স্বৈরাচারী পন্থায় বিরোধী দল দমন গণতন্ত্র হত্যার সামিল

জাকারিয়া আলফাজ
Published : 14 June 2011, 04:08 AM
Updated : 14 June 2011, 04:08 AM

গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬ টায় শেষ হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ডাকা প্রধান বিরোধী দল বি,এন,পি ও চারদলীয় জোটে অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীর ডাকা ৩৬ ঘন্টার হরতাল। এ হরতালের শুরু থেকে হরতাল আহ্বানকারীদের প্রতি আইন শৃংখলা বাহিনীর নির্মম পৈশাচিক মারমুখী অবস্থার চিত্র দেখে সারা দেশের গণতন্ত্রকামী বাঙ্গালির হৃদয়ে চরম ব্যথার সঞ্চার হয়েছে। যা গণতন্ত্রের জন্য এক অশুভ ইঙ্গিত বয়ে আনে। হরতাল এদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ কখনো সমর্থন করেনা। কিন্তু যে দাবিতে হরতাল ডাকা হয়েছে তা যুক্তিসঙ্গত সিংহ ভাগ বাঙ্গালির দাবি। একই দাবিতে আওয়ামী লীগও হরতাল ডেকেছিল বিরোধী দল থাকাকালীন। সাধারণ জনতার প্রশ্ন আজ কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রতি আওয়ামীলীগের এত অনীহা। তাদের কি দরকার ছিল এ পদ্ধতি বাতিলের ? তাই আজ অনেকের দাবি হরতালের দায়ভার সরকারের। কেননা সরকার নিজেই হরতাল ডেকে এনেছে। যেখানে সরকার জনগনের গণ দাবি বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, সেখানে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে মনগড়া সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের বহি:প্রকাশ ছাড়া কিছুই নয়। দেশে গ্যাস,বিদ্যুৎ,পানির তীব্র সংকট, জনগনের এসব সমস্যা সমাধান না করে শুধু শুধু যা তা আইন প্রণয়ন এবং অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সরকারের পতনকে আরো তরান্বিত করবে। বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য চারদলীয় সরকারকে দায়ী করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য এই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এদেশের মানুষ ২৪ ঘন্টায় ২২ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেখেছে ! বিদ্যুৎ হয়েছে শহরমুখী। এ অবস্থায় জন জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। বিরোধী দলের উচিত ছিল হরতালে এসব দাবিও যোগ করা। যা হোক বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে প্রধান ইস্যু করে হরতাল আহবান করেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে যদি বিরোধী দল এই ইস্যুতে জনগনের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করে তাতে দোষের কি? সরকারেরও উচিত ছিল তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ডাকা বি,এন,পি-জামায়াতে ডাকা হরতালে সহযোগিতা করে এ ইস্যুতে জনগণ কোন পক্ষে তা যাচাই করার। কিন্তু সরকার তা না করে বিরোধী দলকে দমন-নিপীড়নের পথই বেছে নিয়েছে। পুরো দেশটাকে পরিণত করেছে পুলিশ-র‌্যাবের অ্যাকশন প্রদর্শনীতে। পুলিশ যে কায়দায় বিরোধী দলের প্রতি নির্মম নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে তা কখনো একটি সভ্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়। শুধু তাই নয় গণতান্ত্রিক সরকারের দাবিদার আওয়ামীলীগের দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। হরতালে আওয়ামীলীগ আইন-শৃংখলা বাহিনীকে একটি জননির্যাতন বাহিনীতে পরিণত করেছে। স্বৈরশাসক বলে খ্যাত এরশাদের স্বৈরশাসনকে হার মানাচ্ছে বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন। আমরা সাধারণ জনগণ মনে করি আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব, তা কখনো নির্যাতনের মাধ্যমে নয়। স্পর্শকাতর বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে সরকার যদি জনগণের দাবি পূরণ তথা উন্নয়ন কর্মকান্ডে এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে জোর দেয় তাহলে জনগণ হয়তো এ সরকারকে গন সমর্থনের মাধ্যমে আবারও দেশ পরিচালনার সুযোগ দিতে পারে।