জাবিয়ানরা সাম্প্রদায়িক!

ইমদাদ হক
Published : 19 Nov 2017, 05:43 AM
Updated : 19 Nov 2017, 05:43 AM

বছর তিনেক আগের কথা। আমি তখন সমকালে, নতুন রিপোর্টার। বাংলা একাডেমীতে গিয়েছি কোনো এক সংবাদ সংগ্রহের কাজে। প্রথমে পরিচয়ের আগে কোনো না কোনোভাবে ক্যাম্পাসের প্রসঙ্গটা আনার চেষ্টা করি। কেউ ধুপ করে বলে উঠে,
– কি বলিস! তুই জাহাঙ্গীরনগরের? কত ব্যাচ? কী খাবি বল, চা না কফি?

তখন আর পায় কে। যদি ক্যাম্পাসের কাউকে পেয়ে যাই। কোথাও ঘটে এমন, উনি জাহাঙ্গীরনগরের নয়। কিন্তু তার কলিগ বা তার পরিচিত কেউ আমার ক্যাম্পাসের। উনি পরিচয় করিয়ে দেন। তথ্য সংগ্রহ বা প্রত্যাশিত কাজটি সহজ হয়ে যায়। কারণ, জাহাঙ্গীরনগরের বড় ভাই মানে দিল খোলা ভাই, সাহায্য করবেনই। বাংলা একাডেমির প্রসঙ্গে আসি। ভদ্রলোক সেখানকার পরিচালকদের একজন। আমি জাহাঙ্গীরনগরের শোনা মাত্রই তেঁতে উঠলেন।

– ও, আপনি জাহাঙ্গীরনগরের না! শোনেন, আপনি তো সাংবাদিক। আপনাকে একটা কথা বলি, আপনি কিছু মনে করিয়েন না। কিন্তু কথাটা বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না।
– জ্বি। বলেন।

স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রতিউত্তর। ভদ্রলোক এবার গলা খ্যাঁকারি দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন।

– শোনেন, আপনারা যারা জাহাঙ্গীরনগরে যারা পড়েন, তারা হচ্ছেন পৃথিবীর সবচেয়ে সাম্প্রদায়িক, সবচেয়ে স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক।

আমার বিস্ময় চরমে। উনি দেখলাম কেঁপে কেঁপে উঠছেন। ক্রোধ যেন ঠিকরে বের হচ্ছে।

– কেন ভাইয়া, বলেন তো। কি হয়েছে?
– আপনারা যদি কোনো অফিসের ক্লার্ক পদেও জয়েন করেন, কিছু দিন পর চাটুকারিতা বা যোগ্যতা দিয়ে বা লবিং করে ঠিকই উপরে উঠে যাবেন। এর পরে ওই অফিসের যত নিয়োগ হবে, সব পোস্টে খুঁজবেন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থী। যোগ্য না হলেও নিয়োগ দিবেন, পরে যোগ্য করে নিবেন। এর চেয়ে ধর্মান্ধ আর কে হতে পারে? দুনিয়ার আর কারো যোগ্যতা নাই? অন্যরা কেন চাকরি পাবে না আপনাদের হাত ধরে? কেন সব জায়গায় জাহাঙ্গীরনগরিয়ানরা কোরাম করে, তাদের ছেলেমেয়েদের টেনে নিতে চায়? কেন সবাই অফিসে একজোট হয়ে অন্যদের কোনঠাসা করে।

ভদ্রলোক যে আরো কত কথা বলেছিলেন, মনে করতে পারি না আর। অনেক দিন তো হয়ে গেলো। আরেক দিনের ঘটনা। গিয়েছি জিপিওতে। একই কাজ। ২০১৫ এর প্রথম দিন। এক ভদ্রমহিলার কাছে, উদ্দেশ্য অভিন্ন। তিনি বিনয়ের সাথে জানালেন, সরকারি কর্মকর্তা, তথ্য প্রদানে বিধিনিষেধ রয়েছে। তাঁর অপরাগতার কথাও জানালেন। কি আর করা। বসে বসে গল্প শুরু করলাম, কিছুক্ষণ পর যদি মন গলে! এক পর্যায়ে বলে বসলেন, এই ছেলে তোমার বয়স কত। সাংবাদিকতা কেন কর। পড়ালেখা করে বিসিএস দিতে পার না? ওমা! এ দেখি আরেক বিড়ম্বনা। কোথায় আমি প্রশ্ন করে তথ্য নেবো। উল্টা তিনি আমায় প্রশ্নে জর্জরিত করছেন। জেরাজেরির এক পর্যায়ে জানলেন আমার ক্যাম্পাস পরিচয়। ধমক দিয়ে উঠলেন এবার।

-তুমি আগে বলবা না তুমি জাহাঙ্গীরনগরের?
– আপনি জাহাঙ্গীরনগরের?

আমার বিহ্ববল প্রশ্ন।

– না। তোমার ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগরের।

এর পর তিনি নিজ হাতে আমাকে কফি বানিয়ে দিলেন। ফাইল খুলে দিলেন আমার সামনে, যা লাগবে সেখান থেকে যেন নিয়ে নেই। আইবিএ'র শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম মন্টু ভাইয়ের ওয়াইফ ছিলেন তিনি সম্ভবত।

এত সব যখন মজার ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত, তখন ক্যাম্পাসের নতুন নতুন ভাইয়া বা আপুর সাথে পরিচিতি মানে প্রাপ্তির খাতা আরো সমৃদ্ধ হওয়া। প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা, কর, টেলিকম, উদ্যোক্তা, ব্যাংকিং বা বেসরকারি খাত- যে সেক্টরেই হোক না কেন। নির্বাচন প্রসঙ্গ আসার পর থেকে তাই পুলকিত হই প্রতিদিন, নতুন কারো না কারো সাথে পরিচয় হয় বলে।