চলমান জীবনচিত্র প্রতিযোগ যাপনের উদাহরণস্বরূপ সর্বত্র বিরাজমান। একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পূর্বেই প্রতিযোগিতার খাতায় তার নাম লেখানো হয়। সে ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, এই নিয়ে কতই না চিন্তা হবু মা-বাবার, আত্মীয়-স্বজনদের। যদিওবা, 'ছেলেই হতে হবে' – এই প্রাচীন ধারণা থেকে অনেকাংশেই মানুষ বেরিয়ে এসেছে। এখন প্রতিযোগিতার পরিধি আরো বিস্তৃত। ছেলে হলে ইঞ্জিনিয়ার আর মেয়ে হলে ডাক্তার, এমন অনেক চর্চাই বিরাজমান।
শিশু যখন বেড়ে ওঠে তখন শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। 'আমার ছেলেকে সবচেয়ে ভালো স্কুলে ভর্তি করবো'। আর শিশুটি কিছু বোঝার আগেই প্রতিযোগিতায় নেমে যায়। ভারি ব্যাগ কাধে নিয়ে, ঘুম চোখে প্রতিদিন সকালে সে নেমে পড়ে পৃথিবীকে টেক্কা দিতে। বাবা-মায়েরও ঘুম হারাম এই শিশুটিকে নিয়ে। তাকে যে ফার্স্ট হতেই হবে। তাই স্কুলের পর কোচিং, বাড়ি ফিরে প্রাইভেট টিউটর, পরদিন সকালে আবার সেই স্কুল। এ যেনো অসহায়, নিরুপায় একজন গোবেচারার হাতে বন্দুক ধরিয়ে দেয়া। তদুপরি শিশুটি বাবা-মা'র আদর অপেক্ষা প্রহার বেশি পেয়ে থাকে ঠিকমতো পড়া করতে পারেনি বলে।
যখন সে আরো একটু বেড়ে ওঠে, তার বন্ধুমহল তৈরি হয়। সেখানেও বাধ সাধেন প্রতিযোগ বিধাতা। 'ওদের সাথে মিশবে না, এদের সাথে মিশবে।' স্কুল পেরিয়ে কলেজ এলো, শুরু হলো যুদ্ধের প্রস্তুতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ পূর্ব প্রস্তুতি। বুয়েট, মেডিকেল, আইবিএ, আরো কতো কি! কাঠখড় পুড়িয়ে পড়ার পালা যখন শেষ হয় তখন শুরু হয় কর্মসংস্থান অন্বেষণ, ভালো একটা চাকরি করতে হবে। সরকারি চাকরি, বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, ইত্যাদি। আমলাদের হাতে পায়ে ধরে একটা চাকরি।
এরপর সহকর্মীর সাথে প্রতিযোগিতা, উদ্দেশ্য পদন্নতি। এখানেই থেমে নেই সব। ঘর গৃহস্থলীতেও রয়েছে এর যোগসাজশ। প্রতিবেশী, বান্ধবী, সমকক্ষ কিংবা যেকেউ হয় এর প্রেরণা। তারপর! তারপর চক্রাকারে চলতে থাকে প্রতিযোগ যাপনের এই খেলা, শেষ আর হয়না। নিজের মতো করে বাঁচতে যেন ভুলএ গেছি আজ সবাই। নিজেদের হারিয়ে ফেলেছি প্রতিযোগিতার ছকে।