সড়কে বেপরোয়া চালক, ‘৯৯৯’ সেবায় ফোন করতেই সাড়া দিল পুলিশ

জামাইল বশীর (জেবি)
Published : 24 Feb 2020, 12:03 PM
Updated : 24 Feb 2020, 12:03 PM

উত্তরা থেকে তেজগাঁও পথে সকালে অফিস যেতে  যে বাস পাওয়া যায় সাধারণত তাতেই উঠে পড়ি। সেদিন উঠেছিলাম বলাকা পরিবহনে। সিটিং সার্ভিসের ভাড়া নিলেও দেখার কেউ নেই বলে এরা গাদাগাদি করে লোক ওঠায়। বাসটি অতিরিক্ত যাত্রীর আশায় ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করছিলো। ওই লেন পরিবর্তন করতে গিয়ে কাকলিতে সামনে থাকা এক মোটরসাইকেলকে জোরে ধাক্কা মেরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনির পর বাস থামলো।

যাত্রীরা সবাই কমবেশি ব্যাথা পেয়েছে। তাকিয়ে দেখি মোটরসাইকেল আরোহী ছিটকে সামনে পড়েছে আর বাসের সামনের বাম চাকা মোটরসাইকেলের উপর।

পথচারীরা যখন মোটরসাইকেল আরোহীকে ধরাধরি করে তুলতে ব্যস্ত আমাদের বাসের চালক কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে মহাখালীর দিকে বেপরোয়াভাবে ছুটতে থাকলো। তাকে থামতে বললে না থেমে উল্টো গাড়ি চালানো অবস্থায় একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। তার পাশেই শিশুসহ বয়স্ক মহিলা যাত্রীও ছিলেন। ধূমপান করতে মানা করা হলেও যাত্রীদের কোনো কথাই গ্রাহ্য করলো না চালক।

এসময় আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনা বর্ণনা করে জায়গার নাম জানাই। তারপর আমাকে ফোনেই মহাখালীর টিআই'র (ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক) সাথে কানেক্ট করে দেওয়া হয়। আমি গাড়ির নাম ও বর্ণনা দিলে আমতলীর সিগনাল পার হওয়া মাত্রই একজন ট্রাফিক পুলিশ বাসে উঠে পড়েন। পুলিশ দেখে চালকের ঔদ্ধত আচরণ নিমিষেই উবে গেল।

পুলিশ অফিসার চালককে আটক করে আমাকে অনুরোধ করলেন আমতলী পুলিশ বক্সে যেতে। পুলিশের এই দ্রুত ব্যবস্থায় আমি তখন মুগ্ধ;  সেই সঙ্গে দায়িত্ববোধের কারণেও থানায় যেতে রাজি হলাম।

আমি বুঝতে পেরেছিলাম চালক বেশ কড়া শাস্তিতে পড়তে যাচ্ছে। চালকও তা বুঝতে পেরে বিমর্ষ মুখে বসেছিল। তরুণ চালককে প্রশ্ন করলাম, বাড়িতে কে কে আছে? বলল, মা ও ছোট ভাই। তাকে বললাম, আপনার ছোট ভাইটি যদি ঐ মোটরসাইকেলে থাকতো আর মা যদি  পাশে বসে থাকতো তাহলে কি দুর্ঘটনা বা ধূমপান কোনোটি করতে পারতেন? চালক মাথা নিচু করে থাকলো।

পুলিশ বক্সে পৌঁছালে টিআই মহোদয়কে অনুরোধ করলাম যে চালক তার ভুল বুঝতে পেরেছে সুতরাং তার শাস্তি যেন কম হয়। টিআই আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলেন। সে হাসিতে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও পরম আত্মবিশ্বাস মিশে ছিল।

এরপর টিআইয়ের অনুমতি নিয়ে চালককে ডেকে একটা কাউন্সেলিং দিলাম। চালক প্রতিজ্ঞা করলো, আর কখনও চলন্ত গাড়িতে ধূমপান করবে না এবং সাবধানে গাড়ি চালাবে। এরপর ট্রাফিক পুলিশ চালককে সর্বনিম্ন শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিলেন।

সেদিনের পুরো ঘটনায় আমার কাছে যা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হচ্ছে, ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া। পুলিশের এই দ্রুত কর্ম দক্ষতায় আমি বিমোহিত। আমি পুলিশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করছি। বাংলার প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি সম্পদ নিরাপদে থাকুক পুলিশের এমন ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

সবার কাছে অনুরোধ, পথেঘাটে চলতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়লে যেন  ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে নিজের সমস্যাটির কথা জানাই। বিপদে পুলিশের সাহায্য নিই, পুলিশ জনগণের বন্ধু।