আধুনিক কালে, বিশেষ করে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতিতে শাসন পদ্ধতি হিসাবে গণতন্ত্রের জয়-জয়কার। গণতন্ত্রের পক্ষের যুক্তিতে যা বলা হয় তা হলো, 'গণতন্ত্রের চেয়ে উত্তম শাসন পদ্ধতি এখনো আমরা পায় নি।' গণতন্ত্রের বিপক্ষে এখনো গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর উক্তিটি প্রযোজ্য। তিনি গণতন্ত্রকে 'নাক গোনার গতিক' বলে নিন্দা করেছেন। যে মত ও আদর্শের পক্ষে যত 'বেশী নাক' পাওয়া যায় তা সত্য, অন্যদিকে গুনতিতে প্রতিপক্ষের চেয়ে 'কম নাক' মানেই তা অসত্য ও অনাদর্শ। প্লেটোর গণতন্ত্র সম্পর্কে এরূপ নেতিবাচক ধারণার প্রধান কারণ ছিল, তার শিক্ষাগুরু ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের জনক সক্রেটিস কে তত্কালীন গণতন্ত্রী শাসক কর্তৃক অন্যায়ভাবে হেমলক পানে হত্যা। বেশীরভাগ মানুষের মতামত বা আদর্শ সব সময় সত্য ও আদর্শ হয় তা নীতির ক্ষেত্রে একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
ইতিহাস গত ভাবে গণতন্ত্রের এমন নাজুক অবস্থায়, শাসন ব্যবস্থা ও আদর্শ হিসাবে গণতন্ত্রকে অনেক সংস্কার ও যুগোপযোগী করা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আধুনিক ও সমসাময়িক কালের অনেক রাজনীতিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। গণতন্ত্র এখন যত না বেশীরভাগ মানুষের শাসন ব্যবস্থা হিসাবে পরিচিত, তার চেয়ে বেশী পরিচিত রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে। রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে গণতন্ত্র শুধু বেশীরভাগ মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে এর ব্যবহারকে নিরুত্সাহিত করে, বরং সব মানুষের মতামত ও স্বার্থের প্রতি সমান গুরুত্বারোপ করে। আর এখানেই গণতন্ত্রের সফলতা নির্ভর করে।
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে-সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের আলোকে সংবিধানে গণতন্ত্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার আন্যতম প্রধান মূলনীতি হিসাবে গ্রহণ করা হলেও, প্রাচীন গ্রীক গণতন্ত্রের আদলে এখনো শাসন ব্যবস্থা হিসাবে গণতন্ত্র প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক কেবল সরাসরি প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারে, কিন্তু সরকার গঠনের পর সরকারকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ বা অপসারণ করতে পারে না। আধুনিক ও সমসাময়িক গণতন্ত্রের যে বৈশিষ্ট সমূহের কারণে শাসন পদ্ধতি ও আদর্শ হিসাবে গণতন্ত্রের জয়-জয়কার, তা এখনো বাংলাদেশের শাসন পদ্ধতি হিসাবে উপস্থিত গণতন্ত্রে অনেকটাই অনুপস্থিত।
চলবে—-
ছবি সূত্র: উইকিপিডিয়া