এবার বঙ্গবন্ধুর ৯৪তম জন্মবার্ষিকীর ভিন্ন প্রেক্ষিত রয়েছে মানুষের কাছে। গত ডিসেম্বরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে একজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর এই জন্মদিন ফিরে এলো। স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা অন্যরকম জন্মদিবস। আনন্দেরও বটে। আবার অনেক কিছু না পাবার ব্যথায় আহত হয়ে মন খারাপ করার দিনও হতে পারে। স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তান হতে পেরে যেমন আমার মন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে তেমনি মন খারাপ হয় নানা কারণে।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের পরিচয় কম। রাষ্ট্র নাগরিকের সাথে কী আচরণ করবে সে ধারণা আমরা পাইনি। ভুলভালের ভিতর দিয়ে অনুশীলনের কাজ শুরু হয়েছে একেবারেই অল্পদিন। নাগরিকের দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা কতটুকু শিক্ষা পেয়েছি বুঝেই উঠতে পারলাম না। বাংলাদেশ আজও শত্রুবেষ্টিত, একদিনের জন্যও কখনো শত্রুমুক্ত হতে পারব কিনা জানি না। এ বাংলার মাটিতেই তো আমাদের নাড়ি পুঁতে রাখা হয়েছে। সে মাটি যখন আক্রমণের শিকার হয় তখন আমরা তা ঠেকাতে একজোট হতে ব্যর্থ হচ্ছি।
নির্ভীক অনেক সাংবাদিক, শুধুমাত্র পেশাদায়িত্ব পালনের কারণেই তাদেরকে খুন হতে হয়েছে।সাংবাদিক সাগর-রুনীর হত্যাকান্ডের ঘটনা রহস্যই থেকে যাবে কিনা। সকল সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা রাষ্ট্রের স্বার্থেই প্রয়োজন। হিংস্র সমাজ প্রতিষ্ঠায় যে বা যারাই উদ্ধত, তাদেরকে বাগে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কথা বাদ দিলে অন্য যে কোন দাবী আদায়ের আন্দোলনও মুহূর্তেই সহিংসতার রুপ পাচ্ছে, কেন? এগুলোর নির্ভেজাল সমাধান কি আছে?
একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশকে স্বাধীন বিচার বিভাগ কীভাবে দুর্নীতিমুক্ত করতে এগিয়ে আসতে পারে সেই প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় এসেছে। যে কোন বিচার হোক না কেন, তা যেন প্রলম্বিত না হয় এতটুকু আকাঙ্খা পোষণ করার অধিকার নিশ্চয় আমাদের আছে। সকল প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে সর্বোচ্চ আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার, মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার সম্পন্ন করার ফলে কিছুটা কলঙ্কমোচন তো হয়েছে। তবু অনেক পথ পাড়ি দেয়ার বাকি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সকলের দন্ড কার্যকর করা যায়নি এখনও, যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্য এখনও চলমান। জনগণের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনেক বাকি।
শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাস নিপাত যাবে কবে সেটা না জানলেও নিপাত তো ঘটাতেই হবে। শিক্ষায় ধীরে ধীরে যে সংস্কার চলছে তা সফল করতে এগিয়ে আসার প্রয়োজন দরদী অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে। বাংলদেশের প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর ভাষা, সাহিত্যের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সংখ্যায় অল্প যে সকল জাতিগোষ্ঠী, তারা আদিবাসি নাকি আদিবাসি না সে ব্যাপারে আমার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। আদিবাসি যদি তারা হয়েই থাকে, অবশ্যই তাদের অধিকার সংবিধানে প্রতিষ্ঠা করা হোক। আর যদি আদিবাসি না হয়ে থাকে তবে 'আদিবাসি' বলা বন্ধ হোক, 'উপজাতি' বলাও বন্ধ হোক। শুধু বুঝি মানুষ হিসেবে আমার যে অধিকার রয়েছে তাদেরকেও সেই অধিকার পেতে হবে, দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্য সংবিধানে ২৩(ক) নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত হয়েছে।
মাত্রায় কম হলেও 'বিচার-বহির্ভূত' হত্যাকান্ড সমস্যার সমাধান এখনো হচ্ছে না। এ সকল ঘটনায় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে নিখুঁত জবাবদিহিতা অবশ্যই জরুরী। সীমান্ত হত্যাকান্ডকে হেলাফেলা করে দেখার সুযোগ নেই। এসকল হত্যাকান্ডের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় দেখার আগ্রহ অন্যায় কিছু নয়।
স্হানীয় সরকার ব্যবস্হাকে আমরা যেন অবহেলা না করি। স্হানীয় সরকারের সফল অভিজ্ঞতায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ মজবুত হয় আমরা যেন সেটা মনে রাখি। আছে সুশাসনের প্রশ্ন। জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়। শুনতে পাচ্ছি জামায়াত সংক্রান্ত তদন্ত শেষ পর্যায়ে। এরপর তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হবে। অপেক্ষার প্রহর নাকি দীর্ঘ হয়। তবে আমি আশাহত হতে চাই না।
এখন নদ-নদীর যে বিবর্ণ চেহারা তা আমি দেখতে চাই না। বেশি পূর্বেকার নদী আমার দরকার নেই। আমার বাপ-দাদার আমলের নদী পেলেই আমার চলবে, যে নদীতে ভরা জোছনা নেমে আসতো। পাল তোলা নৌকার বহর চলা নদী,আমার গাঙ। গাছ-গাছালির বাংলাদেশ চাই। বন উজাড় হওয়া বাংলাদেশ না।গাছখেকো সন্ত্রাসীর বাংলাদেশ যেন না হয় আমার জন্মভূমি। তবে উন্নয়নের স্বার্থে, প্রগতির স্বার্থে বিবেচনা ছাড় পেতে পারে নিশ্চয়। আমার চাওয়ার পরিমাণ খুউব সামান্য।
যতদুর শুনেছি ৩৮ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ এখনো পৌঁছায়নি। কয়লা নিয়ে সমস্যা, গ্যাস নিয়ে সমস্যা মিটবে তো! নাকি পশ্চিমাদের কাছে যাবে অথবা পাশের সাদা চামড়ার দেশকে দিতে হবে এই দ্বিধাদ্বন্দ্বেই থাকব। আদার ব্যাপারি বুঝি না সবকিছু।
তবুও অন্তরে যে স্বপ্নের বাংলাদেশ আঁকি তাকে নিশ্চয়ই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কিছু নেই।
বঙ্গবন্ধু তোমাকে পেয়েছি বলেই তো বাংলাদেশ পেয়েছি।