চাঁদে পাওয়া মানুষ হুমায়ূন আহমেদ

মাজহার ইসলামমাজহার ইসলাম
Published : 13 Nov 2016, 12:25 PM
Updated : 13 Nov 2016, 12:25 PM

ছোট ছোট ৫৭টি শব্দে লেখা কয়েক লাইনের চিঠি।

মাজহার,
ভাই, আরও দশ পৃষ্ঠা লিখতে হবে। এই দশ পৃষ্ঠা তাড়াহুড়া করলে উপন্যাসের ভয়ংকর ক্ষতি হবে। আগামীকাল সন্ধ্যার আগে শেষ দশ পৃষ্ঠা লেখা যাচ্ছে না।
তোমার পত্রিকা যদি পঁচিশ তারিখে বের করতেই হয় তাহলে আমার উপন্যাস যতটুক দেওয়া হয়েছে ততটুক ছেপে নিচে লিখে দাও–আগামী সংখ্যায় সমাপ্য।
আর কোনো বুদ্ধি তো বের করতে পারছি না।
হুমায়ূন আহমেদ

কিছুক্ষণ আগে ধানমণ্ডির বাসা থেকে ফিরে এসে 'অন্যদিন'-এর কর্মী রতন এই চিঠি আমাকে দিয়েছে। আমাকে লেখা হুমায়ূন আহমেদের প্রথম চিঠি।
চিঠিটি পড়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। এদিকে বাজারে অন্য ঈদসংখ্যাগুলো সব চলে এসেছে। অন্যদিন ঈদসংখ্যার সব ফর্মা প্রেসে চলে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের শেষ অংশের জন্য কয়েকটি ফর্মা আটকে আছে। কী করব বুঝতে পারছি না।
আমার চিন্তিত অবস্থার মধ্যেই হঠাৎ হুমায়ূন আহমেদের টেলিফোন–মাজহার শোনো, জীবনে বহু ঈদসংখ্যা প্রকাশ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু এরকম জোছনা এক শ' বছর পর আবার আসবে। এটা দেখার আর সুযোগ পাবে না। কাজেই দলবল নিয়ে নুহাশপল­ী চলে আসো। একসঙ্গে জোছনা দেখব এবং রাতে নুহাশপল্লীতে থাকবে। ভালো গান-বাজনার আয়োজন আছে। সঙ্গে সঙ্গে বললাম, স্যার, অবশ্যই আসব।
জোছনার প্রতি হুমায়ূন আহমেদের ভালো লাগা কী তীব্র ছিল, তা জেনেছি তাঁর লেখালেখি পড়ে, নাটক দেখে। 'আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে'–প্রিয় এই রবীন্দ্রসঙ্গীতটি অনুভূতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিল যেদিন এর অপূর্ব চিত্রায়ন দেখলাম তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক 'এইসব দিনরাত্রি'-তে। তখনই জোছনার প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল আমার ভেতর। কিন্তু জোছনা উদযাপন করতে হয় কীভাবে সে সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। তাই হুমায়ূন আহমেদের আমন্ত্রণ লুফে নিলাম তাৎক্ষণিকভাবে। আরেকটি বিষয় কাজ করেছিল, চাঁদ আর পৃথিবীর মধ্যবর্তী দূরত্ব কমতে কমতে প্রতি এক শ' বছরে একবার চাঁদ এতটা কাছে আসে পৃথিবীর। তাই এরকম প্রখর চাঁদের আলো প্রতি এক শ' বছর পর পাওয়া যায়। কারও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার জন্য নিশ্চয়ই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আর এরকম একটি ঘটনায় এ মুহূর্তে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাওয়াটাও অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।

কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবেরকে হুমায়ূন আহমেদের জোছনা দেখার আমন্ত্রণের কথা জানালাম এবং এটাও বললাম, স্যার আপনাকে সপরিবারে যেতে বলেছেন। সাবের ভাই বললেন, আমাকে তো উনি বলেন নি। আমি চাইছিলাম সাবের ভাই-ভাবিসহ নুহাশপল্ল­ী যেতে। তাই তাঁকে বললাম, স্যার বিশেষ করে আপনার কথা আমাকে বলেছেন। আপনি যেন অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যান।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয় হয় চ্যানেল আইয়ের ফরিদুর রেজা সাগরের মাধ্যমে। অন্যদিন-এর দ্বিতীয় সংখ্যার প্রচ্ছদ রচনা ছিল 'নক্ষত্রের রাত-এর নক্ষত্রেরা'। ওই সাক্ষাৎকারটির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।
মঈনুল আহসান সাবেরের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার আমাদের পরিচয় হয়। সাবের ভাই হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশক ও তাঁর বন্ধুদের একজন। সেটা ১৯৯৮-এর মাঝামাঝি সময়ের কথা। অন্যদিন-এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ। 'সৃজনশীল প্রকাশনায় উৎকর্ষের সন্ধানে' শ্লোগানে যাত্রা শুরু ১৯৯৭ সালের একুশের বইমেলায়। শুরু থেকেই নানাভাবে আমরা চেষ্টা করছিলাম কী করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের বই প্রকাশ করা যায়। সাবের ভাইয়ের সহযোগিতায় আমাদের আগ্রহের কথা জানানো হয় হুমায়ূন আহমেদকে। বই প্রকাশের জন্য তিনি অগ্রিম রয়্যালটি হিসেবে দশ লাখ টাকা প্রদানের কথা বললেন। আসলে তাঁর বই দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না বলেই এরকম কঠিন শর্ত দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ওই পরিমাণ অর্থ সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পেরুনো এই তরুণেরা দিতে পারবে না, তাই এদের বইও দিতে হবে না। পরে স্যার এ কথাটা বহুবার বলেছিলেন যে তিনি আমাদেরকে বই না দেওয়ার জন্য দশ লাখ টাকার কথা বলেছিলেন। কারণ তখনো তিনি কোনো প্রকাশকের কাছ থেকে একটা বইয়ের জন্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি অগ্রিম নিতেন না। তিনি ভেবেছিলেন, দশ লাখ টাকার কথা বললে আমরা পিছিয়ে যাব এবং তাঁকে আর বিরক্ত করব না।
হুমায়ূন আহমেদ তখন কাকরাইলের আসিফ ম্যানশনে নুহাশ চলচ্চিত্রের অফিসে নিয়মিত বসতেন। আমরা দু'দিন পর ঠিকই চটের ব্যাগে করে ব্যাংক থেকে তোলা দশ লাখ টাকার নতুন নোট নিয়ে তাঁর সামনে উপস্থিত হই। আমরা শুনেছি তিনি চেক পছন্দ করেন না। ক্যাশ টাকা এবং ব্যাংকের নতুন নোট তাঁর পছন্দ। আর পছন্দ করেন মানুষকে চমকে দিতে, তেমনি নিজেও চমকিত হতে। সাবের ভাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। চটের ব্যাগভর্তি টাকা দেখে সত্যিই ওইদিন স্যার খুবই চমকিত হয়েছিলেন। কথা হলো, 'অন্যদিন'-এর জন্য তিনি একটা ধারাবাহিক উপন্যাস লিখবেন এবং পরে তা বই আকারে প্রকাশিত হবে। পরে এই সিদ্ধান্তের খানিকটা পরিবর্তন হলো আমাদের অনুরোধে। আমরা আসন্ন ঈদসংখ্যার জন্য তাঁর কাছে একটা উপন্যাস চাইলাম এবং জানালাম, এই উপন্যাসটি একুশের বইমেলায় গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে চাই।
সেসময় বেশ কয়েক বছর হুমায়ূন আহমেদ ঈদসংখ্যাগুলোতে লিখেন নি। যদিও ইতিপূর্বে অনেক বছর তিনি বিভিন্ন ঈদসংখ্যায় উপন্যাস লিখেছেন। সে-সময় তিনি শুধু 'দেশ' পত্রিকার জন্য উপন্যাস লিখতেন। তাঁকে বলা হলো, পশ্চিমবঙ্গের একটি কাগজে আপনার লেখা থাকছে, অথচ দেশের কোনো কাগজে আপনি লিখছেন না–এটা কতটুকু যৌক্তিক? খানিকটা ভেবে তিনি একমত হলেন, দেশের কাগজের জন্যে তাঁর লেখা উচিত। এও জানালেন, এবার তিনি ঈদসংখ্যার জন্য উপন্যাস লিখবেন এবং একটি লিখলে তা 'অন্যদিন'-এ ছাপা হবে। ঈদসংখ্যায় উপন্যাস না লেখার পেছনে তাঁর আরেকটি ভাবনা ছিল, ঈদসংখ্যায় ছাপা হওয়া উপন্যাসটি পরবর্তী সময়ে বই আকারে প্রকাশিত হলে হয়তো সেটির বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
হুমায়ূন আহমেদ অন্যদিন ঈদসংখ্যার জন্য উপন্যাস লিখলেন। নাম 'রূপার পালঙ্ক'। ঈদসংখ্যাটি প্রকাশিত হলো ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে। ঈদসংখ্যা দেখে তিনি মুগ্ধ হলেন। সে বছরই ফেব্রুয়ারির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় উপন্যাসটি প্রকাশিত হলো বই আকারে। 'রূপার পালঙ্ক' বইটি তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হলে আরেক দফা তিনি মুগ্ধ হলেন। বইয়ের নান্দনিক মুদ্রণ সৌকর্য ও বাধাইয়ের তিনি প্রশংসা করলেন। বইমেলায় 'রূপার পালঙ্ক'র বিক্রির পরিমাণ হুমায়ূন আহমেদের পূর্ববর্তী বইগুলোর বিক্রিকে ছাড়িয়ে গেল। এই যুগল ঘটনা হুমায়ূন আহমেদ আর অন্যদিন গ্রুপকে পরস্পরের আস্থা, বিশ্বাস ও বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভেতর নিয়ে এল।
যা হোক, জোছনা উপভোগের আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে ফিরে যাই। বিকেল চারটায় আমাদের মাইক্রোবাসে মঈনুল আহসান সাবের, ভাবি, তাদের দুই পুত্র, কমল, নাসের ও আমি নুহাশপল্ল­ীর উদ্দেশে রওনা হই। তখন রাস্তা খুবই খারাপ ছিল। হোতাপাড়া ব্রিজের পর গাড়ি রেখে রিকশায় নুহাশপল্ল­ী যেতে হতো। সন্ধ্যার পর আমরা নুহাশপল্ল­ী পৌঁছে যাই। ততক্ষণে বর্তমানে 'বৃষ্টিবিলাস' যেখানে তার ঠিক পেছনে শালবনের মধ্যে বসেছে হুমায়ূন আহমেদের জোছনা উৎসব। আগুন জ্বালিয়ে ক্যাম্প ফায়ার, আগুনের একপাশে পাটি বিছিয়ে হুমায়ূন আহমেদ ও তাঁর বন্ধুবান্ধবরা বসে গান শুনছেন। একটু দূরে টেবিলের ওপর হারমোনিয়াম-তবলা দিয়ে গান গাইছে 'আইজ পাশা খেলব রে শ্যাম' খ্যাত গায়ক সেলিম চৌধুরী। তবলা বাজাচ্ছে বাবু। আরেকজন শিল্পী ছিল তুহিন। তুহিন হাছন রাজার গান খুব ভালো গায়। হুমায়ূন আহমেদের পছন্দের এই দুজন শিল্পী পালা করে কখনো একক কখনো দ্বৈতভাবে গান গেয়ে যাচ্ছে। অন্য আর কোনো শিল্পী ছিল কিনা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না। মাথার উপর অন্য একরকম আকাশ। আকাশের চাঁদ জোছনার ফিনকি ছড়াচ্ছে। চারদিকে দিনের মতো আলো। চাঁদের এমন তীব্র আলো আমি আগে কখনো দেখিনি। জোছনার ধবল চাদরে ছেয়ে আছে চারপাশের শালবন। থৈ থৈ জোছনা। কী অপরূপ দৃশ্য! জোছনা গায়ে মেখে হাত উঁচিয়ে গানের সঙ্গে তাল দিচ্ছেন হুমায়ূন আহমেদ। কিছুক্ষণ পর পর তাঁর পছন্দের গানগুলো শোনাচ্ছেন সেলিম চৌধুরী ও তুহিন। আমি হুমায়ূন আহমেদের পাশে বসে সেইসব গান শুনছি। হুমায়ূন আহমেদের কোলে বসে ছিল ছোট্ট নুহাশ। গান শুনতে শুনতে রাতের খাবারের পর্বটি সারলাম আমরা। সব মিলে যেন এক স্বর্গীয় সুখের অনুভূতি।
একপর্যায়ে গানের আসর শেষ হলো। ঢাকা থেকে আগত অতিথিদের কেউ কেউ চলে গেছেন। অনেকেই রাত কাটাবেন নুহাশপল্ল­ীতে। আমাদেরও রাতে নুহাশপল্ল­ীতে থাকার কথা। হুমায়ূন আহমেদ আমাদের বললেন, এসো তোমাদের থাকার জায়গা দেখিয়ে দেই। মাঠের মধ্য দিয়ে তাঁর পেছনে পেছনে আমরা তিনজন হাঁটছি। যে লিচুতলায় স্যার চিরনিদ্রায় শায়িত তার কাছেই কাঠের মাচার উপরে ছিল হুমায়ূন আহমেদের কাঠের বাংলো। বাংলোর কাছাকাছি এসে হুমায়ূন স্যার বললেন, তোমরা আজ এই ঘরে থাকবে। আমি খুবই ইতস্তত করে বললাম, স্যার এখানে আমরা থাকলে আপনি কোথায় থাকবেন? তিনি বললেন, দেখো এই বাংলোয় আমি সাধারণত থাকি না। ঢাকা থেকে আমার বিশেষ মেহমানরা এলে তাদের এখানে থাকতে দেই। তোমরা আজ নুহাশপল্ল­ীতে প্রথম রাত্রিযাপন করবে। আমি চাই, তোমরা এখানে থাকো। দূরে একটা দোচালা টিনের ঘর দেখিয়ে বললেন, আমি থাকি ওই ঘরটায়। এখন যেখানে পদ্মপুকুর ঠিক ওই জায়গাটায় ছিল স্যারের সেই ঘরটি। আমি জড়সড় হয়ে একরকম ভয়ে ভয়েই বললাম, স্যার সাবের ভাইরা কোথায় থাকবেন? তারা এখানে থাক। উনি একটু বিরক্ত হয়ে বললেন, সাবের আমার অনেক পুরনো বন্ধুদের একজন। ওদের থাকা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। আমি যেভাবে বলেছি সেভাবেই হবে। এরপর স্যার নিজে আমাদের বাংলোর ভেতরে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখালেন। পাশাপাশি দুটো ঘর। মাঝে একটি ছোট লাইব্রেরি। সেখানে দেশি-বিদেশি অসংখ্য বই সাজানো। সোলার সিস্টেমে শুধু এ বাংলোতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা। তখনো নুহাশপল্ল­ীতে বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ চলে গেলেন।
বাংলোর বারান্দায় দাঁড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদের চলে যাওয়া দেখছিলাম। মাঠের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। জোছনার আলো পড়েছে তাঁর গায়ে। ছোটখাটো মানুষটাকে যেন জোছনার ধবল চাদর ঢেকে ফেলেছে। বলাই বাহুল্য, একইসঙ্গে বিব্রত ও সম্মানিত বোধ করেছিলাম ওই রাতে।
এরপর দিনে দিনে হুমায়ূন আহমেদের সাথে বাড়তে থাকে যোগাযোগ, বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। কখন যে লেখক-প্রকাশক কিংবা লেখক-সম্পাদকের পেশাদার পরিচয়ের গণ্ডী পেরিয়ে আত্মার সম্পর্কে স্থাপিত হলাম, সুনির্দিষ্টভাবে তা বলতে পারব না। প্রথম সেই জোছনা রাতের পর গত ১৩ বছরে কমপক্ষে সহস্রাধিক রাত্রি যাপন করেছি নুহাশপল্ল­ীতে। এমনও হয়েছে এক সপ্তাহে তিনবার গিয়েছি। সুদৃশ্য ওই বাংলোটি সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনে যাওয়ার রাতে দুষ্কৃতকারীরা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। পরে সুইমিংপুলের পাশে গড়ে ওঠে আধুনিক বাংলো। তৈরি হয় বৃষ্টিবিলাসসহ নানা স্থাপনা।
মনে পড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পুকুর পাড়ে মাছ ধরা, চৈত্র মাসের ঝাঁ ঝাঁ রোদে সুইমিংপুলে গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকা, থার্টি ফাস্ট নাইটের হইচই অথবা পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসব, দেশি-বিদেশি কবি-সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আগমনে নানা আয়োজন…। জোছনা ও বৃষ্টিপাগল হুমায়ূন আহমেদ এরকম নানা উপলক্ষে কিংবা উপলক্ষ তৈরি করে তাঁর পছন্দের বন্ধু-স্বজনদের নিয়ে নুহাশপল্ল­ী উৎসবমুখর করে রাখতেন। শুধু জোছনা দেখার উপলক্ষে অসংখ্যবার রাত্রি কাটিয়েছি নুহাশপল্ল­ীতে। হুমায়ূন আহমেদের সান্নিধ্যে প্রতিটি জোছনাযাপনই ছিল এক-একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। যেন প্রতিবারই জোছনার নতুন রূপ। তবে, প্রথম রাতের জোছনা, শত বছরে চাঁদের প্রখরতম আলো, হাত বাড়ালেই যেন চাঁদকে ছোঁয়া যাবে–স্বর্গীয় সেই অনুভূতি যেন সব অভিজ্ঞতাকেই ছাপিয়ে যায়।
মাঘ মাসের এক রাত ছিল সেটি। উথালপাথাল জোছনা। স্যার, আপনি লিখেছেন–'উথালপাথাল চাঁদের আলো একটি অদ্ভুত ব্যাপার। এই আলোয় এক ধরনের ভ্রান্তি মিশে থাকে। সেই ভ্রান্তির কারণে সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলে মনে হয়।' সত্য-মিথ্যা বুঝি না; তবে এটুকু বুঝি, যে ভ্রান্তিবিলাসে আপনি আমায় জড়ালেন সেই রাতে, একজীবনে এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না।