রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে কি

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 27 August 2011, 04:56 AM
Updated : 28 Jan 2016, 05:35 AM

সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনা থেকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক-বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না তা নিয়ে। বড় কোনো আন্দোলন-সংগ্রামের লক্ষণ আপাতত না থাকলেও পরিবর্তনের প্রসঙ্গটি সামনে আসছে। তবে কী ধরনের 'পরিবর্তন' হতে পারে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।

সবচেয়ে বেশি যে সম্ভাবনার কথা কারও কারও মাথায় ঘুরছে সেটা হচ্ছে একটি 'অংশগ্রহণমূলক' নির্বাচন। যদিও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বারবার এটা বলা হয়েছে যে, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও কেউ কেউ এমন আশা করছেন যে, বর্তমান সংসদ নিয়ে যে বিতর্ক দেশে-বিদেশে রয়েছে তা যেহেতু সরকার এবং সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে পুরো স্বস্তি দিচ্ছে না, সেহেতু একটি সুবিধাজনক সময়ে আগাম নির্বাচন দিয়ে বিতর্কমুক্ত হওয়ার সুযোগ সরকার নিলেও নিতে পারে।

তাছাড়া বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের সাম্প্রতিক হাবভাবে এটা মনে হচ্ছে যে, সরকার যদি আগাম নির্বাচন দেয় তাহলে সে নির্বাচনে তারা খুশি মনেই অংশগ্রহণ করবে। দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে। এই ধারাবাহিকতায় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি সে নির্বাচন থেকেও দূরে থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাটা সামনে আসছে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তৃতা কেন্দ্র করেও। গত ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরে গিয়ে সেখানে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তৃতায় সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, 'আপনারা নৌকা মার্কাকে আগামীতে ভুলবেন না। নৌকাই শান্তি দেবে, নৌকাই উন্নতি দেবে, নৌকাই এদেশের মানুষের মুক্তি এনে দেবে।''

তিনি আরও বলেছেন, ''আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে, তারা আসে লুটপাট করতে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করে। তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। আপনারা আমাদের উপর ভরসা রাখবেন।''

কোনো নির্বাচনের কথা উল্লেখ না করেই প্রধানমন্ত্রী নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। হতে পারে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মাথায় রেখেই মানুষের কাছে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। আবার এমনও হতে পারে, আগাম সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই তিনি ভোট প্রার্থনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর মনে কী আছে সেটা কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি অনুকূল মনে করলে তিনি সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আনতেও পারেন। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ খুবই ভালো ফলাফল করেছে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও যদি নৌকার একই রকম সাফল্য অব্যাহত থাকে, তাহলে আগাম নির্বাচন দিতে তিনি দ্বিধা না-ও করতে পারেন।

সরকারের সামনে এখন দৃশ্যত বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বিএনপি শান্ত। জামায়াত ছন্নছাড়া। অন্য কোনো উৎপাতও তেমন নেই। এই অবস্থায় সংসদ নির্বাচন করে জনপ্রিয়তা যাচাই করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে না হলে আগামী বছরের শুরুতে অথবা সুবিধাজনক অন্য কোনো সময়ে সংসদ নির্বাচন দেওয়ার চিন্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করতেই পারেন।

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা সামনে আসার আরেকটি কারণ হল, হঠাৎ করে এরশাদের জাতীয় পার্টির 'প্রকৃত বিরোধী দল' হওয়ার চেষ্টায় মাঠে নেমে পড়া। এরশাদ তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে আকস্মিকভাবে দলের কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করে জাতীয় পার্টির ভিতরে বড় ধরনের ঝড় তুলেছেন।

সবারই এটা জানা যে, জাতীয় পার্টিতে আগে থেকেই এরশাদ এবং রওশন এরশাদকে ঘিরে দুটি বলয় তৈরি হয়ে আছে। দুটি বলয়ের একটি 'সরকারপন্থী' এবং আরেকটি 'সরকারবিরোধী' বলে পরিচিত। রওশনের নেতৃত্বাধীন অংশ সরকার-সমর্থক এবং এরশাদের অংশকে সরকারবিরোধী বলে মনে করা হয়। তবে এরশাদের রাজনৈতিক অবস্থান ও স্থিতি নিয়ে সব সময় এক ধরনের সংশয় থাকে। তিনি কখন কী করেন, কী বলেন তার স্থিরতা নেই। এই এদিক তো সেই ওদিক।

কিন্তু তার ছোট ভাই জিএম কাদের অনেকটাই কনসিসটেন্ট। তাই দলীয় গঠনতন্ত্রে না থাকলেও কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করায় এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, দলের সরকারবিরোধী অংশকেই চাঙা করতে চান এরশাদ। ভেতরে-বাইরের নানামুখী চাপে এরশাদ ঘন ঘন অবস্থান বদল করলেও জিএম কাদের তা করবেন না, এতে জাতীয় পার্টি এখন যে ইমেজ সংকটে রয়েছে তা কিছুটা কাটানো সম্ভব হতে পারে মনে করেই হয়তো এরশাদ দলে তার জন্য নতুন জায়গা তৈরি করেছেন।

তবে কাজটি করতে গিয়ে তিনি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। রওশনের নেতৃত্বাধীন অংশ এরশাদের পদক্ষেপের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে। এ ক্ষেত্রে সামনে থেকে ভূমিকা পালন করায় মহাসচিবের দায়িত্ব হারিয়েছেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। বাবলুর আচরণে ক্ষিপ্ত এরশাদ তাকে সরিয়ে দিয়ে দলের সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে পুনরায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে বসিয়েছেন।

এসব নিয়ে জাতীয় পার্টিতে সংকট দেখা দিয়েছে। দলের মধ্যেকার সরকারপন্থী অংশ চাইছেন না জিএম কাদেরের অবস্থান শক্তিশালী ও সংহত হওয়ার সুযোগ দিতে। অন্যদিকে, বড় ভাই এরশাদের সমর্থনে জিএম কাদের দলকে সরকার থেকে বের করে আনতে চাইছেন।

জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে যেমন আছে, তেমনি আছে সরকারেও। এ জন্য তাদের গায়ে 'গৃহপালিত' বিরোধী দলের তকমা লেগেছে। মন্ত্রিসভায় দলের ৩ জন সদস্য থাকায় এবং এরশাদ নিজেও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ায় জাতীয় পার্টিকে সবাই সরকারের অংশ হিসেবেই মনে করে। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা আছে। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলেই দলের জন্য বেশি ভালো হত বলে তাদের ধারণা।

পৌরসভা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ফলাফল খুবই খারাপ হয়েছে। এ জন্যও হয়তো এরশাদ সরকার থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ অনুভব করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এরশাদ এখন সরকারবিরোধী অবস্থান নিলেও সেটা জাতীয় পার্টির জন্য খুব ভালো কিছু হবে না। তাদেরকে আওয়ামী লীগের 'বি টিম' বলেই মনে করা হবে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া কেন্দ্র করে এরশাদ যদি একেক সময় একেক রকম অবস্থান না নিয়ে দৃঢ়ভাবে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে নির্বাচনে অংশ নিতেন তাহলে জাতীয় পার্টির জন্য সেটা হত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে মঙ্গলজনক। জাতীয় পার্টি যদি সংসদে ৬০/৭০টি আসন নিয়েও বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করত তাহলে ভবিষ্যতে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হত।

এরশাদ এদিক ওদিক ডিগবাজি খেয়ে এখন এমন অবস্থা তৈরি করেছেন যাতে কোনো পক্ষের কাছেই তার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তিনি এখন বিরোধী দল হতে চাইলেও সেটা যেমন সহজ হবে না, তেমনি সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পথটাও খুব নিষ্কন্টক নয়। এরশাদের 'নাটক' সরকার খুব পছন্দ করছে কি? সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টির এখন দুকূল ভাঙা অবস্থা।

তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এরশাদ রাজনীতির একজন ঘাগু প্লেয়ার। তিনি কোনো 'গন্ধ' না পেয়ে কোনো ধরনের 'পাগলামি' করেন না বলে অনেকেই মনে করেন। এখন তিনি যে জাতীয় পার্টিকে প্রকৃত বিরোধী দল বানাতে চাইছেন সেটাও হয়তো অকারণ নয়। তিনি হয়তো কোথাও থেকে সুতার টান পেয়েছেন অথবা তার নাকে কোনো গন্ধ এসেছে। সে জন্যই দলকে নিয়ে তার এই নতুন নড়াচড়া। কেউ কেউ মনে করছেন, আগাম নির্বাচনের গন্ধ পেয়েই হয়তো এরশাদ এসব করছেন।

নির্বাচন আগে হবে না মেয়াদ শেষে হবে সেটা এখনই স্পষ্ট করে বলার অবস্থা তৈরি হয়নি। আকস্মিক কোনো ঘটনা রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে কি না তাও আগাম বলা যায় না। তবে প্রধান বিচারপতির একটি মন্তব্য সম্প্রতি রাজনীতি ও আইন অঙ্গনে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি করেছে।

বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে একটি বাণী দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বাণীতে তিনি বলেন, কোনো কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে গণ্য হন বিধায় তাঁর গৃহীত শপথও বহাল থাকে না।

প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য বিএনপি-সমর্থক আইনজীবী এবং বিএনপির নেতৃবৃন্দ লুফে নিয়ে বর্তমান সরকার ও সংসদকে 'অবৈধ' আখ্যা দেওয়ার মওকা পেয়েছেন। আন্দোলনে ব্যর্থ কোনঠাসা বিএনপিকে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য চাঙা করে তুলেছে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের পরিপন্থি বলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যে রায় দিয়েছিলেন, তাতে তিনি স্বাক্ষর করেন অবসরে যাওয়ার ১৬ মাস পর। প্রধান বিচারপতি যেহেতু বলেছেন অবসরে গিয়ে রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী, সেহেতু বিএনপি মহলও বিচারটপতি খায়রুল হকের দেওয়া রায়ের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই ও অবৈধ বলে প্রচারণার সুযোগ পেয়েছে।

বলা যায়, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের অজ্ঞাতেই (!) বিএনপির হাতে একটি অস্ত্র দুলে দিয়েছেন। সুযোগ বুঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার এবং পার্লামেন্টের বৈধতা নেই।

তবে বিএনপি যাই বলুক, দেশের শীর্ষ আইনজীবীদের অনেকেই 'অবসরগ্রহণের পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থি'– প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে সাধারণত বিচারপতিরা উন্মুক্ত আদালতে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। এরপর তারা সময় নিয়ে বিস্তারিত যুক্তি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখেন ও পরে প্রকাশ করেন। বহুদিন ধরেই বাংলাদেশে অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিদের রায় লেখার প্রচলন রয়েছে। ভারতসহ অন্যান্য দেশেও এই রীতি চালু আছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, অবসরের পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট বিধান নেই। যদি প্রধান বিচারপতি মনে করেন অবসরে গিয়ে রায় লেখা যাবে না, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের বিধিমালা সংশোধন করে এ বিধান যুক্ত করতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ষেয়দ আমিরুল ইসলাম বলেছেন, দায়িত্ব পালনের সময় ঘোষিত রায় অবসরে যাওয়ার পর লেখার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। এ ক্ষেত্রে বিচারক মামলার ফলাফল আগেই বলে দিয়েছেন, যা পরে লেখা হচ্ছে মাত্র।

অবসরে গিয়ে রায় লেখা প্রচলিত রীতি যদি বর্তমান প্রধান বিচারপতি বদলাতে চান তাহলে তাঁর উচিত ছিল এ সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া। আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে এ নিয়ে রাজনীতিবিদদের মতো হাওয়াই বক্তব্য দেওয়া প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। তিনি যে মতামত দিয়েছেন সেটা আদালতের রায় না হলেও প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনেকের কাছেই যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে থাকে। তাঁর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সেটা বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই প্রধান বিচারপতির রয়েছে। হাততালি পাওয়া বা বাহবা পাওয়ার মতো সস্তা বক্তব্য দেওয়া অন্তত তাঁর কাজ নয়।

প্রধান বিচারপতির বক্তব্য কেন্দ্র করে বিএনপি রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলেও তাতে খুব সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, এটা উপলদ্ধি করেই হয়তো ২২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সিলেটের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগে যেসব রায় ঘোষণা হয়েছে সেগুলো কোর্টের ডিসিশন, তাই সেগুলো বাতিল হবে না। তিনি আইনজীবীদের উদ্দেশে এটাও বলেছেন, 'আপনারা হলেন সমাজের বিবেকবান মানুষ, আইন পেশাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করবেন না।'

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যটি বিএনপি 'রাজনীতিতে' ব্যবহার করেছে। এটা সরকারের জন্য অবশ্যই স্বস্তিদায়ক হয়নি। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রবীণ আইনজীবী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধান বিচারপতিকে কথাবার্তায় সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন,'এমন কোনো কথা বলবেন না, যা জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক প্রভাব ফেলবে, সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কথা যত কম বলা যায়, একেবারে বাক্-সংযত'।

আমাদের সব কিছুতেই সংযম ও পরিমিতিবোধের অভাব। অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণেই মূলত আমাদের রাজনীতি বিদ্বেষপ্রবণ ও সংঘাতময়। তারপরও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাহ্যত কোনো উত্তেজনা নেই। পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রয়েছে। এই অবস্থা বজায় থাক, অব্যাহত থাক, কোনো কারণেই যেন এর ব্যত্যয় না ঘটে– এটাই দেশের মানুষের প্রত্যাশা।