আন্দোলনের দাবির যৌক্তিকতা বনাম অস্ত্রধারী ছাত্র

সীনা আক্তার
Published : 30 April 2011, 06:00 PM
Updated : 4 Feb 2014, 12:32 PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) যা ঘটেছে তা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কি নতুন কিছু! রাবি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফিসহ অন্যান্য ফি বৃদ্ধি করেছেন এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু করতে যাচ্ছেন। এর বিরুদ্ধে নিয়মিত কোর্সের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, কিছু ছাত্রের সহিংসতা এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। গত কয়েক দশক থেকে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলোতে কোনো না কোনো কারণে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে।

এর কারণ বহুবিধ– অযোগ্যতা, অদক্ষতা (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষক নিয়োগ পান প্রতিযোগিতাহীন পদ্ধতিতে), দুর্নীতি, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলাদলি ইত্যাদি। এ লেখায় শুধু সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার উপর আলোকপাত করছি।

আন্দোলনের মূল দাবি এবং এর যথার্থতা

আন্দোলনের কেন্দ্রে আছে দুটো বিষয়– বর্ধিত ফি এবং সান্ধ্যকালীন কোর্স। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, বিভিন্ন ফি দ্বিগুণ, তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের, অথচ তাদের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আমাদের বক্তব্য হল, একবারে দ্বিগুণ-তিনগুণ ফি বাড়ানো হলে তা যে শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হবে এবং এটা তারা সহজে মেনে নেবে না, এই সহজ বিষয়টি রাবি কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেননি! এই অদূরদর্শিতা লজ্জার। যে কোনো ফি প্রতি বছর বা দু'বছর পর পর অল্প করে বৃদ্ধি করলে এবং অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক বা কম ফি নীতি চালু করলে এটা হয়তো আন্দোলনের বিষয় হত না।

পাশাপাশি আমরা বলতে চাই, সান্ধ্যকালীন কোর্সের ব্যাপারে উপাচার্য যেখানে বলেছেন যে, 'নিয়মিত কোর্সকে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা নিয়েই বিভাগগুলোতে এই কোর্স চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে'– সেখানে এই কোর্সের ব্যাপারে নিয়মিত কোর্সের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যুক্তিযুক্ত কারণ দেখি না। এই কোর্স চালু করলে বর্তমান শিক্ষার্থীদের অসুবিধা কী, গত দুদিন আন্দোলনকারীদের কথায় এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। আন্দোলনকারীরা এর মধ্যে শুধু শিক্ষাবাণিজ্য দেখছেন!

একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সমাজের– একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্বও সংশ্লিষ্ট সকলের।

ড. সীনা আক্তার: লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গ্রাজুয়েট।