চট্টগ্রাম শহর জুড়ে স্কুল ভর্তির পাশাপাশি চলছে অশ্লীল রঙিন পোষ্টারের প্রতিযোগিতা

জাহাঙ্গীর হোসাইন
Published : 2 Jan 2013, 07:13 PM
Updated : 2 Jan 2013, 07:13 PM

চট্টগ্রাম শহরের অলি-গলি সড়ক মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় রঙ-বেরঙের আকর্ষনীয় পোষ্টার। বাসা-বাড়ির প্রতিরক্ষা দেয়াল, বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি, স্কুল-কলেজের দেয়ালে লাগনো হয়েছে মানুষের মনযোগ আকর্ষনীয় রঙিন পোষ্টার। প্রতিযোগিতা হিসাবে লাগানো হচ্ছে অশালীন ভাষায় ছাপানো পোষ্টার গুলো। বাসা-বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় এসব তাক লাগানো পোষ্টারের মিছিল।

সমাজের বিভিন্ন বয়সের শ্রেণী-পেশা মানুষের এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার মত নয়। বিশেষ করে যৌন উত্তেজকের বিভিন্ন কলা-কৌশল সম্মন্ধে লেখা হয় এসব পোষ্টার গুলোতে। মানব দেহে দুরারগ্য ব্যাধির চিরস্থায়ী সমাধান দিয়ে ওপেন চ্যালেঞ্চের ভাষায় পোষ্টারিং করতে দেখাযায়।

প্লে থেকে ৫ম শ্রেণীর শিশুদের নিরাপত্তার জন্য সাধারণত অভিভাবকরাই বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেওয়া করে থাকেন। অনেক সময় শিশুদের সঙ্গে থাকা পিতা-মাতারা এসব অশ্লীল ভাষায় লেখা পোষ্টার দেখে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আবার অনেক বাচ্চারা কোথাও কোন কিছু লেখা দেখা মাত্র বানান করে পড়তে চেষ্টা করে। অনেক জান্তাগ্রহী শিশুরা তাদের সংগে থাকা পিতা-মাতাকে পোষ্টারের লেখাগুলো দেখে প্রশ্ন করতে থাকে।

আজ সকালে আমার এক বন্ধু দাঁতের ডাক্তার হিমেলের সাথে তাঁর বাচ্চার স্কুলে ভর্তির ব্যপারে স্কুলের দিকে রওয়ানা দেই। চট্টগ্রামের কর্ণেলহাটস্থ নিউ মুনসুরাবাদ এলাকায় অগ্রণী ব্যাংকের নীচ তলায় তাঁর চ্যাম্বার। বন্ধু হিমেলের ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাবেন ঐ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মোস্তফা হাকিম কিন্ডার গার্টেন এন্ড হাই স্কুল নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

স্কুলে যাবার পথে দেখলাম ৭/৮বছরের একটি ছেলে সম্ভবত তার মায়ের সাথে স্কুলের পথ ধরে যাচ্ছিল। এমন সময় ছেলেটি রাস্তার পার্শ্বে দেয়ালে লাগানো পোষ্টারের লেখা গুলো দেখে একটু দাড়িয়ে পড়তে লাগল. হঠাৎ ছেলেটির হাত ধরে টান দিয়ে মহিলা বললো চল বাবা। এরই মাঝে ছেলেটি তার মাকে জিজ্ঞেস করল, ''মা'' অল্প সময় বির্যপাত এর অর্থ কি ?

শিশুটির মা লজ্জায় ক্ষুদ্ধো কন্ঠে ছেলেটিকে শাসিয়ে বল্লো চুপ থাক বেয়াদব এসব কিছু পড়তে নেই। ছেলেটি তখন মায়ের হাত ধরা টানা জোড়ে চলতে চলতে বার বার পোষ্টার গুলোর দিকে তাকাচ্ছিল।

এরপরে আমিও ডাক্তার বন্ধুর সাথে স্কুলের গেইটে পৌছলাম কিন্ত গিয়ে কোন লাভ হলনা কারণ স্কুলের সমস্ত কার্যক্রম তখন ক্লোজ করা হয়েছে। পরক্ষণে ঐ স্কুলের সিনিয়র সহকারি শিক্ষিকা আরজু বেগম অন্য আরেক জন শিক্ষিকার সাথে স্কুল থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখলাম। এসময় ডাক্তার হিমেল শিক্ষিকা আরজু বেগমের সাথে পহেলা জানুয়ারীর শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন এবং ম্যাডামকে নববর্ষ উপলক্ষে আপ্যায়ণ করতে চেয়ে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করলেন।

শেষমেশ শিক্ষিকাদ্বয় একটু চা-নাস্তা খাইতে সম্মতি জানালেন। তখন শিক্ষিকা আরজু বেগমের সাথে কথা বলতে আমিও একটু সুযোগ পেলাম। এসময় দেয়ালে দেয়ালে লাগানো রঙীন পোষ্টার এবং আমার ক্যামেরায় ধারণকৃত পোষ্টারের ছবিগুলো দেখিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম যে, শহর জুড়ে অশ্লীল ভাষায় ছাপনো রঙীন পোষ্টার গুলো আমাদের কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশে এবং মনে কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনি মনে করেন ?

এসময় তিনি দু:খ প্রকাশ করে বললেন মানব জাতির সভ্যতার মূল এবং বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল সমাজ। আর স্কুল কলেজ হল একটি সল্পকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দিনে ২৪ ঘন্টা সময়ের ১৮ ঘন্টা সময়ই ছাত্র-ছাত্রীরা বসবাস করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে অর্থাৎ সমাজের বিভিন্ন অবস্থানে। এসময় তিনি আরও বলেন সকল শিক্ষার মূল ভীত্তি হল প্রাইমারি শিক্ষা তাই এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করতে বা যত্ন নিতে কোন সমাজই তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাই আমাদের এবং সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিরই উচিৎ কোমল মতি শিশুদের কাছ থেকে এসব অশ্লীল ভাষা বা ছবি প্রদর্শনী থেকে বিরত রেখে তাদেরকে সু-রক্ষা করা। তা নাহলে অল্পবয়সেই আমাদের ছেলে মেয়েরা সকলেই যৌনতার অভিশাপে আক্রান্ত হয়ে অকালে ঝড়ে পড়বে। নষ্ট হয়ে যাবে আমাদের ভবিষ্যত সমাজ গড়ার কারিগর। ধ্বংস হয়ে যাবে দেশ এবং জাতি এমনকি ছোট বড় কারো মাঝেই লজ্জা বোধ বলতে কিছুই থাকবেনা।

বিশ্বের দরবারে একটি উলঙ্গ দেশ হিসাবে পরিচিত হবে আমাদের এই সোনার বাংলা। লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকতে হবে অনন্তকাল। তাই আসুন আমরা সকলেই আমাদের প্রিয় সন্তানদের সৎ এবং মেধাবী সমাজ সেবক হিসাবে গড়ে তুলতে বিধ্বস্ত সমাজের সকল অশ্লীলতা বেহায়াপণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। তাতে সামাজিক অবক্ষয়ের ধরণ অনেকটা হলেও হ্রাস পাবে।