প্রবাস জীবনের বেদনা

জসীম উদ্দীন বাদল গাজী
Published : 23 August 2018, 09:21 AM
Updated : 23 August 2018, 09:21 AM

প্রবাস জীবন মানে অনেকেই ভাবেন একটু সুখের আশা। অনেকেই ভাবেন, প্রবাসে গিয়ে কিছু টাকা ইনকাম করে একটু সচ্ছল হবেন। আবার এই প্রবাসই অনেকের জীবনে অন্ধকার নিয়ে আসে।

ঘর ছাড়া, ভিটে ছাড়া, এমনকি অকালে জীবনও নিয়ে নিয়েছে প্রবাস। কত জনের তো কোনো খোঁজ খবরই পাওয়া যায়নি। তারপরও মানুষ ছুটছে প্রবাসে।

প্রবাসে কেউ যে সফল নয় তা না। তবে বেশির ভাগ বাংলাদেশি প্রবাসীদের রয়েছে অনেক 'অসফল' গল্প।

অনেকেই দালাল নামক কিছু চক্রের খপ্পড়ে পড়েন; আবার কেউ কেউ প্রবাসে গিয়েও আইনি জটিলতা ও স্থানীয়দের প্রতারণার শিকার হয়ে কারাবাসেও কাটান।

এমন অসংখ্য অসফল প্রবাসীদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজনের কথা জানা যাক। একজন আপন ভেবে তার দু:খের কাহিনীর কিছু কথা আমাকে বলে।

তার বাবার অনেক ইচ্ছে ছিলো ছেলেকে বিদেশে পাঠাবেন। এজন্য বাবা তাকে এসএসসি পরীক্ষার পর কাজ শিখতে ঢাকা পাঠিয়ে দিলেন।

ঢাকায় গিয়ে ডেভেলপমেন্টের কিছু ড্রইংসহ রুফ কাজ শেখা শুরু হলো তার। প্রায় ছয় বছর সময় লাগে; তারপর ডেভেলপমেন্টের একটা চাকরিও হলো।

এরই মাঝে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিতে ইন্টারভিউ দিতে থাকলেন তিনি। ইন্টারভিউ দিতে দিতে পাসপোর্টই জব্দ করে নিল এক ট্রাভেল এজেন্সি।

ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। তারপর এমআরপি পাসপোর্ট বানাতে হলো। এরপর ইন্টারভিউ না দিয়ে পাসপোর্টের ফটোকপি সরাসরি পাঠালেন ওমান, দুবাই, সৌদি, কাতার এবং সিঙ্গাপুরের  অনেক দেশে।

কোনো সাড়া না পেয়ে বুঝে গেলে, ঢাকাতেই কাজ করে খেতে হবে। নতুন আরেকটা চাকরিও পেয়ে গেলেন; উত্তরায় অফিসে।

এর মাঝে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর ক্যান্সার ধরা পড়ে। প্রায় এক বছর চিকিৎসা চালানোর পর বাবা চলে গেলেন আপন ঠিকানায়।

মাকে দেখার কেউ ছিলো না তাই নিজেই বাড়িতে থেকে মায়ের দেখাশোনার পাশাপাশি টুকটাক কাজ করতে থাকেন। বাবা চলে যাওয়ার দুই বছর পর বিয়েও করেন। আর বিয়ের এক বছরের মধ্যেই, ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর, চলে আসেন এক সময়ের স্বপ্নের প্রবাসে;  স্ত্রীর বড় ভাই আর্থিক সহযোগিতা করেছিল।

জিপসনের কোম্পানিতে যোগদানের কথা থাকলেও সেটা না হয়ে প্রথম দুই-তিন মাস বেকার থাকতে হলো।তিন মাস পর কাজ পাওয়া গেল। এর পাঁচ মাস পর আবার  কাজ নেই; ফের দুই মাস বসে থাকা।

তারপর অন্য কন্ট্রাক  হলো। কিন্তু এখানেও বছর শেষ করে ঠিক মতো বেতন পাওয়া গেল না। তিন মাস পর এক মাসের বেতন হাতে আসতো।

প্রবাসীদের সব অনিশ্চয়তা কেউ বুঝতে চায় না। মনে করে এখানে অনেক অনেক টাকা। এখানে অনেক প্রবাসী বেতন উঠিয়েই নিজ দেশে পরিবারের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেয়। বিদেশি নোটগুলো নিজের জন্য গুণে দেখার সুযোগ পায় না তারা।

প্রবাসীরা ঈদে নিজের জন্য কিছু না কিনেই সবাইকে খুশি রাখার জন্যে মিথ্যে বলে। পরিবারকে জানায় এখানে  ঘোরাফেরার কথা, ভালো ভালো খাওয়ার কথা। আসলে তো ঈদ মানে সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করার পর নামাজ পড়েই রুমে এসে দেশে পরিবারকে একটা ফোন করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো ছাড়া আর কিছুই না।

প্রবাসীরা না পাই মায়ের হাতের নাস্তা, সেমাই, পোলাও; না পায় পরিবারের মানুষের খুশি নিজ চোখে দেখতে। প্রবাসীদের আসলে কেউ নেই। পরিবার  নেই,  এমনকি অনেক সময় সরকারকেও পাশে পাওয়া যায় না।