মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আর অবৈধভাবে চাকরি নয়

সৈয়দ আফতাব আহমেদ ব্যারিস্টার এট ল
Published : 4 April 2015, 07:23 AM
Updated : 4 April 2015, 07:23 AM

প্রচলিত প্রতারনাঃ

মালয়েশিয়ার সরকারের ওয়েবসাইট http://educationmalaysia.gov.my/index.php/get-started/frequently-asked-questions.html/ এর ১৩ নম্বর প্যারায় স্পষ্ট বলা আছে, পাবলিক অথবা প্রাইভেট উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্য্যনরত সকল আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী সেমিস্টার ব্রেক অথবা ৭ দিনের বেশী ছুটি থাকলে শুধুমাত্র তখনই পার্টটাইম কাজ করতে পারবে সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা, বছরের অন্য কোন সময় নয়। আর কাজের স্থানও নির্ধারিত করা হয়েছে শুধুমাত্র রেস্টুরেন্ট, পেট্রল কিওস্ক, মিনি মার্কেট এবং আবাসিক হোটেল। তবে এই সীমিত সুযোগও কেবলমাত্র ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট এর পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে, যা পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।

তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ করে একজন ছাত্র যখন মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছায় তখন জানতে পারে যে সে কেবল এক সেমিস্টারের খরচ দিয়ে এখানে এসেছে। পরবর্তী চার থেকে ছয় মাস পরেই তাকে আবার বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে, নতুবা কলেজ বা ইউনিভার্সিটি তার এনরোলমেন্ট বাতিল করবে আর সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই সে যে একবছরের ভিসা নিয়ে এসেছে তা আর নবায়ন হবে না।  এই ছাত্র তখন যেকোন ভাবে একটা কাজের সন্ধানে নামে। এমপ্লয়ারও সেই সুযোগে তাকে প্রাপ্য বেতনের কম দেন। আর বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে শেষ পর্যন্ত তার থাকা খাওয়ার খরচই কেবল উঠে আসে, পড়াশুনার খরচ যোগানো সম্ভব হয় না। তাই হয় তাকে দেশ থেকে অর্থ আনতে হয়, নয়ত পড়াশুনা বাদ দিতে হয়। আর পড়াশুনা বাদ দেয়া মানে ভিসা নবায়ন না হওয়া। বছরশেষে সে দারস্থ হয় নাম ও ভবন সর্বস্ব কলেজের যারা এ ধরনের ছাত্রদের টাকার বিনিময়ে ভিসা নবায়ন করে দেয়, এদেরকে বলা হয় 'ভিসা কলেজ'। আর অবৈধভাকে কাজ করার কারনে পুলিশি হয়রানিও নিয়মিতই ঘটে। ইমেগ্রেশন পুলিশ নিয়মিত বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, পেট্রল কিওস্ক, মিনি মার্কেট এবং আবাসিক হোটেল রেইড করে এবং ছাত্রদের জেল জরিমানা করে।

অথচ পড়াশোনার পাশাপাশি পুরোদমে চাকরির সুযোগ- এই হাতছানিতেই শত শত শিক্ষার্থী পাড়ি জমাচ্ছেন মালয়েশিয়ায় কিন্তু, সুযোগের নামে এটি একটি বড় ধরনের প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। নানা জবরজং প্রচারণার মাধ্যমে ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে বেশ কিছু দালাল চক্র এ ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করছেন তাদের। এখানে সব ক্ষেত্রেই স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। আবার স্টুডেন্ট ভিসা'র নাম করে যাদের মালয়েশিয়া পাঠানো হচ্ছে, তাদের অনেকেই শ্রমিক বা চাকরিপ্রার্থী। এতে ছাত্ররা যেমন ঠকছেন, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাকরি প্রার্থীরাও। দফায় দফায় ঠকে ক্রমশ ক্রীতদাসের জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন এ সব আগন্তুক। মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশি এ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে নানা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখানে আসার পরে বুঝেছেন, সংশ্লিষ্ট এজেন্সির প্রতারণা।

অর্থাৎ, এ দেশে ছাত্রদের বৈধভাবে কাজের কোনো ধরনের সুবিধাই নেই। অথচ, এজেন্টরা শিক্ষার্থী আনার সময় বলে, সপ্তাহে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা কাজ করেই মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করা যায়। এটি মিথ্য প্রলোভন ছাড়া আর কিছুই নয়।

পরিত্রাণের উপায়ঃ

ভিন্ন একটা পন্থায় পড়াশুনার পাশাপাশি বৈধভাবে উপার্জন সম্ভব। মাসিক বেতন হবে ১০০০ রিঙ্গিত। সেই অর্থ দিয়ে থাকা খাওয়া চলবে। পড়াশুনার খরচ হিসেবে ৩৩৫,০০০ টাকা দেশ থেকেই দিয়ে আসতে হবে। এখানে আসার পর পরবর্তী কোন সেমিস্টারের ফি বা ভিসা রিনিউয়াল ফি দিতে হবে না। দুই বছুরের থাকার ব্যবস্থা করা হবে বিনা খরচায়। সপ্তাহে দুইদিন ক্লাশ ও পাঁচ দিন কাজ করতে হবে।

এই কোর্সটি হসপিটালিটি এন্ড টুরিজম এর উপর একটি Sijil Kemahiran Malaysia (মালয়শিয়ান স্কিল সার্টিফিকেট) কোর্স। এটি মূলত Jabatan Pembangunan Kemahiran (Department of Skills Development – http://www.dsd.gov.my/index.php/en/) এর একটি সার্টিফিকেট কোর্স যা দুই বছরে একজন ছাত্রকে প্রদান করে F&B Service Operation – SKM Level II & III সম্পন্ন করার সার্র্টিফিকেট। এর ফলে সে দুই বছর শেষে এমপ্লয়মেন্ট পাস নিয়ে নিশ্চিন্তে যে কোন ফাইভ স্টার আবাসিক হোটেলে খুবই ভাল বেতনে ফুল টাইম কাজ করতে পারবে।

আর হস্পিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম বাদে অন্য দিকে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে যেসকল ছাত্র ছাত্রীর পক্ষে দেশ থেকে খরচ এনে লেখাপড়া করা সম্ভব কেবলমাত্র তাদেরই উচিত মালয়েশিয়ায় ভাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা। কাজ করে অর্থ উপার্জন করে পড়াশুনার খরচ বহন করা যেহেতু অসম্ভব, সে আশা বৃথা।

এসকল বিষয় না জানা থাকার কারনে আমাদের দেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রী নানান ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।  এছাড়াও, কানাডা, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আমেরিকা বা মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন সঙ্ক্রান্ত যে কোন তথ্য  Immigration & Inspiration এর অফিস থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে।

ঠিকানাঃ

বাসা ২২, রোড ৩৪, সেক্টর ৭, উত্তরা, ঢাকা, ফোনঃ 01675523976, 01941879218

প্লাটিনাম লেক কন্ডমিনিয়াম, পিভি ২০, নং ৫, জালান উসাহাওয়ান ২, অফ জালান গেন্টিং ক্লান, স্তাপাক, ৫৩২০০০, কুয়ালা লামপুর, মালয়েশিয়া, ফোনঃ +601135562301

৮২, ক্লোভের রোড, ফরেস্ট গেইট, লন্ডন ই৭ ৯এএফ

লেখকঃ সৈয়দ আফতাব আহমেদ, Barrister-at-Law

Immigration Law Practitioner's Association (ILPA) এবং Association of Regulated Immigration Adviseers (ARIA) এর ফেলো মেম্বার এবং Immigration & Inspiration এর কর্ণধার।