বাঙালি আর বাংলা নববর্ষ একই সূত্রে গাঁথা

জসিম উদ্দিন জয়
Published : 19 April 2017, 04:24 AM
Updated : 19 April 2017, 04:24 AM

আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাঙালি। আর বাঙালিদের অর্থাৎ আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে বাংলা বর্ষবরণ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ একটি বৃহৎ ও জাতীয় উৎসব। সেই ছোটবেলা থেকে এখন পযর্ন্ত মা আমাদের সকল ভাইবোনকে ডেকে কড়া ভাষায় বলে দেয় আজ বছরের প্রথম দিন, সারা দিন কেউ কারো সাথে ঝগড়া করবি না, কেথাও বাকি নিবি না, কাউকে টাকা ধার দিবি না ইত্যাদি।

গ্রাম-গঞ্জে একধরনের কথা প্রচলিত আছে যে, বছরের প্রথম দিন যা করবে, সারা বছরও তাই করতে হয়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় দিনের আবর্তে এখন বুঝতে পারছি যে মায়ের বলা স্পেশাল সেই দিনটি হচ্ছে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়, বাংলা বছরের প্রথম দিন। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলিম, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সকল গোত্র বর্ণের বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ।

পহেলা বৈশাখের সবচেয়ে প্রাচীন অনুষ্ঠান 'হাল খাতা'। যুগ যুগ ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে যে পদ্ধতিটি চলে আসছে এটি। হাল খাতা পহেলা বৈশাখেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এদিন গ্রামে-গঞ্জে-শহরের প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা তাদের পুরোনো বছরের সকল হিসাব-নিকাশ শেষ করে বকেয়া টাকা আদায় করে। নতুন বছরের নতুন খাতা উদ্বোধন করা হয়। তাই ব্যবসায়ীদের কাছে দিনটির তাৎপর্য অনেক। এ উপলক্ষে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় মিলাদ মাহফিল, মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

পহেলা বৈশাখ মানে পান্তা-ইলিশ, পহেলা বৈশাখ মানে একতারা হাতে নিয়ে বাউলগান, পহেলা বৈশাখ মানে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আনন্দের তুফান। শুভ নববর্ষ ১৪২৪, বাঙালি জাতি নানা রঙ্গে ঢঙ্গে সাজিয়ে একতারা হাতে আর গামছা মাথায় বেঁধে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে নাচে-গানে আনন্দে মেতে উঠে দিবসটি উদযাপন করেছে। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বসংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করেছে। ফলে আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রার গুরুত্ব বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।  ১৪২৪ বাংলা নববর্ষ ছায়ানটের ৫০তম বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি হয়।  তবে এবার দুঃসহ অতীতকে বিসর্জন আর অপশক্তিকে দমন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায় উদযাপিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪।

বর্ষবরণের এই রেওয়াজ শুধু আমাদের দেশে বা শুধু বাঙালি জাতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্ষবরণের রেওয়াজ পৃথিবীর প্রধান প্রধান সকল ভাষা ও জাতির মধ্যেই রয়েছে। বৈশাখ এলেই আমাদের মাঝে উৎসবের রোল পড়ে যায়। শুরু হয় ব্যপক আয়োজন।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর'। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বাঘ, ফুল, পাখির প্রতিকৃতি। সবার সামনে থাকে সমৃদ্ধির প্রতীক কালো হাতি, যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলার ঐতিহ্যকে।

পেছনে ছিল অশুভ আর অমঙ্গলের প্রতিকৃতি কালো দৈত্য। সব মিলিয়ে জঙ্গিবাদকে দূরে ঠেলে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এ সবকিছুর সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রাখা হয় সূর্য। সেটি পেছনে ঘোরালে দেখা যায় একটি কালো মুখ। সকল অপশক্তিকে দমন করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশায় প্রতিবছর উদযাপিত হোক বাংলা নববর্ষ।