আমরা কি সঠিক পথে আছি? উহানকে সম্পূর্ণরূপে সিল করে দেওয়া হয়েছিল। উহানকে অনুসরণ করে রাজস্থানের ভিলওয়ারার জেলাশাসক রাজেন্দ্র ভাট করতে পেরেছে ভিলওয়ারা মডেল। গত ১৯ মার্চ ভিলওয়ারাতে প্রথম একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ৩১ মার্চের পর থেকে আর কেউ সেখানে আক্রান্ত হননি। জেলাশাসক রাজেন্দ্র বলেছেন, "আমি কেবল দয়ামায়াহীনভাবে কঠোর ব্যবস্থা চালু করে সাফল্য পেয়েছি।'
কেমন ছিল সেই কঠোর ব্যবস্থা?
বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারেনি। বাড়ির বাইরে বের হলেই শাস্তি দেয়া হতো । প্রতিটি মানুষের কাছে খাবার, ওষুধ পৌঁছে দেন সরকারি কর্মীরা। সেই সঙ্গে পৌঁছে দেন পশুখাদ্য। যাতে পালিত পশুর কোনও অসুবিধা না হয়। সরকারি গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি চলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সরকারি কর্মীদের সাহায্যে দিনরাত কাজ করে ২৫ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২২ লাখ লোকের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন রাজেন্দ্র। যেখানে কোনও আক্রান্ত পেয়েছে সেখানেই হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত করে লাগাতার পরীক্ষা করেছে। জীবানুনাশক ছিটানো হচ্ছে পুরো জেলা জুড়ে।
আমাদের দেশে ৬৪ জেলায় যদি রাজেন্দ্র'র মতো জেলা প্রশাসক থাকত তবে এতটা খারাপ পরিস্থিতি হতো না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ঘোষণায় দেখা যায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। মানে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যেতে পারবে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হলো পরস্পর হতে পরস্পরকে নির্দিষ্ট দুরত্বে অবস্থান করা। আমরা কি তা করতে পারছি? না, একদম পারছি না। অলিতে-গলিতে এখনো চা-সিগারেট খাওয়া চলছে। একদিনের কাঁচা বাজারের জন্য এখনো মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। ত্রাণ কিংবা সাহায্যের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষ বিভিন্ন যায়গায় জটলা পাকাচ্ছে। এখনো মানুষ ঢাকার বড় বাজারগুলিতে ভিড় করছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে হাজারো মানুষের মারামারি, জানাজায় লাখো মানুষের ঢল, ত্রানের জন্য মিছিল, গার্মেন্টস কর্মীদের বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন। কেউ আবার ফাঁকা রাস্তায় করোনাভাইরাস নেই ভেবে মনের আনন্দে ঘুরতে বেরোচ্ছে। এমন লকডাউন সারা বছর ধরে থাকলেও কোনও লাভ হবে না। পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকবে।
প্রযোজন কঠোর পদক্ষেপ এবং পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন সহযোগিতা। আমাদের দেশে হয়তো উহান মডেল কিংবা ভিলওয়ারা মডেল স্থাপন করা সম্ভব নয় । কিন্তু তারপরও কাছাকাছি কোনও একটা ব্যবস্থা না নিলে অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হয়ে যাবে। এখনো সময় আছে, নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সমন্বয়হীনতা দূর করে সঠিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধ করা সম্ভব। একদিনে ১০ দিনের কেনাকাটা ন্যায্যমূল্যে করার ব্যবস্থা করে দিয়ে শতভাগ লকডাউন করা প্রয়োজন। দশ দিন পর আবার একদিন সুযোগ দেয়া উচিত দূরত্ব বজায় রেখে। পাশাপাশি ত্রাণ বা সহযোগিতা বিচ্ছিন্ন ভাবে দেয়া বন্ধ করে কেন্দ্রীয়ভাবে সেনাবাহিনী ও জনপ্রতিনিধির যৌথ ব্যবস্থাপনায় ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্যবিহীন ঘরকে খুজে বের করার দায়িত্ব জনপ্রতিনিধির। এই নীতি বাস্তবায়ন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। ঘরে থাকলে ত্রাণ বা সাহায্য পাওয়া যাবে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। জেল, জরিমানা এবং লাঠিপেটা করে প্রয়োজনে কঠোরতা দেখাতে হবে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের হট স্পটগুলির চারপাশের ২ কিলোমিটার এলাকায় গণ টেস্ট করতে হবে। স্যাম্পল সংগ্রহ করতে হবে বাসা থেকে। লোকবলের অভাব হলে সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা যেতে পারে। যার করোনাভাইরাস পজিটিভ হবে তাকেই আইসোলেশন এ পাঠাবার ব্যবস্থা করতে হবে। আইসোলেশন এর জন্য দেশের সকল স্কুল ,কলেজ, সাইক্লোন শেল্টার, আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল, লঞ্চ, এমনকি ফাঁকা মাঠে তাবুর ব্যবস্থা করতে হবে।
এখনো সময় আছে ব্যবস্থা নেওয়ার। না হলে দিন দিন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। পরিস্থিতি হবে নিয়ন্ত্রণহীন এবং ভয়াবহ।