নজরকাড়া আসবাবপত্রে সাজিয়ে নিন আপনার আপন ভূবন

জুয়েল ইসলাম
Published : 28 Feb 2016, 01:26 PM
Updated : 28 Feb 2016, 01:26 PM

পৃথিবীতে যুগে যুগে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যখন গুহাবাসী ছিল তখন থেকেই দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য মানুষ বিভিন্ন প্রকারের আসবাবপত্র নির্মাণ ও ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন সময়ে সাধারণত গুহায় খোদাই করে অথবা পাথরের বিভিন্ন অংশকেই আসবাবপত্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। এমন কি, মিসরের বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন থেকেও পাথরের তৈরি আসবাবপত্র ব্যবহারের সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়। তবে তাদের বিশালাকার দেহ ও নির্মাণশৈলীতে পারদর্শিতার কারনে তাদের বসতি নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন রুচির পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি তাদের আসবাবপত্রের নির্মাণেও রুচির পরিচয় পাওয়া যায়।

যুগের বিবর্তনের ফলে মানুষের যখন ধীরে ধীরে রুচির পরিবর্তন হতে শুরু করল, তখন মানুষ ধীরে ধীরে গাছের কাঠ কেটে আসবাবপত্র বানাতে শুরু করল। কাঠের তৈরি আসবাবপত্র টেকসই হওয়ার সুবাদে, খুব দ্রুতই তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আজ কয়েক শতাব্দী অতিবাহিত হওয়ার পরও, আসবাবপত্রের মধ্যে কাঠের তৈরি আসবাবপত্রই চাহিদার অন্যতম শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব এবং অর্থনীতির অস্থিশীলতার কারনে বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে এসে, কাঠের সাথে বিভিন্ন উপাদান ও কাঠ ব্যতিত বিভিন্ন আসবাবপত্রের নির্মাণ ও বাজারজাতকরন শুরু হয়। যেমনঃ প্লাইউড, পার্টিকেল বোর্ড, ফাইবার বোর্ড, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি। আসুন জেনে নেই, কিছু ফার্নিচারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

-কাঠের আসবাবপত্রঃ নাম থেকেই বুঝা যায়, কাঠ থেকে এই আসবাবপত্র তৈরি করা হয় বিধায় একে কাঠের আসবাবপত্র বলা হয়। তবে বিশেষভাবে জানা দরকার, বর্তমানে অনেক উপাদান দেখতে হুবহু কাঠের মত মনে হলেও সেগুলো শুধুমাত্র কাঠ থেকে তৈরি করা হয় না। আর তাই কাঠের আসবাবপত্র বলতে শুধুমাত্র গাছ থেকে সরাসরি সংগৃহীত কাঠের মাধ্যমে তৈরি আসবাবপত্রকে বুঝায়।

-প্লাইউডের আসবাবপত্রঃ গাছ থেকে সংগৃহীত কাঠকে প্রথমে নির্দিষ্ট মাপে গুড়া করে এর সাথে আঠালো পদার্থ দিয়ে বোর্ড বা শীট আকারে কাঠামো তৈরি করা হয়। এরপর ভিনার দিয়ে এর বাহ্যিক আবরন তৈরি করে একে মসৃণ করা হয়। আর পরিশেষে নির্দিষ্ট চাহিদা অনুযায়ী বোর্ড বা শীট থেকে কেটে নির্দিষ্ট আসবাবপত্র তৈরি করা হয়।

-পার্টিকেলের আসবাবপত্রঃ কাঠের আঁশ এবং অব্যবহৃত কাঠের গুড়াকে একত্র করে আঠালো পদার্থের সাথে বিশেষ মেশিনে উচ্চমাত্রার চাপ ও তাপ প্রয়োগ করা হয়। এরপর তার উপরের অংশে সরাসরি রঙ প্রয়োগ করে পুনরায় তাপ প্রয়োগ করে তা মিলিয়ে দিয়ে বোর্ড বা শীট আকারে বের করা হয়।

– ফাইবার বোর্ডঃ এটি প্রায় ৭০ শতাংশ পার্টিকেল বোর্ডের মতই। শুধু বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে একে আঠা ছাড়াই চাপ ও তাপের মাধ্যমে কিছুটা শক্ত করে উপরে ভিনার শীট দিয়ে একে ব্যবহার উপযোগী কয়ারা হয়।

– লেমিনেটেড কাঠঃ লেমিনেটেড কাঠ সাধারণত দুর্বল প্লাইউডের অপর নাম। যদিও এর সাথে প্লাইউডের উপাদান ছাড়াও অতিরিক্ত কাঠের আঁশ যুক্ত করা হয় তবুও এর স্তর প্লাইউডের থেকে অধিক চিকন হয়ে থাকে।

-বেতের আসবাবপত্রঃ বাঁশের দুর্বল অংশ থেকে এই আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। সহজে স্থানান্তর এবং দামে সস্তা হওয়ার কারনে, ষাট থেকে আশির দশকে এই আসবাবপত্রের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে অর্থনীতির হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে এর চাহিদা দ্রুত কমতে থাকে। শৌখিন ব্যক্তি ছাড়া বর্তমানে এর ব্যবহার খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না।

-এলুমিনিয়ামের আসবাবপত্রঃ কাঠের আসবাবপত্রের তুলনায় অধিক মুল্ল্যের পার্থক্য, বার্নিশ বা রঙের ঝামেলা মুক্ততা, পানিতে নষ্ট না হওয়া এবং টেকসই হওয়ার কারনে খুব সহজেই এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এখনও ধীরে ধীরে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর প্রদান সমস্যা হচ্ছে এতে বিভিন্ন ধরনের রঙ পছন্দে সীমাবদ্ধতা থাকে।

-প্লাস্টিকের আসবাবপত্রঃ ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক উৎপাদনের সুবাদে, টেকসই ও দামে সস্তা হওয়ার কারনে খুব সহজেই প্লাস্টিকের আসবাবপত্র বাজারে স্থান দখল করে নেয় এবং এখনও ধীরে ধীরে আরও দ্রুত বাজারে ব্যপক চাহিদা সৃষ্টি করছে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং পছন্দমত বিভিন্ন রঙ পছন্দের সুবিধার করনে, অনেকেই একে ভবিষ্যতে আসবাবপত্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করছে।

উপরোক্ত বিভিন্ন ধরনের উপাদানের তৈরি আসবাবপত্রই সাধারনত বর্তমানে বাজারে অধিক প্রচলিত এবং সারাবিশ্বে ব্যবহারের তারতম্য এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে, প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয়। আর এই ব্যবহারের চাহিদা এবং ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করেই সাধারণত আসবাবপত্রের গঠন ও কাঠামোও ভিন্ন হয়ে থাকে। আর সে অনুসারেই আসবাবপত্রের নামও নির্ধারণ করা হয়, আমাদের দেশে প্রচলিত ফার্নিচার গুলোর মধ্যে রয়েছে – খাট, চেয়ার, টেবিল, সোফা সেট, ডাইনিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, সেক্রেটেরিয়েট টেবিল, আলমারি, ওয়াল শো-কেস, টি-টেবিল, ফাইল কেবিনেট, মিটসেফ, ওয়্যারডোব, ইজি চেয়ার, টিভি স্ট্যান্ড, দোলনা সেট, বুক সেলফ। কিচেন ফার্নিচার গুলোর মধ্যে রয়েছে – কর্ণার রেক, বটম মাউন্টেড পুল ড্রয়ার, স্পুন এন্ড ফর্ক হ্যাঙ্গার, স্পুন এন্ড প্যান হ্যাঙ্গার, ওয়াশ বিম, কর্ন সুইভাল রেক ইত্যাদি।

আপনার ঘরের জায়গা, আপনার রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী, আপনি আপনার পছন্দের আসবাবপত্র সাজিয়ে নিতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন অতিরিক্ত আসবাবপত্রের কারনে ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট না হয় কারন বর্তমানে পুরানো এবং গতানুগতিক অধিক ডিজাইন ও কারুকার্যের আসবাবপত্রের বদলে, অল্প আসবাবপত্র যথাযথ সাজিয়ে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির দিকে অধিক জোর দেওয়া হয়। তাই আপনার পছন্দনীয় স্বল্প আসবাবপত্রের মাধ্যমেই আপনার ঘরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পারেন।

আপনার অবস্থান অনুযায়ী, আপনার নিকটস্থ শো-রুম/দোকান থেকে আপনার পছন্দের আসবাবপত্র খুঁজে পেতে পারেন নিম্নের লিঙ্ক থেকেঃ

আপনাদের সবার সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্রের প্রত্যাশায়, আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।