মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হরেক রকম গল্প এবং কু-রাজনীতির সংস্কৃতি

এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম
Published : 2 March 2018, 02:35 AM
Updated : 2 March 2018, 02:35 AM

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা গল্প লেখেন, তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা রখেইে বলছি- আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকসেনা এবং রাজাকারদের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যা ও নারী ধর্ষণ নিয়ে যারা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প লেখেন, তাদের লেখাগুলাে পড়লে মনে হয়, দেশে তখন রাজাকার ছিল কেবল দাড়ি-টুপিওয়ালা মৗেলভীরা, যাদের কাজ ছিল পাকিদের সাথে একট্টা হয়ে হিন্দু নারীদের দেহ ভােগ করা, হিন্দুদেরকেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। আমি অনেকেরই লেখা পড়েছি, যা পড়লে সেই সময়ে বাংলাদেশের মৗেলভী ঘরানার লােকদের সর্ম্পকে আতঙ্কজনক ম্যাসেজ পৗেঁছে যাবে সাধারণ যেকোন পাঠকের কাছে।

বিনয়ের সাথে বলছি, ঘটনা যে একেবারে অসত্য সেটা বলছি না। রাজাকার কারা ছিল- তা আমাদেরও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। রাজাকার তারাই ছিল, যাদের সাথে নামাজ-রােজার সর্ম্পক ছিল না, যারা অধিকাংশই ছিল এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বর তথা শন্ডা-পান্ডা টাইপের ক্ষমতালােভী কিছু মানুষ, যারা আজও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের ঘাড়ে বসে রূপ বদল করে বহাল তবিয়তে আছে। এদের অনেকেরই দাড়ি -টুপির সাথে সর্ম্পক খুব একটা ছিল না (ছিটেফােঁটা ব্যতিক্রম ছাড়া)।

অনেক এলাকার পরিসংখ্যান বলছে, খুব বৃদ্ধ এবং অসহায়-দুর্বল মানুষ ছাড়া অনেক হিন্দু পরিবারই শরণার্থী হয়ে যেতে পেরেছিলেন। যারা যেতে পারেনি, তারা অনেকেই মুসলমানদের সাথে একসাথে এখানেই মরেছেন। মুসলমান পরিবারগুলোর বিশ্বাস ছিল, পাকসেনারা হয়তাে মুসলমান পরচিয় পেলে হত্যা করবে না, ধর্ষণ করবে না। কিন্তু তারা কতিপয় বিশেষ ক্ষমতাধর রাজাকার ছাড়া অধকিাংশ মুসলমানকেই ছাড় দেয়নি। এমনকি অনকে রাজাকারকেও তারা অবিশ্বাস করে খুন করেছে। নারী দেহের লােভে তারা রাজাকারদের পরিবারকেও ছাড় দেয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে মৃত মানুষদের তালিকায় এবং ধর্ষণের তালিকায় হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানদের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু কিছু লেখকদের লেখায় এমনভাবে এই কাহিনী তুলে ধরা হয় যেন বাংলাদেশে টুপি-দাড়িওয়ালারা খুবই নিরাপদে ছিলেন।

সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির দাবিদার অনেক গুণীজন লেখকদের লেখায় যখন চরম সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত গন্ধ পাওয়া যায় তখন ভাবতে অবাক লাগে, কেবলই কি সাম্প্রদায়িকতার জ্বালাটা এখনও আপনাদের ভেতরে দাউ দাউ করে জ্বলছে? আপনারা কি মনে করেন, আপনাদের এই একপেশে ভাবধারা বুঝবার মত ক্ষমতা বুঝি এদেশের মানুষের মাঝে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে? এ যুগে ব্যাপক মানুষকে অন্ধকারে রেখে কু-রাজনীতি করার দিন ফুরিয়ে আসছে- কথাটা মনে করিয়ে দিলাম। অধমকে মার্জনা করবেন।