মালয়েশিয়ায় এমপ্লয়মেন্ট পাসের জন্য এসডিএন বিএসডি কোম্পানির গ্যারাকল

সৈয়দ আফতাব আহমেদ ব্যারিস্টার এট ল
Published : 22 Feb 2015, 09:23 AM
Updated : 22 Feb 2015, 09:23 AM

মালয়েশিয়ায় যে সকল বাংলাদেশী ব্যবসায়ী কোম্পানি গঠন করেছেন, তারা কত টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল পরিশোধ করেছেন? আইন অনুযায়ী লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার থাকলে ৩ লক্ষ রিঙ্গিত পেইড আপ ক্যাপিটাল দিয়ে কোম্পানি করা যায় আর এমপ্লয়মেন্ট পাস নিতে হলে নূন্যতম ৫ লক্ষ রিঙ্গিত পেইড আপ ক্যাপিটাল দিতে হয়। কিন্তু এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট সহ সকল ধরনের ট্রেডিং বা সেলস রিলেটেড বিজিনেস এর ক্ষেত্রে নূন্যতম ১মিলিয়ন রিঙ্গিত পেইড আপ ক্যাপিটাল পরিশোধ করতে হবে। পাঠক হয়ত বলবেন, আপনারা অনেক বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের চেনেন যারা এত টাকা পেইড আপ ক্যাপিটাল না দিয়ে কোম্পানি করেছেন, তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব? অনেক এজেন্ট আছে, যারা এই বিপুল অঙ্কের পেইড আপ ক্যাপিটাল পরিশোধ করা ছাড়াই কোম্পানি গঠনের ব্যাপারে পরামর্শ ও প্রতিশ্রুতি দেন এবং সফলও হন, সেটাই বা কিভাবে সম্ভব? অসাধু বাংলাদেশী এজন্টদের জন্য এটা খুব সহজ! কোম্পনির ব্যাংক একাউন্টে কোন "রিয়াল ক্যাশ" না রেখে কেবলমাত্র কাগজপত্রের মাধ্যমে শেয়ার এলটম্যান্ট দেখিয়ে তারা এই বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তাদেরতো আর জানার প্রয়োজন নেই যে মালয়েশিয়ান কোম্পানি আইন ১৯৬৫ এর ৪৮ ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে নূনতম সাবস্ক্রিপশন না হওয়া পর্যন্ত কোন শেয়ার এলটম্যান্ট আইনসম্মত নয়। বছরশেষে আপনি যখন এনুয়াল রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় ভূক্তভোগী হবেন ততক্ষনে দুধের মাছিরা আপনাকে আর চিনবেনা। কোম্পানিও করে দিবে, এমপ্লয়মেন্ট পাসও পাবেন, কিন্তু এই আইনগত জটিলতা থেকে মুক্তি মিলবে কি? ভিসা রিনিউয়াল হবেতো?

এসডিএন বিএসডি কোম্পানির লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার না থাকলে সকল ফরেইন ডাইরেক্টরের এমপ্লইয়মেন্ট পাস ছাড়া কোম্পানির নামে ব্যাঙ্ক আকাউন্ট ওপেন করা যায় না। অথচ কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট না থাকলে কোম্পানিকে ডব্লিউ আর টি লাইসেন্স পাওয়া যায় না, আবার ডব্লিউ আর টি লাইসেন্স না থাকলে ওই কোম্পানিতে এমপ্লইয়মেন্ট পাসের আবেদন করা যায় না। তার মানে আপনার সামনে প্রশ্ন হল ডিম আগে নাকি মুরগি আগে? ঠিক একইভাবে আপনি কোম্পানির নামে ব্যাঙ্ক আকাউন্ট ওপেন না করতে পারলে পেইড আপ ক্যাপিটাল জমা করবেন কোথায়? আবার পেইড আপ ক্যাপিটাল জমা না করলে তো কোম্পনিই করতে পারবেন না, এমপ্লয়মেন্ট পাস নিবেন কিসের এগেইনস্টে? তার মানে লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার নিতে আপনি বাধ্য।

এসডিএন বিএসডি কোম্পানির লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার না থাকলে ডব্লিউ আর টি (হোলসেল এন্ড রিটেইল ট্রেড) লাইসেন্স প্রয়োজন হবে যা শুধুমাত্র প্রদান করা হবে মালয়েশয়ানরা করতে পারেনা এমন ধরনের ইউনিক বিজনেস এর ক্ষেত্রে।  ডব্লিউ আর টি লাইসেন্স ছাড়া এমপ্লয়মেন্ট পাসেরি আবেদন করা যাবে না। আর এটা প্রমান করাও যেহেতু কষ্টসাধ্য বা আরও খোলাখুলি বললে এককথায় অসম্ভব, কাজেই লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার আপনার লাগবেই।

এখন প্রশ্ন হল লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার থাকলে ক্ষতি কি? ক্ষতি আছে, অদূর ভবিষ্যতে কোনো এক সময়, আপনার এ বিনিয়োগ ঝুঁকির সম্মুখীন হতে বাধ্য।  বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যেসকল এসডিএন বিএসডি কোম্পানি করে দেয়া হচ্ছে তার প্রায় সকল ক্ষেত্রে একজন লোকাল/মালয়েশিয়ান ব্যাক্তি বা কোম্পানি সেক্রেটারিকে ৫১% শেয়ার দিয়ে ডাইরেক্টর বা পার্টনার করে নেয়া হচ্ছে যেন ১০০% ফরেইন মালিকানা থাকার কারণে উপরে বর্ণিত সমস্যা এড়ানো যায়। অথচ সকল খরচ বহন করতে হচ্ছে ফরেইন শেয়ারহোল্ডারকে। যেহেতু ব্যবসয়ায় এই লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনারের কোন বিনিয়োগ নেই, কোম্পানির লাভ লোকসানে যেহেতু তাদের কিছু যায় আসে না তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বাড়তি অর্থের বিনিময় ব্যতীত কোম্পানির রেজুলেশন, আর্থিক প্রতিবেদন, মিটিং মিনিটস সহ অন্যান্য জরুরী কাগজপত্র সই করতে রাজি হন না। অথচ কোম্পানির সকল নথি এবং রেজুলেশনে সকল পরিচালকের সই থাকতে হয়।  বিষয়টি আরও বেশি গুরুতর হয়ে ওঠে, যদি লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার চেক এ সই করার এর ক্ষেত্রেও বাড়তি মুনাফা নিতে চায়। এমনকি যদি ভাবেন যে ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন, তাও যে পেইড আপ ক্যাপিটাল কোম্পানির ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ রেখেছেন সেটা তুলতেও ওই লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার এর সই লাগবে যেহেতু সেও কোম্পানির ডাইরেক্টর, অথচ এ টাকাটা পুরোটাই আপনার টাকা। মোটকথা এ হচ্ছে, নিজের টাকায় বৈধ পথে ব্যবসা করেও প্রতিনিয়ত অন্যের অনায্য দাবী মেনে নেওয়া।

ধরে নিলাম আপনি একটি এসডিএন বিএসডি কোম্পানির এমপ্লয়মেন্ট পাস নিয়ে মালয়েশিয়াতে যেতে চাইছেন। কোম্পনিটি আপনার নিজের না বলে আপনি এক কিছু ভাবতে রাজী নন। কিন্তু কোম্পানির মালিকতো উপরের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হবেন আর তাই তার বাড়তি অর্থের প্রয়োজন। আপনি তার কোম্পানির ভিসা নিয়ে ঐ দেশে থাকবেন, কোম্পানিকে বাচিঁয়ে রাখার সমস্ত পেইন তিনি একা নিবেন? না, তিনি স্বাভাবিক ভবেই চাইবান আপনিও এই বাড়তি অর্থ শেয়ার করেন।

তাই মালয়েশিয়াতে ব্যবসা বা চাকুরীর জন্য যেতে চাইলে সবচেয়ে ভাল বিকল্প হল লাবুয়ান থেকে পরিচালিত আন্তর্জাতিক কোম্পানি যেখানে কোন পেইড আপ ক্যাপিটাল লাগেনা, লোকাল/মালয়েশিয়ান পার্টনার লাগেনা, ডব্লিউ আর টি লাইসেন্স লাগেনা।

এসকল বিষয় না জানা থাকার কারনে আমাদের দেশের সাধারণ মানু্ষ নানান ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।  এছাড়াও, কানাডায় বা মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন সঙ্ক্রান্ত যে কোন তথ্য  Immigration & Inspiration এর অফিস থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে। ঠিকানাঃ বাসা ২২, রোড ৩৪, সেক্টর ৭, উত্তরা, ঢাকা।

ফোনঃ 01675523976, 01941879218

ইমেইলঃ imm.insp@gmail.com

লেখকঃ সৈয়দ আফতাব আহমেদ, Barrister-at-Law

Immigration Law Practitioner's Association (ILPA) এবং Association of Regulated Immigration Adviseers (ARIA) এর ফেলো মেম্বার এবং Immigration & Inspiration এর কর্ণধার