কয় কি,কাদের মোল্লা নাকি মুক্তিযোদ্ধা! সবাই সাবধান!

জান মাহমুদ খান
Published : 14 Feb 2013, 05:57 AM
Updated : 14 Feb 2013, 05:57 AM

ফেইস বুকে একটি মন্তব্য পেলাম কাদের মোল্লার স্ব-পক্ষে। তাকে মুক্তিযোদ্ধা বনানোর প্রয়াস হয়েছে এই লেখাতে। হাসি পেল লেখাটি পড়ে। আরেকবার হাসি পেয়েছিল যখন শুনেছিলাম জামাত সমর্থীত মুক্তিযোদ্ধার সংগঠন। এও কি সম্ভব? প্রথমে ভাবেছিলাম স্বপ্ন দেখছি । চিমটি কেঁটে দখলাম নাতো স্বপ্ন নয় এটি। অবাক হলাম জামাত কোন পর্যায়ে পৌছেছে।
এখন কাদের মোল্লাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর প্রয়াস। সাবধান হতে হবে আমাদের । বিগত ৪০ বছর অনেক চক্রান্ত হয়েছে এদেশকে নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে। এমন এক সময় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘৃণা করা হতো। কেউ বলতেও পারতোনা আমি মুক্তিযোদ্ধা। এতটাই ঘৃণার পাত্রে পরিণত করা হয়েছিল আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের। সময়ের পরিক্রমায় আজ যখন মুক্তিযোদ্ধারা নিজের পরিচয় বলার অধিকার পেয়েছে, ঠিক তখনই রাজাকাররাও নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর প্রয়াস পাচ্ছে। বিগত ৪০ বছরের মত চুপ থাকলে চলবে না। সরব হতে হবে এদের বিরুদ্ধে। নানা কথা ছড়ানো হচ্ছে বাতাসে। সকল চক্রান্তের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে প্রথম সুযোগেই রাজাকারদের দলটির মূল উত্পাটন সহ সকল রাজাকারদের ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে আমাদেরকে আবারও চক্রান্তের সম্মুখিন হতে হবে।

এই রাজাকারদের দলের সাথে তাদের লালনকারী দলটিও এখনো সরব তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য। এই দলটিকেও বর্জন করতে হবে।

আমি ফইস বুক এ কাদের মোল্লাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর প্রয়াসের হুবহু কপি নিম্নে উল্লেখ করলাম:

যারা বলছেন, কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়া উচিত ‌'আবেগ/ধূর্ততা' ছাড়া আর কি যুক্তি আছে সে দাবির পক্ষে? আমি বলছি, কি কারণে কাদের মোল্লাকে বেকসুর খালাস দেয়া হবে না। আজ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম, সরকার যদি হাইকোর্ট বিভাগের গৃহপালিত বিচারপতিদের দিয়ে (যেমন-মানিক, জাকির, হাসান ফয়েজ, শেখ আরিফ, রহিম, খুরশীদ, গোবিন্দ) আপিল বিভাগ গঠন না করে, তবে সুপ্রিমকোর্টের সেই আপিল বিভাগ কাদের মোল্লাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে।

একমাত্র জামায়াতের রাজনীতি করা ছাড়া তার আর কোন অপরাধ সরকারের নিয়োগ দেয়া আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ করতে পারেনি। একটি ইসলামি দলের নেতা হওয়ার অপরাধে নিশ্চয়ই কারো ফাঁসি হতে পারে না?
'ছাত্রজীবনে কাদের মোল্লা ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিং নিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় তিনি ফরিদপুরের গ্রামের বাড়িতে ছিলেন, স্বাধীনতার কিছু সময় পর ৭২ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর মুজিব তাকে সেখানে চাকরি দিয়েছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) উদয়ন স্কুলে ৭২-৭৫ সালে শিক্ষকতা, পাশাপাশি পড়াশোনাও করেন তিনি। এ ছাড়া ৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঢাবির সমাবর্তনে মুজিবের হাত থেকে পুরস্কার নেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ১৪ আগষ্ট রাতে এক গণঅভূত্থানে মুজিব নিহত হন।' তারপও কি করে তিনি যুদ্ধাপরাধী হন? আমি এসব দাবির পক্ষে যাব না। লেখা লম্বা হয়ে যাবে। শুধু আইনি দিক নিয়ে কিছু কথা বলব।

ধরেন, কাদের মোল্লা একজন খুনী। আপনি যদি আইন মানেন- তবে সে যে খুন করেছে তার সপক্ষে আপনাকে প্রমাণ হাজির করতে হবে। অকাট্য প্রমাণ ছাড়া আইনের বিচার চলে না। শাহবাগের গঞ্জিকাসেবিদের আদালতে সে বিচার চলতে পারে। কিন্তু শুধু গঞ্জিকাসেবি দিয়ে কিন্তু দেশ চলে না, বিশ্ব চলে না, মনে রাখতে হবে। এখানে হত্যা, ধর্ষণ, গণহত্যাসহ ফৌজদারী অপরাধের (ক্রিমিনাল অফেন্স) ছয়টি অভিযোগ আনা হয়েছে আসামির বিরুদ্ধে। কিন্তু ছয়টি অভিযোগের একটির সাপেক্ষেও কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হাজির করতে পারেনি সরকার।

' জন্মের পর আমি শুনেছি আমার বাবার কাছে, আমার বাবা ৭৪ সালে পত্রিকা পড়ে জেনেছেন, কাদের মোল্লা গণহত্যার সাথে জড়িত ছিলেন'
'আমি মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে এসে গ্রামের মানুষের কাছে শুনলাম পল্লব হত্যাকাণ্ডের সাথে মোল্লা জড়িত'
'আমি আমার গাড়ির ড্রাইভারের কাছে শুনেছি, কাদের মোল্লা আবার বাবার হত্যার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন'

এমন সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে, একটা মানুষকে কি দুনিয়ার কোন আদালত সাজা দিতে পারে! ওহ্ কাদের মোল্লাকে কিন্তু শোনা কথার উপর ভিত্তি করেই সাজা দেয়া হয়েছে। এখানে বিচারপতিরা আইনের চেয়ে আবেগকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। অতিউৎসাহি হয়ে বারবার রাজনীতিকে টেনে এনেছেন। (ট্রাইব্যুনাল বৈধ কি না, এর বিচারপতিদের মান এসব নিয়ে কিছু বলব না।)

কিন্তু আপনি যদি কোন মানুষকে বিচার করে সাজা দিতে চান তবে আপনাকে আইনে মনে সে বিচার করতে হবে। আপনারা জানেন, এ ট্রাইব্যুনাল চরম বিতর্কিত। নামে আন্তর্জাতিক হলেও বিচার নাকি হচ্ছে দেশীয় (ডমেসটিক/গোয়ালঘর টাইপ) আইনে। আর আজব আজব সব আচরণ করছেন বিচারপতিরা। বিচারের সময় আসামীদের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়নি।

আসলে বিচরাপতিরা আইন মানেননি বলে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। তারা যদি শতকরা ১ ভাগ আইনও মানতেন, তবে মোল্লাকে অভিযোগ থেকে খালাস দিতে বাধ্য হতেন। আক্ষরিক অর্থে বিচারের রায়টা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যা বিচারপতি কেবল পড়ে শোনান। আমরা জানি, রায় লেখা হয়েছে, সরকারের এক দফতর থেকে।

মিরপুরের রাজাকার কসাই কাদেরের সব অপবাদ ও অপকর্ম আজ একজন নিরীহ রাজনীতিকের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। মিডিয়ার বদৌলতে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকেই জোর করে বানানোর চেষ্টা চলছে ৭১ এর অপরাধী সেই কসাই কাদের। এভাবে মিথ্যার উপরেই চলছে বিচারের নামে তামাশা। এত কাহিনীর কি দরকার বুঝলাম না। সরকার আর মিডিয়া মিলে তাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রক্যাশ্যে গুলি করে মারলেই পারে। এখানে কথিত বিচারের কি আছে। আসলে এর পেছনে রাজনীতি আছে। এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনি বৈতরনি পার হওয়ার একটা ট্রামকার্ড। এ কার্ড ফুরিয়ে গেলে সরকারি দল বাআল যদু-মদু, রাম-সাম খেলবে কাকে নিয়ে?

নাটকের এখানেই শেষ না। সরকার পুলিশ প্রটেকশনে কিছু গঞ্জিকাসেবিদের শাহবাগে নামিয়ে দিল। তাহারা বুনো আদিমদের চেয়েও হিংস্রভাবে কাদের মাল্লার ফাঁসি চায়। কিন্তু কি দোষ তার তা বলতে পারছে না। এভাবে সরকার যখন তার একটি ক্রীড়নক গোষ্ঠিকে একজন নিরীহ মানুষের পেছনে লেলিয়ে দেয় তখন বুঝতে হবে রাষ্ট্রকাঠামো ভেঙে পড়েছে। দেশ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। আশা করি বিপর্যয় থেকে দেশকে রক্ষা করতে দেশপ্রেমিক জনতা জেগে উঠবে।

ট্রাইব্যুনালে আনা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, তিনি একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় অভিযোগ, একাত্তরের ২৭ মার্চ তিনি সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন। তৃতীয় অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বিকালে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা জল্লাদখানা পাম্প হাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন। এই তিন অভিযোগের ব্যাপারে কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
এক অভিযোগ থেকে অব্যাহতি : জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগ অনুসারে, ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার কেরানীগঞ্জ থানার ভাওয়াল খানবাড়ি ও ঘাটারচরে (শহীদনগর) শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন। এ অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তা থেকে কাদের মোল্লাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
দুই অভিযোগে যাবজ্জীবন : আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালি রাজাকারদের সঙ্গে কাদের মোল্লা মিরপুরের আলোবদী গ্রামে হামলা চালান। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি নিহত হন। ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী ও পাকিস্তানি সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যায়। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়, ধর্ষণের শিকার হন এক মেয়ে। এই দুই অভিযোগে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।