জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কারণে ধ্বংস হবে দেশের অর্থনীতি

জসিম উদ্দিন জয়
Published : 14 July 2016, 11:16 AM
Updated : 14 July 2016, 11:16 AM

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের কতিপয় দেশে জঙ্গিবাদ একটি বার্নিং ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণেই এই নব্য জঙ্গিবাদের উত্থান। ইসলামী দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নতির পথ রোধ করতে এবং এসব দেশে তাদের সামরিক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে একে কাজে লাগাচ্ছে। তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কিছু বিভ্রান্ত মুসলিমকে বেছে নিয়েছে। তাদেরকে দিয়ে জঙ্গিবাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে, এ সকল মুসলিম বুঝে হোক না বুঝে হোক তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। অথচ এদের অনুধাবন করা উচিত ছিল ইসলাম কখনো বোমাবাজি, হত্যা, গুপ্তহত্যা, আত্মঘাতী হামলাসহ কোন ধরনের অরাজকতা সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণে হোক কিংবা অন্য কোন কারণে হোক যারাই এই পথে পা বাড়িয়েছে তারা জঘন্যতম অপরাধে জড়িত হয়েছে ।

গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুই বিদেশী নাগরিককে খুনের ঘটনার বছর না ঘুরতে গুলশানের হলি আর্টিজান ঘটনায় বহু বিদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শোলাকিয়ায়  ঈদের জামাতে জঙ্গী হামলা। জঙ্গী হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে বিদেশ নির্ভর অর্থনীতির ধারা রাতারাতি ধ্বংস হবে। যাতে তৈরি পোশাক খাত, বৈদেশিক ঋণ মান জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, এবং এর প্রবাহে নেতিবাচক হুমকির মুখে পড়তে পারে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগেও দেখা দিতে পারে অনিশ্চয়তা। পাশাপাশি উন্নয়নের বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অধিকাংশ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন বিদেশি নাগরিক। পর পর দুটি সন্ত্রাসী হামলার পর সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ফলে মার্কেট, বিপণি বিতান, হোটেল ও রেস্টুরেন্টে সাধারণ মানুষের পদচারণা সীমিত হয়ে আসছে। তাই সঙ্কুচিত হতে পারে এসব খাতের ব্যবসা বাণিজ্য।

গুলশানের হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় পরপর দুটি হামলার ঘটনার অনেক বায়ার তাদের সফর বাতিল ও অর্ডার বাতিল করেছেন। গুলশানের হামলার ঘটনায় ইটালির ৯ জন নাগরিক নিহত হন, যাদের প্রত্যেকে পোশাক রফতানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সঙ্গত কারণে নিরাপত্তার কারন দেখিয়ে বিদেশি ক্রেতারা এ দেশে আসতে চাইছেন না। সন্ত্রাসী হামলা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিও বাড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে জাপানের পোশাকের ব্র্যান্ড ইউনিক্লো অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে সব ধরনের বাণিজ্যিক সফর বাতিল করেছে। সুইডেনের এইচ.অ্যান্ড.এম-সহ অন্য যেসব নামজাদা বিদেশি পোশাক প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশে ব্যবসা রয়েছে, তারা বলেছে, বাংলাদেশ থেকে নিরাপদ কোনো দেশে কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার আগে তারা এদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।

রাজধানীর গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি হোটেলের সামনেই থমথমে পরিস্থিতি। আশপাশের রাস্তাগুলোয় গাড়ি চলাচল সীমিত করার পাশাপাশি বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। এ প্রসঙ্গে একটি পাচতারা হোটেল রেডিসনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সব সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো অতিথির বুকিং নেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি আগে থেকে যারা আছেন, তারাও বাইরের গাড়ি নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করতে পারছেন না। নিরাপত্তার স্বার্থে হোটেলের গেট থেকে নিজস্ব গাড়ি দিয়ে অতিথিদের ভেতরে নিয়ে আসা হচ্ছে ।

এদিকে জঙ্গী হামলার ঘটনায় বাতিল হয়ে গেছে পর্যটন নগরী সিলেটে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের অগ্রিম বুকিং। সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা আশা করেছিলেন, ২০১৬ পর্যটনবর্ষে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন। এ বছর রাজনৈতিক হাঙ্গামাও নেই। কিন্তু গুলশানের অনাকাংখিত ঘটনায় ভেস্তে গেছে সব। নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকা থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ভেন্যু সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।