বাংলাদেশে বর্তমানে মানবাধিকারের হালহকিকত কেমন তা জানার জন্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অফিসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তরুন সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে কমিশনের ঠিকানা বা ফোন নাম্বার জানতে চাইলাম। যে ক'জনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম তাঁরা কেউ বলতে পারলেন না। এমন কি যাঁরা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার দাবী করেন তারাও পারেন নি। দুয়েক জন ঠিকানার ইংগিত দিয়ে বলেছেন ইস্কাটনে জনকন্ঠ অফিসের কাছে হবে। সেখানে গিয়ে জনকন্ঠের আশেপাশে খোঁজ নিলাম। কিন্তু কেউ বলতে পারেন নি। নাম শুনে অনেকেই অবাক হয়েছেন। একটি মটর সাইকেলের দোকানের মালিক বললেন, দেখুন আমরা কমিশন এজেন্টস। শুধু মাত্র কমিশন নিয়ে কাজ করি।
লোক প্রশাসনের সিকিউরিটি গার্ড বললেন, অফিসটা বেইলী রোডে। সেখানে যাইনি। পরে এনটিভির বন্ধু শহীদ কমিশনের ল্যান্ড ফোনটা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। সেদিনই বিকেলের দিকে নিউ ন্যাশন সম্পাদক মজুমদার সাহেব কমিশনের চেয়ারম্যান ড: মিজানের সেলফোন জোগাড় করে দিয়েছিলেন। এসব করতে আমার দুদিন সময় লেগেছিল। ল্যান্ডফোনে কথা বলেছি চেয়ারম্যান সাহেবের পিএসের সাথে। তাঁকে অনুরোধ করলাম চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করে আমাকে জানাবার জন্যে। বুধবার সকালে পিএস সাহেবের কাছে অফিসের ঠিকানা জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, চেয়ারম্যানের সাথে তিনি তখনও কথা বলতে পারেন নি। আমি বললাম, ড: মিজানের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আসতে বলেছেন। পিএস সাহেব ঠিকানা বললেন, ধানমন্ডী ২৭ নম্বর রোডের মীনা বাজারের পিছনে লালমাটিয়া ডি ব্লকে মাঠের পাশে। বুধবার, মানে ১৪ জানুয়ারী বেলা বারটার দিকে আমি মীনা বাজারের পিছনে গেলাম এবং পিএস সাহেবকে ফোন করলাম। তিনি বললেন, ডি ব্লকের মাঠের পাশে। কমিশনের অফিস খুঁজে বের করতে আমার আরও এক ঘন্টা লেগে গেল। অফিসটা একটা ফ্ল্যাট বাড়িতে।
আবার একটু পিছনের কথায় ফিরে যাই। প্রেসক্লাবে যখন কমিশনের অফিসের কথা জানতে চাইলাম তখন বন্ধুরা হাসতে হাসতে বললো, ওখানে যেতে হলে মানব হতে হবে। আগে ভেবে দেখুন কমিশন কাদের মানব বলে গণ্য করে বা রাস্ট্র মানব বলতে কী বুঝায়। আমাদের রাস্ট্রের নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। মানে প্রজাদের দেশ। প্রজা শব্দের ইংরেজী মানে সাবজেক্ট। যেমন এক সময় আমরা বৃটিশ সাবজেক্ট ছিলাম। আমরা সাবডিউড ছিলাম। কারণ আমরা বৃটিশ কলোনীর প্রজা ছিলাম। অবাক ব্যাপার হলো রাষ্ট্র এখনও আমাদের গণপ্রজা মনে করে। অথচ আমরা নিজেদের বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক মনে করি। কারো প্রজা নই। রাজা থাকলে প্রজা থাকে। আবার রাষ্ট্র যদি নিজেকে রাজার উত্তরাধিকার মনে করে তাহলেও প্রজা থাকতে পারে। সারা পৃথিবীতে স্বাধীন দেশের অধিবাসীদের সেই দেশের নাগরিক বলা হয়। ইংরেজী সিটিজেন শব্দের অর্থ ফ্রি ম্যান। মানে মুক্ত মানব। মানব হচ্ছে তারাই যাদের রাষ্ট্র সম্মান করে, মানুষ হিসাবে তাদের সকল মৌলিক অধিকারকে মান্য করে ও সেই অধিকারকে সংরক্ষন করে।বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে প্রজার অর্থ করা হয়েছে জমিদারের রায়ত, ভাড়াটে বা রাষ্ট্রের অধিবাসী।
রিপাবলিক মানে একটি রাষ্ট্র বা সমাজ যেখানে সকল সদস্য সমান অধিকার ভোগ করে। ওই সদস্যরাই রাষ্ট্র চালাবার জন্যে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমাদের রাষ্ট্রের নাম হওয়া উচিত ছিল ' জনগনতান্ত্রিক বাংলাদেশ'। চলমান নামটি এসেছে তাড়াহুড়ো করে অথবা কলোনিয়াল হ্যাংওভার থেকে। আজ থেকে ৯০/১০০ বছর আগেও বড় বড় মহাজনদের গদির ম্যনেজারকে সরকার বলতো। মানে সরকার মহাজনের ব্যবসাটা দেখাশুনা করে। চট্টগ্রামে সওদাগরের ম্যানেজারকে মুন্সী বলা হতো। মুন্সী মানে শিক্ষিত লোক। শব্দটি ফারসী। যেমন কেরী সাহেবের মুন্সী। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের দাদার নামেও এক সময় মুন্সী লেখা হতো।পরে তিনি জমিদারী কিনে নিয়েছিলেন। বন্ধুরা তাঁকে আদর করে প্রিন্স বলে ডাকতেন। মোগল আমলে কাজীর আদালতের উকিলদের মুন্সী বলা হতো। তাই আধুনিক রাষ্ট্রের মালিক যদি জনগণ হয় তাহলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের সরকার মুন্সী বা ম্যানেজার। জনগণ যদি রাষ্ট্রের জমিদার হয়ে থাকে তাহলে সরকার তাদের নায়েব। বৃটিশ আমলে পূর্ব বাংলার জমিদারেরা বেশির ভাগই থাকতেন কোলকাতা শহরে। নায়েব এবং তার কাচারী জমিদারী দেখাশুনা করতো। এক সময়ে তারা খুবই অত্যাচারী হয়ে উঠেছিল। পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ নিয়ে প্রজাদের উপর অত্যাচার চালাতো খাজনা আদায়ের জন্যে। তাদের জেলে দিতো। ভিটে বাড়ি ছাড়া করতো।
তাদের যুবতী মেয়েদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে। তখন রাজা মহারাজা নবাব বাদশাহদের সাত খুন মাফ ছিল। খাজনা আদায়ের জন্যে তারা যা ইচ্ছা তা করতে পারতেন। দুয়েক জন মানব দরদী জমিদার/শাসক ছিলেন না যে তা নয়। তবে দরদী হওয়ার ব্যাপারে তাদের কোন আইনী বাধ্য বাধ্যকতা ছিল না। আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নায়েব হলেন সরকার। আধুনিক রাষ্ট্রেরও পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ আছে। যেমন সেনা বাহিনী, পুলিশ, আনসার রেব। ৪৭ সাল থেকে আমরা সেনা বাহিনীর আপন দেশ দখল করা বেশ কয়েক বার দেখেছি। অতি সাম্প্রতিক দেখেছি ১/১১র সরকার। তারা কেন এসেছিলেন আর কেনই বা চলে গেলেন তা আজও দেশবাসী জানে না। মাঝে দেশের অর্থনীতি প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা সারাদেশে হাজার হাজার গ্রামীণ হাট বাজার ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা দেশকে রাজনীতিমুক্ত করতে চেয়েছিল। দুর্ণীতির অভি্যোগে ধনীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা আদায় করেছে। অনেক জেনারেল এখন ধণীদের কোম্পানীতে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করছেন। এতো গেল সেনাবাহিনীর কথা। পুলিশ আনসার আর রেবের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ভূমিকা একটু লম্বা হয়ে গেছে বলে আমার মনে হচ্ছে। যা হোক, কমিশনের চেয়ারম্যান ড: মিজানের সাথে দেখা হয়েছে। বেশ অন্তরংগ পরিবেশে অনেক্ষণ কথা হয়েছে। অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তিনি নিজেই বললেন, কমিশনের অনেক আইনগত সীমাবদ্ধতা আছে। কোন বিষয়ে মামলা হয়ে গেলে কমিশন কিছু করতে পারবে না। মামলা হয়নি এমন বিষয়ে কমিশন সমঝোতা করিয়ে দিতে পারে। যেমন মনে করুন, ৫৪ ধারায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দিলে সেক্ষেত্রে কমিশন কিছু করতে পারে না। কমিশন যদি কোন বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন তখন ওই কর্তৃপক্ষ উত্তর দেয়, তদন্ত করে প্রতীয়মান হয়েছে যে এক্ষেত্রে মানবাধিকার ক্ষুন্ন হয়নি। এমতাবস্থায় কমিশনের অবস্থান ও মর্যাদা থানার ওসির নীচে নেমে যায়।
ড: মিজান বললেন, রাষ্ট্র যদি তার নাগরিক/প্রজাকে মানবের মর্যাদা দেয় অথবা রাষ্ট্রের চেয়ে নাগরিকের মর্যাদা বেশি মনে করে তাহলেই মানবাধিকার রক্ষিত হবে। তখন পুলিশ রেব আনসার নাগরিককে মানবের মর্যাদা দিতে বাধ্য হবে। আপনারা নিশ্চয়ই হরহামেশা রাস্তায় দেখে থাকেন ট্রাফিক পুলিশ রিকসাওয়ালাকে লাঠিপেটা করছে। কান ধরে উঠতে বসতে বাধ্য করছে। অথবা কিছু সেলামী নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। আপনি নাগরিক হিসাবে কিছুই করতে পারবেন না। কিছু বললে, পুলিশ ট্রাফিক আইন ভংগের মিথ্যা মামলা করবে। অথবা পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা দেবার মামলা করবে। পুলিশকে যদি ধমক দিয়ে কথা বলেন তাহলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়বে। কারণ মামলা সাজাবার জন্যে পুলিশ বলবে গায়ে হাত তুলেছে। এমতাবস্থায় পুলিশের গায়ে হাত তোলা মানে রাষ্ট্রের গায়ে হাত তোলা।
বৃটিশ আমলে গ্রামের লাল পাগড়ীওয়ালা হাফপ্যান্ট পরা চৌকিদার যেকোন লোকের কোমরে দড়ি দিয়ে ধরে থানায় নিয়ে আসতে পারতো। কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারতেনা। করলেই জেল জুলুম। কারণ গ্রামে চৌকিদার রাষ্ট্রের প্রতীক। এখন সে কাজটা করে পুলিশ সরাসরি। যেকোন সময় একজন সাব ইন্সপেক্টর ৫৪ ধারায় অথবা সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফিরা করার অভিযোগে যেকোন নাগরিক/প্রজাকে ধরে থানায় নিয়ে পিটাতে পারে। কারন পুলিশ রাষ্ট্রের সেবক। তার মর্যাদা নাগরিকের অনেক উপরে। নাগরিক তো এখনও প্রজা। সম্প্রতি উত্তরা এলাকার একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। শুনেছি এক ভদ্রলোক গাড়ি পার্ক করে খাবার দোকানে গিয়েছেন কিছু কিনতে। এমন সময় একটি মাইক্রোবাস এসে গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ক্ষতি করে। ড্রাইভার এসে প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে জানায় পার্কিংয়ের জায়গাটা রেবের। গাড়ির মালিক দোকান থেকে বেরিয়ে জটলা দেখে জানতে চাইলেন কী হয়েছে। তখন সাদা পোষাক পরা এক ভদ্রলোক ক্ষিপ্ত অবস্থায় বললেন, তোর কী প্রয়োজন। গাড়ির মালিক ভদ্রলোক, যিনি একজন সফ্টওয়ার ইন্জিনিয়ার বা প্রোগ্রামার বললেন, আপনি এমন অভদ্র ভাষায় কথা বলছেন কেন? সাদা পোষাক এবার ইন্জিনিয়ার সাহেবের জামা ধরে ধস্তাধস্তি করতে লাগলেন এবং বললেন, আমি কে এখনি তোকে দেখাচ্ছি।
সাদা পোষাকধারী ভদ্রলোক ফোন করে পোষাক পরিহিত রেবের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে আনলেন। তাঁরা এসে ইন্জিনিয়ার এবং তাঁর ড্রাইভারকে তুলে নিয়ে রেব একের ক্যাম্পে নিয়ে রেবের ক্ষমতা দেখালেন। ইন্জিনিয়ার সাহেব এবং তাঁর ড্রাইভারের মোবাইল ফোন আটক করলেন যাতে তাঁরা কোন যোগাযোগ করতে না পারেন। বিলম্ব দেখে এবং ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে তাঁর পরিবার থানায় ডায়েরী করেছেন। চারিদিকে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল ইন্জিনিয়ার সাহেব এবং তাঁর ড্রাইভার উত্তরা রেবের এক নম্বর ক্যাম্পে আছেন। কিন্তু রাত আটটা পর্যন্ত তাঁর আত্মীয় স্বজন কেউ তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন নি। রাত ন'টার দিকে তাঁদেরকে অসুস্থ ও রক্তাক্ত অবস্থায় উত্তরা থানায় হাজির করা হয়। অভিযোগ ছিল অভিযুক্তরা রেবের গায়ে হাত তুলেছে। ব্যাজ ছিঁড়ে ফেলেছে। আইনের দৃস্টিতে এটা মারাত্মক অপরাধ। কারণ এটা রাষ্ট্রের গায়ে হাত দেয়ার সামিল। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী একজন হাবিলদার স্বীকার করেছেন যে তাঁরা ইন্জিনিয়ার ভদ্রলোকের গাড়িতে ধাক্কা লাগিয়ে গাড়ির ক্ষতি করেছেন এবং ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছেন। গাড়ির মালিক তাতে রাজী না হয়ে রেবের উপর চড়াও হয়ে মারধর করেছেন।
থানায় নেয়ার পর তাদের চিকিত্সার জন্যে রাত বারটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। আপনারা বুঝতে পারছেন যে, ইউনিফর্ম মানে রাষ্ট্র এবং সার্বভৌম ক্ষমতা। ঘটনাটি উল্লেখ করলাম শুধু আপনাদের বুঝাবার জন্যে যে নাগরিকের মর্যাদা কতটুকু। গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে,গাড়ির ক্ষতি করে, গাড়ির মালিক ও ড্রাইভারকে নির্যাতন করে তাঁদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করে রেব। ইন্জিনিয়ার সাহেব ও তাঁর ড্রাইভারকে অসুস্থ অবস্থায় সারা রাত থানায় রাখার পর পুলিশ পরের দিন তাঁদের কোর্টে চালান দেয়। মামলা দুর্বল হওয়ায় তারা জামিন পান। কিন্তু মামলা চলবে। এই ঘটনা থেকে আপনারা সবাই শিক্ষা নিতে পারেন। নাগরিক হিসাবে আপনার কোন ক্ষমতা নেই। কারণ রাষ্ট্রের আইনী দৃস্টিতে আপনি মানব নন। কমিশন গঠিত হয়েছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে। ইউএনডিপি প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিবে। এর মানে হচ্ছে রাষ্ট্র জাতিসংঘ ও ইউএনডিপির কথা মতো চলবে। তাহলেই নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষা পাবে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিস্ঠা করা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিস্ঠার নিশ্চয়তা থাকবে। কমিশন মনে করে যে, বাংলাদেশ এমন একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে যেখানে সকল মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং মর্যাদা সুনিশ্চিত হবে। এই উদ্দেশ্যসমূ্হ বাস্তবায়নের জন্য মানবাধিকার কমিশন প্রতিস্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রীতি নীতি সনদে বাংলাদেশ একটি স্বাক্ষরকারী দেশ।' এই কথা শুনে আপনারা কি ভাবছেন জানি না। আমি ভাবছি, রাষ্ট্র জাতির কাছে কথাগুলো ওয়াদা করেছে কাগজে কলমে। যেমন আপনি কোথাও একটি চুক্তি করলেন। পরে তা মানলেন না। চুক্তির অন্যপক্ষ শক্তিশালী হলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবে। মামলা চলতে থাকবে। যার টাকা বেশি তিনি মামলা চালিয়ে যাবেন। যিনি দুর্বল তিনি কিছুদিন পর আর মামলা চালাতে পারবেন না। যেমন একজন ভাড়াটিয়াকে বাড়ির মালিক জোর করে উচ্ছেদ করলো। ভাড়াটয়া কী করবে? মামলা করবে। মামলা চলতে থাকবে। একজন সাংবাদিককে পত্রিকার মালিক বকেয়া না দিয়ে বা ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করে চাকুরীচ্যুত করলো।
সাংবাদিক বন্ধু কি করবেন? তিনি শ্রম আদালতে যাবেন। মামলা চলতে থাকবে। ততদিন সাংবাদিক বন্ধু কী বেকার থাকবেন?
যদি কেউ আপনাকে প্রশ্ন করেন রাষ্ট্র বড় না নাগরিক বড়? আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন এই ভেবে যে, এ আবার কী ধরণের প্রশ্ন? আমি মনে করি নাগরিক বড়। মানুষ বড়। মানুষ থাকলেই তো রাষ্ট্র থাকবে। ইতিহাসে নজর দিলে দেখবেন মানব জাতির বিকাশ কীভাবে হয়েছে। এক সময় রাষ্ট্র রাজ্য বা দেশ কিছুই ছিল না। জোর যার মুল্লুক তার। সবল দুর্বলকে শাসন করতো। আস্তে আস্তে সাধারন মানুষ বুঝতে পেরেছে, সংগঠিত হয়েছে। তখন থেকেই রিপাবলিকের ধারণা এসেছে। রাষ্ট্র কীভাবে চলবে তা নিয়ে সাধারণ মানুষ চিন্তা করলো। তারই ফসল হলো আজকের গণতন্ত্র ও নির্বাচন। কিন্তু গনতন্ত্র এখনও নিরাপদ নয়। যার কাছে শক্তি আছে সেই গনতন্ত্রকে দখল করে রাখে। যেমন ফিলিপাইনের সিভিল ডিক্টেটর মার্কোস। ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো। মিশরের বর্তমান ডিক্টেটর হোসনী মোবারক। চলমান বিশ্বে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রও আছে। এইসব মানুষকে ভয়ের মধ্যে রেখে, ভীতি সৃস্টি করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায়। বাংলাদেশের চলমান গনতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা কোন অবস্থায় আছে তা আশা করি পাঠক সমাজই বলবেন।
এরশাদ মজুমদার: প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক।