যদি ভাত খেয়ে ফেলতাম!

যখন স্কুলে যেতাম তখন শুধু রোজা নিয়েই কথা বলতাম। সবাই মিলে যাচাই করতাম, কার ঠোঁটগুলো ভেজা আর কার ঠোঁটগুলো শুকনা। কেউ থুতু গিলেছে, এমনটা টের পেলে তার আর রক্ষা নেই। একেকজন একেক রকম ফতুয়া দিতাম। কেউ বলতো রোজা ভেঙ্গে গেছে, কেউ বলতো রোজা ভাঙ্গেনি । আবার কেউ কেউ বলতো, অর্ধেক ভেঙ্গেছে !

আমরা যারা খুব ছোট ছিলাম, তাদের জন্য হোম মেড মাসলা(রুলস) ছিল, যেমন- পানি খেলে রোজা ভাঙ্গে না, এবং যাদের বয়স বার বছরের নিচে তাদের ইফতারের সময় দুপুর ১২ টা, সেহরিতে না খেতে পারলে সকালে খেয়েও রোজা রাখা যায়, দিনে যতবার খাব ততটা রোজা ।। বার বার খেতাম, আর আদায়কৃত রোজার সংখ্যা গুনতাম!! আশা করি এমন মাসায়লা আপনারা অনেকেই প্র্যাকটিস করেছেন।

আমাদের যৌথ পরিবারে একটা ট্রেডিশন ছিল, সেহরির খাবারের তালিকায় দই, চাম্পাকলা আর খেজুরে গুঁড় ছিল অত্যাবশ্যকীয় আইটেম। বিশেষ করে দইটি শুধুই সেহরিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত দইই ছিল আমাদের ছোটদের সেহরিতে ওঠার মূল উদ্দেশ্য। কারো সেহরি মিস তো দইও মিস। কোন কারণে সেহরিতে না জাগালে সকাল বেলায় কি কান্নাকাটিই না করতাম! আবার এমনও হয়েছে, আম্মা ঘুম থেকে উঠিয়ে সেহরি খাইয়েছে, সকালে বেমালুম ভুলে গেছি।তখনও খুব কাঁদতাম।আম্মা বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী হাজির করলে, তবেই কান্না থামতো। আমাদের কেউ একজন যদি সেহরি মিস করতো তখন সেহরিতে ওঠা সমবয়সী ভাই-বোন গুলো বানিয়ে বানিয়ে খাবারের আইটেম বাড়াতো। আইটেম যতো বাড়তো, কান্নাও তত বাড়াতো! আর ইফতার! ছিল এটি সারাদিনের সমস্ত অপেক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। 'শৃঙ্খলার সাথে ইফতার করলে রোজার সমান সোওয়াব পাওয়া যায়', এমন মিথ্যা মাসালা বলে আমাদের কে আধা ঘন্টার জন্য ভদ্র বানানো হতো । কিন্তু আমরাও ঠিক ঠিক বুঝতাম। খাওয়ার সার্থেই একটু ভদ্র হতাম।

ইফতারের সময় 'রোজদার' স্ট্যাটাসধারী আর বেরোজদারদের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য ছিলনা, বরং বেরোজদারদের দাপটে রোজদাররা কোনঠাসা হয়েই থাকত । বেরোজদাররাই বেশি সুবিধা পেত। আজ বড় হয়ে গেছি, এখন আমি কম সুবিধাভোগীদের দলে। মনে হচ্ছে, বড় হয়ে ভুলই করেছি।