ভিকারুননিসায় ছাত্রী ধর্ষণ: সারাদেশে অন্তরালে অগনিত পরিমল! সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন

জাকারিয়া আলফাজ
Published : 12 July 2011, 07:59 AM
Updated : 12 July 2011, 07:59 AM

শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ,নিপীড়ন,নির্যাতন সমসাময়িক পত্র পত্রিকা বা মিডিয়ার প্রধান শিরোনাম। সর্বশেষ ভিকারুননিসায় দশম শ্রেনীর ছাত্রী ধর্ষণ সারাদেশের আলোচিত সংবাদ।পাষণ্ড শিক্ষক পরিমল জয়ধর গ্রেফতার পরবর্তী পুলিশি রিমান্ডে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষনের খবর আমরা মাঝেমধ্যে পত্রিকায় পড়ে থাকি। একটি বিষয় লক্ষণীয়, যতসব শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে এর গোড়ায় দেখা যাচ্ছে এ জাতীয় ঘটনার মাধ্যম বা সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রাইভেট-কোচিং। পরিমলও এর ব্যতিক্রম করেনি। আমাদের দেশে এক শ্রেণীর শিক্ষক শিক্ষকতা নামক মহান পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে শ্রেণি পাঠদানের চেয়ে বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। যা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত লক্ষণীয়। নাম যেহেতু প্রাইভেট এখানে আর সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। শ্রেণি পাঠদানের মতো এক সাথে যেমন পাঠদান শুরু হয়না তেমনি একসাথে ছুটিও হয়না।

একেকজন আসে একেক সময়ে যায়ও তেমনি ভাবে। পড়ানোর সময়টাও নিরিবিলি সময়ে বিদ্যালয়ে বা শিক্ষকের নিজ রুমে। আর ঐ সব পাষণ্ড শিক্ষকরা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে এখানেই। বিদ্যালয় গুলোতে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের এক ধরনের পরোক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।যেমন, বিষয় ভিত্তিক জটিল সমস্যা গুলো শ্রেণীকক্ষে সমাধান না দেয়া,প্রাইভেট না পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে নিজ বিষয়ে নম্বর অতিরিক্ত কম দেয়া, শারিরীক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করা , এস,বি,এ নম্বর না দেয়ার হুমকি ইত্যাদি। এসবের মাঝে আবার নির্দিষ্ট ভাবে টার্গেট করে ছাত্রীদের। এক পর্যায়ে শিক্ষকের কাছ থেকে ভিন্ন সময়ে প্রাইভেট পড়তে একপ্রকার বাধ্য হয় ছাত্র-ছাত্রীরা।ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে থেকে ছাত্রদের আগে ছুটি দিয়ে দেয়,এর পর ছাত্রীদের বাকী অংশ এবং সর্বশেষ নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত ছাত্রী। কু-মতলবী এসব শিক্ষকরা নিজেদের কাছ থেকে প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন ফন্দি তৈরি করে এবং এক পর্যায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। বিশেষ করে তারা ছুটির দিনগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। এসব ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনা গুলো প্রতিনিয়তই সারাদেশে ঘটছে অহরহ। এদের মুষ্টিমেয় হয়তো মুখ খুলছে নয়তো বাকীরা লজ্জা কিংবা ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা,নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে নরপিশাচ পাষণ্ড এসব শিক্ষকদের নির্যাতন। আর এসব ধর্ষনের স্বীকার অনেকেই আবার উপযুক্ত বিচারও পাচ্ছেনা। এভাবে চলছে দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো। আজ ছাত্রী ধর্ষনের দায়ে গ্রেফতার হলেন পরিমল। কিন্তু তার মত অগনিত পরিমল যে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিচরণ করছে তা হয়তো প্রত্যেকের কম বেশি জানা। সচেতন অভিভাবকদের দাবি ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকের একান্ত বাধ্যগত,তাই বলে কি শিক্ষকের যৌন স্বাদ মেটাতেও তাদের বাধ্য থাকতে হবে ? অনেক অভিভাবকের প্রশ্ন ,সঠিক আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনে এসব অপকর্মের সমাধান হবে কিনা ? তা না হলে সারাদেশের অগনিত পরিমলরা আরো উৎসাহিত হবে। এসব সমাধানে সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ রাখতে পারি যেমন-বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রাইভেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ এবং এর অমান্যকারী শিক্ষকের এম,পি,ও বাতিল।প্রয়োজনে প্রতিটি ক্লাসের গণিত,ইংরেজী ও কঠিন বিষয়গুলোর বিশেষ কোচিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে , এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেমন উপকৃত হবে তেমনি রুদ্ধ হয়ে যাবে পরিমলদের যৌন চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছাত্রী ব্যবহারের ‍সুযোগ। সুতরাং আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে শিক্ষাঙ্গনের এসব অপকর্মের দ্রুত সমাধান চাই।