পাশ্চাত্যের চোখে ইসলামিক দৈত্য এবং এডওয়ার্ড সাঈদ

আহমাদ
Published : 5 April 2011, 06:24 PM
Updated : 5 April 2011, 06:24 PM

এডওয়ার্ড ওয়াদি সাঈদ ১ নভেম্বর ১৯৩৫ সালে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বাস গত দিক থেকে তিনি ছিলেন পোটাস্ট্যান্ট ধর্মের অনুসারী। শ্বেতবর্ণের এই লোকটি পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক, দার্শনিক। নর্থফ্লিডের মাউন্ট হারমন স্কুলের গ‍ ণ্ডি পেরিয়ে পিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে এমএ ডিগ্রি নেন ১৯৫৩ সালে। এরপর হাভার্ডে সম্পন্ন করেন পিএইচডি। সত্যউচ্চারণে নির্ভীক সাঈদ ছিলেন পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কর্ম হচ্ছে, ওরিয়েন্টালিজম

চিন্তার জগতে বিপ্লব সৃষ্টিকারী এই গ্রন্থটি রচিত হয় ১৯৭৮ সালে। প্রাচ্যকে নিয়ে পাশ্চাত্যের সুদূরপ্রসারী ও সুগভীর কলাকৌশলগুলো তিনি চিত্রিত করেছেন এই বইয়ের পৃষ্ঠাজুড়ে। ওরিয়েন্টালিজম সারাদুনিয়ার বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওরিয়েন্টালিজমের মাধ্যমে সাঈদ প্রাচ্যতন্ত্রের স্বরূপ উদঘাটন করে এ বিষয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত বই হচ্ছে, কভারিং ইসলাম : হাউ দ্য মিডিয়া এন্ড দ্য এক্সপার্টস ডিটারমাইন হাউ উই সি দ্য রেসট অব দ্য ওয়ার্ল্ড। ক্যান্সারে আক্রান্ত সাঈদ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সালে পরলোকগমন করেন। লেবাননের পোটাস্ট্যান্ট সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাহিত করা হয়।

এডওয়ার্ড ওয়াদি সাঈদকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সাঈদ একজন বাস্তববাদী অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তি। সত্যিকারের একজন জানা মানুষের দায়িত্ব তিনি সমগ্রজীবন পালন করেছেন। তার অবস্থান ছিলো ন্যায় ও ন্যায্যতার পক্ষে। পারিবারিকভাবে ধর্মে পোটাস্ট্যান্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি কলম ধরেন পশ্চিমা আগ্রাসন ও ইসরায়েলি জবরদখলের বিরুদ্ধে।

তিনি মানুষের সামনে তুলে ধরেন সাম্রাজ্যবাদের বিভৎসচরিত্র ও কুৎসিত চেহারা। পণ্যযুদ্ধের বাইরেও প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর সাহিত্য ও সাংবাদিকতাকে সাম্রাজ্যবাদ কিভাবে অপব্যবহার করছে, তা সতর্কভাবে তিনি পাঠকের কাছে উম্মোচন করেছেন তাঁর বইগুলোর মাধ্যমে। তার বিখ্যাত বই অরিয়েন্টালিজম। এ বইয়ে তিনি পাশ্চাত্যের বাঘা বাঘা লেখক ও দার্শনিকের রচনা অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, তাদের লেখায় প্রায় নিজের অজান্তেই দখলদারী ও প্রাচ্যকে হেয় করার মানসিকতা কিভাবে উহ্য হয়ে আছে! কাভারিং ইসলাম বইয়ে তিনি তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করেন, পশ্চিমের করপোরেশনগুলো কিভাবে তাদের মিডিয়াকে অতিচতুরভাবে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে।

তাঁর গভীর অনুসন্ধান পাশ্চাত্যে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে পূর্ব থেকে চলে আসা অনৈতিক অথচ জোরালো প্রচারণার স্বরূপ তুলে ধরেছে। বিশেষত ইউএসএ মিডিয়ার সংকীর্ণ অভিব্যক্তির বাদানুবাদ করে সাঈদ শক্তিশালীভাবে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরেছেন। সাঈদ দেখিয়েছেন, পশ্চিমের তাঁবেদার গোষ্ঠী যাদের মাঝে আবার অনেক ইসলামিস্টও রয়েছেন, মূলত তারা ওরিয়েন্টালিস্ট [প্রাচ্যবিদ] বলেই খ্যাত, এরা ভিন্নধারার ইসলামিক দৈত্যের উপকথা হাজির করেন।
ওরিয়েন্টালিজমের মাধ্যমে সাঈদ প্রাচ্যকে হাজির করেছেন। যেখানে প্রধানত মুসলিমবিশ্ব উপস্থাপিত হয়েছে। বিকল্প বিদেশি উপনিবেশবাদী এবং রহস্যময় বৈশ্বিকশক্তি, যা পশ্চিমা ব্লক দ্বারা সম্মোহিত, এটি একটি চমৎকার নিঃস্রাব বটে। একইভাবে ইসলামিক দুনিয়ার যে ছবি আমরা দেখতে পাই, তাতে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর শেখদের মুক্তহস্তে হেরেমে নর্তকী প্রতিপালন এবং ঘোমটার নিচের সন্দেহজনক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। সাঈদ জোর দিয়ে বলেছেন, ইসলামকে চাতুরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা প্রাচ্যবিদদের একটি সহজাত প্রবণতা। 'ঝুঁকিপূর্ণ, সংবেদনশীল ও প্রতিক্রিয়াশীল' -প্রাচ্য সম্পর্কে এভাবে মূল্যায়ন হয় পাশ্চাত্যে। 'তারা' এবং 'আমরা' জন্মগতভাবেই ভিন্ন, এইভাবে সৃষ্টি করা হয় প্রতিক্রিয়া। ভুল চিন্তা দ্বারা যা মূল্যায়িত ও চালিত হয়, কতকটা ইভানজেলিস্ট ও কনজারভেটিভ আদর্শের সংমিশ্রণে।

ইসলাম একটি অনুকরণযোগ্য ধর্ম, যার শক্তিশালী সংস্কৃতি রয়েছে। এটি অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত ও স্বাতন্ত্র্য আভিজাত্যম-িত। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পশ্চিমের অনুদার ও সংকীর্ণ প্রচারণার অনিবার্য ফলস্বরূপ যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তার নগদ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, সভ্যতা ও কৃষ্টিগুলোর মাঝে সমঝোতার অভাব। প্রাগতৈহাসিক কাল থেকে সভ্যতার অগ্রযাত্রায় ইসলামের ভূমিকা অত্যুজ্জ্বল। সাহিত্য, আইন, রাজনীতি, ইতিহাস ও শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে অসামান্য অবদান। ইসলাম তার আবেদন নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। এককথায় এটি একটি ম্যাসেজ [বার্তা], যা ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক সীমানা মাড়িয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে আফ্রিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এমনকি পশ্চিম ইউরোপ ও আমেরিকায়ও। ফলত সব মানচিত্রে ছড়িয়ে পড়েছে এর অনুপম প্রাণশক্তি।

পশ্চিমা মিডিয়া আমাদেরকে একথা বিশ্বাস করাতে চায়, তৃতীয় বিশ্বের প্রতিবাদী ও সচেতন আন্দোলনগুলো, বিশেষ করে ধর্মীয় পরিচয় বহনকারী আন্দোলনগুলো মূলত ইসলামি জঙ্গিবাদী আন্দোলন। এভাবে প্রাচ্যের সত্যের স্বর ও সুর পাল্টে যায় পশ্চিমে এসে। ধর্মীয় আদর্শ পরিপুষ্ট বিশেষ স্বাতন্ত্রকে একইভাবে মৌলবাদী বা জঙ্গিবাদী বলে ইসলামকে প্রতিপক্ষ করা হচ্ছে এবং এটি একধরনের গালিতে পরিণত হয়েছে। আদর্শিক প্রতিবাদের বিষয়টিকে যদি চূড়ান্ত সমস্যা মূলক এবং অপরিহার্য ফলস্বরূপ চিত্রিত না করে সত্য ও সঠিক বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়, তবে একই সঙ্গে এটি অন্যদের জন্যও ক্ষতিকর বিষয়ে পরিণত হয়ে যায়।
সাঈদ যুক্তিসংগতভাবে পুঁজিবাদের এমন কিছু কলাকৌশল চিত্রিত করেছেন, যা তৃতীয় বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানের আদলে ছড়িয়ে দেয়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশ ফিরিয়ে আনার এটি একটি অসঙ্গত প্রচেষ্টা বটে। এক্ষেত্রে ইসলাম এক বিরাট প্রতিপক্ষ সন্দেহ নেই। আর এজন্যই ইসলামকে মুক্তচিন্তা ও সভ্যতার স্রোতবিমুখী বলে প্রচারণা চালানো হয়। সৃষ্টি করা হয় ধুম্রজাল। ঘোলা জলে মাছ শিকারের আদিম কৌশলও বলা চলে একে।

ব্রিটিশ বা ফরাসি প্রচারমাধ্যম থেকে মার্কিন প্রচারমাধ্যম একটু ভিন্নধর্মী। পশ্চিমা সমাজ, ভোক্তা গোষ্ঠী, সংগঠন ও তাদের স্বার্থও ভিন্নধরনের। প্রত্যেক মার্কিন সাংবাদিকের মাথায় একটা কথা সবসময় উপস্থিত থাকে, তার দেশ পৃথিবীর একমাত্র পরাশক্তি, যার নির্দিষ্ট স্বার্থ রয়েছে এবং সেই স্বার্থ হাসিলের দায়িত্ব তার আছে; অন্য দেশের লোকদের-সাংবাদিকদের মাথায় এসব চিন্তা থাকে না। প্রত্যেক মার্কিন সাংবাদিক বিশ্ব সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করার সময় এ ব্যাপারে সচেতন থাকেন, তার চাকরিদাতা কর্পোরেশনটিও মার্কিন ক্ষমতার অংশীদার।

সাঈদ নিউইর্য়ক পোস্ট, নিউ রিপাবলিক, নিউইয়র্ক টাইমস, কমেন্টারি, দি আটলান্টিক, টাইম ম্যাগাজিন ইত্যাদি নামিদামি পত্রিকা ঘেঁটে জন ফিকনার, মার্শাল হাডসন, ফ্রিৎস স্টার্ন, রবার্ট থুকার, দানিয়েল প্যাট্রিক, এন্থলি হার্ট, ওয়ালজারের মতো চৌকস সাংবাদিক, কলামিস্টের সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখিয়েছেন, সাম্রাজ্যবাদের এ সকল লিখিয়েরা প্রাচ্যকে কি বিভৎসরূপে উপস্থাপন করেছেন পশ্চিমাদের কাছে!

দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায়, যেসকল গ্রন্থকার [প্রাচ্যবিদগণ] যেমন ধরুন বার্নাড লিউস, যিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন পাবলিশারদের একজন, তিনি আবার Atlantic Monthly [আটলান্টিক মানথলি]-র প্রকাশকও, তিনি ইসলামকে উপস্থাপন করেন, irrational [পশ্চাদপদ] ও পশ্চিমাবিরোধী [anti-Western] হিসেবে। জ্ঞান ও সাহিত্যের সকল কলাকৌশল প্রয়োগ করেই এমনটি করা হয়। এসকল পাবলিকেশন্স এতো বিস্তৃত ও শক্তিশালীভাবে কৌশলপ্রণয়ন করে এবং এমন প্রচারকৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে তা করা হয়, যা মানুষের মনের উপর প্রবল প্রভাব সৃষ্টি করে এবং তাদের প্রবণতাকে নির্দিষ্ট বৃত্তে চালিত করে। এটি পশ্চিমের সরকার ও মিডিয়ার এক বিস্ময়কর গ্রন্থী, যা জনমতকে রাজনৈতিক স্বার্থে চালিত করতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। সাঈদ দেখাচ্ছেন, পশ্চিমের কর্পোরেশনগুলো বিশেষভাবে এমন কতগুলো দুর্ধর্ষ হাইপ্রোফাইলার সাংবাদিককে প্রশিক্ষিত করেছে, যারা মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে থেকে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে।

সাঈদ তাঁর অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে সেসকল ঘটনাবলির সর্বোৎকৃষ্ট ইলাস্ট্রেশন করেছেন, যেখানে দেখানো হয়েছে বিপ্লব পূর্ব ইরানের সাথে আমেরিকার মধুর সম্পর্ক এবং একই সাথে সাম্প্রতিক সময়ে ইরান সংকট পাশ্চাত্যমিডিয়ায় কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বিশেষত ইরানের পরমাণূ কর্মসূচি, যার উদ্যোক্তা মূলত পশ্চিমা দুনিয়া। নিউইয়র্ক পোস্ট-এর বরাত দিয়ে তিনি জানান, নিউইয়র্ক পোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার জর্জ কারপুজি। কারপুজি নিজস্ব যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে খোমেনির ইসলামি সরকার বই প্রসঙ্গে দাবি করেন, খোমেনি ও হিটলার প্রায় সমকক্ষ। মানে, সেই যুগের এডলফ হিটলারের মতো আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনিও একজন অত্যাচারী, স্বেচ্ছাচারী ও শান্তি বিঘ্নকারী শাসক। মেইন ক্যাম্পের-এর লেখক আর ইসলামি সরকার-এর লেখকের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে, একজন নাস্তিক, অন্যজন নিজেকে আল্লাহরমানুষ বলার ভান করেন।

বেশিরভাগ পশ্চিমী ইসলামের সাথে এভাবে পরিচিত হয়, তাদের কাছে ইসলাম এভাবেই উপস্থাপিত হয়। মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ডামাডোলের সুযোগ তারা নেয়। তিনি দেখিয়েছেন, পশ্চিমা মিডিয়ার চাতুরী চিত্রায়ন ও বিশেষ কিছু পরিভাষার প্রয়োগ যেমন : স্বাদেশিকতা, মানবতাবিরোধী, নিষ্ঠুর শত্রুতা। এর মাধ্যমে দেখানো হয়, প্রাচ্যে পশ্চিমের প্রতি ফুঁসে উঠা ক্ষোভ ও ঘৃণার অভিব্যক্তি এবং তৈরি হয় প্রতিক্রিয়াশীলতা।
বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে-যেমন ধরুন ইরান। প্রচারণা চালানো হয় আয়াতুল্লাহ খোমেনি [যিনি ইরানের একজন ধর্মীয় নেতা] একজন আমেরিকা বিরোধী ও বিবেকহীন রাজনৈতিক বক্তা।…

একইভাবে তেলসমৃদ্ধ আরব শেখদের বেহিসেবি খরচ, স্বৈরাচারী ক্ষমতা ও হারেমের কল্পকাহিনী যেমন হাইলাইট করা হয়, তেমনি তুলে ধরা হয় ফিলিস্তিনি জনপদে ক্ষুব্ধ টিনএজারের গুলির গর্জন, রাস্তায় জ্বলন্ত আমেরিকান ফ্লাগ- এসবের মাধ্যমে পাশ্চাত্য মিডিয়া এ অঞ্চলের জনজীবনের মূলস্রোতধারায় আমেরিকানদের সম্পর্কে মূল্যায়ন ফুটিয়ে তোলে দারুণ দক্ষতায়।

একইভাবে তিনি তুলে ধরেছেন, কিভাবে তৃতীয় বিশ্বে সামরিক পরিভাষার প্রয়োগ ঘটিয়ে [যেমন জঙ্গিবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী কথিত শব্দ প্রয়োগ করে], কাল্পনিক প্রতিবেদন ছাপিয়ে এবং কথিত খলনায়ক তৈরি করে সাম্রাজ্যবাদের শিকারক্ষেত্র তৈরি করা হয়। এছাড়া ধর্মীয় সংঘাত বাধানো, সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটানো কিংবা রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মাঝে প্রভুত্ব বিস্তার করে গোলযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরি করাও এসব মিডিয়ার অন্যতম দায়িত্ব। এককথায় প্রাচ্যে পশ্চিমের চারণভূমি তৈরি করাই এসকল মিডিয়ার ব্রত।

সাঈদ বলছেন, তৃতীয় বিশ্বের বাসিন্দারা গুটিকয় পশ্চিমা সংবাদ সংস্থার উপর নির্ভরশীল। যেমন- সিএনএন, বিবিসি। এসব সংবাদ সংস্থার কাজ হলো সংবাদগুলো তৃতীয় বিশ্বে স্থানান্তর করা। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংবাদগুলো তৃতীয় বিশ্বেরই কোনো একটা অঞ্চল সম্পর্কিত। অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্ব খবরের উৎস হওয়ার পরিবর্তে পরিণত হয়েছে সংবাদভোক্তায়। তৃতীয় বিশ্ব তার নিজের সম্পর্কে জেনে নিচ্ছে পশ্চিমের তৈরি বিভিন্ন স্ট্যা-, ইতিহাস ও তথ্যের আলোকে।
সর্ব সমেত সাঈদ সহজবোধ্য ভাষায় মন্তব্য টানেন, জটিল সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঘটনাপ্রবাহের, যেগুলো পশ্চিমের ইসলাম সম্পর্কিত অভিজ্ঞতায় প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে। তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন মিডিয়ার রসালো সেসকল উপাদান সম্পর্কে, যা ইসলাম ও প্রাচ্য বিষয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান নির্ধারণ করে। সাঈদ প্রশ্ন করতে চান এ অঞ্চলের সংগ্রামী চেতনা যাকে পশ্চিমাবিরোধী সংগ্রাম হিসেবে উপস্থাপন করা এক স্বাভাবিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে, সেসব বিষয়ে। ছায়ার অনুসরণ করে তিনি প্রতিকৃতি খুঁজে পান। তিনি তুলে ধরেন, প্রাচ্য সংকটের মূল কারণ ও এ অঞ্চল নিয়ে চলে আসা প্রাগতৈহাসিক ঘটনাবলি কিংবা ঘটমান বাস্তবতা। আগ্রাসন বিরোধী প্রতিবাদী চেতনা যা পশ্চিমা মিডিয়ার একপেশে অসহিষ্ণুতার শিকার, সেসব বিষয়গুলোও। সাঈদ বলতে চান, মধ্যপ্রাচ্যের অমীমাংসিত বিষয়াবলি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা দ্বিমুখী বক্তব্য, পশ্চিমের নেতিবাচক ও অবজ্ঞাসূচক দৃষ্টিভঙ্গি। অথচ এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে ইসলামের শক্তিশালী অবস্থান ও মানবিক মূল্যবোধ, যা পশ্চিমারা কখনো বলে না। তাঁর রচনাবলি পাঠ করে গভীর মননশীল ব্যক্তি মাত্র উপলব্ধি করতে পারবেন এ সময়ের নানা রাজনৈতিক ও সামরিক মেরুকরণ, ৯/১১ উত্তর পাল্টে যাওয়া বিশ্ব পরিস্থিতি ও পশ্চিমী করপোরেট সাংবাদিকতা ও প্রাচ্য তন্ত্রের স্বরূপ।