সোনার বাংলায় আমি একজন দুর্ভাগা বাঙালি !!!

জাহাঙ্গীর হোসাইন
Published : 16 Dec 2012, 06:06 PM
Updated : 16 Dec 2012, 06:06 PM

সময় অ-সময় এমন কি সবসময় শোনা যায় চারিদিকে দৈত্যের গর্জনের হুঙ্কার। এসব দৈত্যতালির যোগান দিতে আবিষ্কার করা হয়েছে আকাশ মন্ডল ও ভূমন্ডল কম্পিত ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রাদি। যেকোন হাট-বাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেট রিয়াজউদ্দীন বাজার এবং সিটিকর্পোরেশন মার্কেটের সামনে গড়ে ওঠা ভাসমান সিডি ক্যাসেটের দোকান। এতে প্রতিযোগিতামূলক উচ্চ স্বরে বাজানো হয় হিন্দি, বাংলা ও আঞ্চলিক গান সহ ইংলিশ গানের ধুমধাড়াক্কা। এছাড়া লোডশেডিং এর সময় প্রতিটি দোকানদারের সামনে দেখায় ডিজেল চালিত জেনারেটর।

তাছাড়া বিভিন্ন দলবল সংগঠনের মিছিল মিটিং, কারো আগমন উপলক্ষে গর্জে উঠে বিভিন্ন প্রকারের বৈদ্যুতিক যন্ত্র-পাতি। শহরের মোড়ে মোড়ে লাগানো হয় উচ্চশব্দ বিশিষ্ট মাইক, সাউন্ডবক্স। এছাড়া নগরীর ঘরে ঘরে দেখা যায় উচ্চশব্দিক সাউন্ডবক্স একমাত্র আযানের সময় টুকু ছাড়া সবসময় বাজতে থাকে মেমরীতে সেটিং করা একের পর এক রোমান্টিক গান।

আমার বাসা হালিশহর থানাধীন ২৫নং রামপুর ওয়ার্ড হাজার দিঘীর পাড় হাজী শামসুল আলমের ভাড়াঘর। বাসাটি দেখভালের কাজ করছে স্থানীয় ক্যাডার আব্দুর রহিম প্রকাশ কালু। আমার পাশে ৫নং বাসায় থাকে শরীফ এবং রাসেল নামের দু'ভাই। বৃদ্ধ পিতা এবং মাঝ বয়সী মায়ের সাথে তারা থাকে।

বড় ভাই শরীফ (২৫) এর চলাফেরা সন্দেহ জনক, পাড়ার বখাটে ছেলেদের সাথে তার চলাফেরা। ছোট ভাই রাসেল(১৬) একটি মাদ্রাসায় ৪র্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করে আগামী বছর নাকি ক্লাশ ফাইভে উঠবে। তার প্যান্টের পকেটে সবসময় দেখাযায় মাল্টিমিডিয়া মোবাইল সেট, হেডফোন ছাড়া বাজাতে থাকে ঝিল্লী টাইপের গান, উঠতি বয়সি মেয়েদের আস-পাশে গিয়ে বাজাতে থাকে এসব রোমান্টিক গান।

আজ সকালে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ডবক্স ঘরথেকে বের করে জোড়ে জোড়ে বাজাতে থাকে। আমি রাসেলকে বল্লাম বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয়ের গান বাজাও এবং একটু ছোট্টকরে বাজাও। উত্তরে সে বল্লো, " আমরা বিজয় দিবস মানি না। আমারা আওয়ামী লীগ করি না।" আমি বল্লাম, " তুমি বিজয় উৎসব করবে না ভালকথা তবে সাউন্ডবক্সের শব্দ ছোট্টকরে দাও।" সে বল্লো, " আমাদের বাসার সামনে বাজাই তাতে আপনার কি ?" আমি তার মাকে শুনিয়ে কথাগুলো বলাতে তার মাও ছেলেটিকে সংশোধন করতে কোন পদক্ষেপ নিল না।

সারদিন এভাবে অনাবরত সাউন্ডবক্স বাজিয়ে বিভিন্ন এলাকার ছেলেদের নিয়ে নাচগান করতে দেখা যায়। এদের পার্শ্ববর্তী ৬নং বাসার মহিলা স্বামী একজন গাড়ি চালক প্রয়োজনের তাগিদে বাসার মোবাইলে ১০বার ফোন করেও স্ত্রীকে পায়নি কারণ ৫নম্বরের ছেলে গুলো বাহিরের আরো বখাটে ছেলে নিয়ে সারাদিন সাউন্ডবক্স বাজিয়ে নাচগান করছে। ফলে জরুরী মোবাইলের রিংটোন মহিলা ঘরে থাকাবস্থায়ও শুনতে পারেনি।

এদের যন্ত্রণায় অন্যান্ন বাসার ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ায় চরম ক্ষতি সাধন হচ্ছে। কলোনীর ৮টি ভাড়াটিয়াদের মধ্য এ পরিবারটি বিরক্তিকর আচরণে উন্মাদ হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে মনে হয় এ যেন এটি একটি দেও-দৈত্য-দানবের মহাউল্লাসপুরী। প্রলয়ের আনন্দে দৈত্যের নাচনে হাত-তালি দিচ্ছে এসব দানবেরা। চিত্ত বিনোদনের নামে চিত্তে বিষাদের পিন্ড এঁকে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে বলা হয়েছে অতিরিক্ত শব্দ দুষনের ফলে মানুষের অতিরিক্ত রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়ে হার্টফেল করতে পারে। যেকোন সময় মস্তিষ্ক বিকৃতির আশংকা রয়েছে এবং শ্রবন প্রতিবন্ধী হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া মানসিকতার চরম বিপর্যায় ঘটতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরকম অহেতুক শব্দ দূষণের সময়ে কেহ কারো সাথে কথা বল্লে কে-কি বলে কিছুই বুঝার সাধ্য কারো নেই। এমনকি নিজের কথাও নিজের বুঝে উঠতে কঠিন হয়ে যায় আনেক সময়। এরই মাঝে যদি কারো মোবাইলে জরুরী কোন ফোন-কল আসলে তা বুঝে উঠা খুব কঠিন হয়ে যায়।

প্রতিদিন ঘর থেকে বের হলেই পড়তে হয় নানা প্রকার শব্দ দূষণের ঘোল চক্ররে। শুনেছি নগরীর কোথাও কোন মাইক বা এ জাতিয় কোন শাব্দিক যন্ত্রাদি বাজাতে হলে চট্টগ্রাম স্পেশাল ব্রাঞ্চের অনুমতি নিতে হয়। এবিষয়ে কোন কিছু জানতে চাইলে ব্রাঞ্চ কর্তৃপক্ষ হয়তো বলবেন আমাদের কাছে যেকোন কেহ সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমার তার ব্যবস্থা নিব।

তাহলে কি আমরা এটাই বলতে পারি যে এভাবে দৈত্য স্বরে আকাশ বাতাস কম্পিত শব্দ দূষণের বিষয়ে কেহ সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ না করলে কোন কর্তৃপক্ষের কর্ণে পৌছে না।

এই হলো আমাদের বাংলাদেশ-যেখানে আমি নিজেকে দুর্ভাগা বাঙ্গালী বলে দাবি করি।