আমার কিছু স্বপ্ন আছে যা একেবারেই সাধারণ। এই সাদামাটা স্বপ্নগুলোর বাস্তব রূপ দেখতে বড্ড উদগ্রীব আমি। এর একটি হলো সবুজ নগর, সবুজ বাংলাদেশ; দুষণমুক্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ। প্রাচুর্যভরা স্বপ্ন আমার দেখা হয়ে ওঠেনা সাধারণত। স্বপ্নের বাংলাদেশের চিত্র মানসপটে আঁকতে তো আর পয়সা লাগে না। তাই আঁকাজোঁকার কাজটা ভালই চালিয়ে নিই। আমার স্বপ্ন যে ব্যর্থ হয় না তা কিন্তু না। তবে কাঁচের মতো না। ভেঙেচুরে খানখান হয় না। স্বপ্নকে টুকরো টুকরো হতে দিই না। তাহলে যে পুরোটাই নষ্টদের দখলে চলে যাবে। এদের থেকে নদী-পুকুর, খাল-বিল, ডোবা-নালা, বৃক্ষও তো বাদ যায়নি।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারাও নিজেদের বসতভিটের আশপাশের গাছগুলোকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দিচ্ছি না। আমরা মানুষেরা কেউ কেউ তো সঙ্কট থেকে বেরোনোর উপায় খুঁজে চলেছি আবার আমাদেরই কেউ এই জগৎটাকে সঙ্কটাপন্ন করে তুলছে। এমন আশার কথাও শুনেছি- গাছ লাগাতে লাগাতে কখন যে বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে, সে মানুষটি ঠিকই পায়নি। সাক্ষর-নিরক্ষর, ধনী-নির্ধন সকল মানুষ যে একেবারেই গাছপ্রেমী না তা কিন্তু না। গাছপ্রেমী আছে বলেই সড়কপথ রেলপথের দু‘পাশে মাইলের পর মাইল সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। অবশ্য এটুকুতেই যথেষ্ট ভাবা যাবে না। বিশ বছর আগে বাড়ির উঠোনে লাগানো গাছটি বিশেষ প্রয়োজনে বিক্রি করা কষ্টের, কিন্তু দোষের হবে এমনটা আমার মনে হয় না। তবে হারানো প্রিয় বন্ধুর স্মরণে নতুন আরো অনেক বন্ধুকে আমরা সবাই কাছে রাখতে পারি পরিকল্পনা মতো বৃক্ষ রোপণ করে।
আবাসন শিল্পমালিকেরা আপনারা না হয় নিরীহ গোবেচারা জলবিরানি খাওয়া চাষাভুষোদের চোখের পানি নাকের পানি এক করে দিয়ে তাদের জমিজিরেত নিজের করে নিচ্ছেন, তা নেন। বাংলাদেশে আমার মতো যারা ভদ্দরলোক তারা এসবই চায়। চাই বলেই তো আপনারা টিকে থাকেন। আমরা যারা যাপিত জীবনে সুখের ঠিকানা খুঁজে পাইনি তারা ঐ কান্নাভেজা মাটি কিনব,স্বপ্নসুখ খুঁজব এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দোহাই আপনাদের কাছে আমাদের মতো সুখ খুঁজে ফেরা স্বাপ্নিকদের জন্য এমন শহর গড়ে দিন যাতে আমরা বুক চওড়া করে নিঃশ্বাস নিতে পারি এমন সবুজ শহর গড়ে দিন। জলাশয় থাকুক সেই শহরে। সেই শহরের ড্রেনের পানি যেন প্রবহমান থাকে। যদিও জলাশয় রক্ষা করতে না আবার তৈরি করতেও না, জলাশয় ভরাট করতে আপনারা বেশি উদ্যোমী।
কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো উতরাতে আমাদেরকে যাচ্ছেতাই রকম হিমশিম খেতে হয়। কোনো কিছু থেকে সহজে পার পাওয়া যেন বাঙালির ধাতে সয় না। বুড়িগঙ্গা ও অন্যান্য নদীর কালচে বর্ণের পানি আমাদের সভ্যতাকেই যেন কালচে মলিন করে দিয়েছে। নিউইয়র্ক শহরের হাডসন নদী নাকি নয়নাভিরাম নদীগুলোর অন্যতম। সভ্যতার উৎকর্ষতার চিহ্ন এসকল নদীর চেহারায় যদি থাকে তাহলে ঐ নদীর কাছে গিয়ে আমরা শিক্ষা নিয়ে আসলেই তো পারি। হাজারিবাগ ট্যানারি বুড়িগঙ্গার পানিকে কুৎসিত কদাকার করে ছেড়েছে। হাজারিবাগ ট্যানারি স্হানান্তর করতে আর কত সময়ের প্রয়োজন? ট্যানারি শিল্পমালিকরা নিশ্চয় রোজ কিয়ামত পর্যন্ত গড়িমসি করতে পারে না। সরকার সমাধান করতে চাইলে পারে।সরকারকে পারতে হবে।
এদেশের নদীগুলো অবৈধ দখলের শিকার হতে হতে এখন বেহাল চেহারা নিয়ে কোনরকমে টিকে আছে। অনেক নদীকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ঠগবাজরাই দখলে নামে না। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীর বুকে নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের একের পর এক বাঁধ দিয়ে বিশাল পুকুর তৈরি করে মাছ চাষের বন্দোবস্ত দেখলে হতবাক হতে হয়। পরিবেশ সমস্যায় বাংলাদেশের অবস্হা নাকানি চুবানি খাওয়ার মতো দশা। কয়েক দশক ধরে নদী-জলাশয় দখল-ভরাট-দূষণ থেমে থাকেনি। আন্তর্জাতিক নদীর ‘পানি ব্যবস্হাপনা‘র সুরাহা নেই। পানি নিয়ে বাংলাদেশের বঞ্চনার ইতিহাস অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে।
বুড়িগঙ্গা শীতলক্ষ্যাসহ সকল নদীর প্রাণ ফিরে পেতে, প্রতিবছর নদী ভাঙনের শিকার সকল মানুষের পুনর্বাসনে সহায়তা করতে সর্বনাশা তামাশা খেলার প্রচলিত রীতির অবসান যতদিন না হবে ততদিন পরিবেশ যেমন প্রাণ ফিরে পাবে না তেমনি পুনর্বাসন যে মানুষের ‘অধিকার‘ তাও প্রতিষ্ঠা পাবে না।
যহরত বলেছেনঃ
দুই হাজার শিশুর বৃক্ষ আলিঙ্গন
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
সম্ভবত প্রায় ১০০ বছর আগে বৃক্ষ আলিঙ্গনের এক সবুজ ইতিহাস রচিত হয়ছিল। নাম ছিল চিপকো আন্দোলন। ভারতে, আদীবাসিরা এগিয়ে এসেছিল গাছ কাটা রোধে … মোটা মোটা গাছ একজোট হয়ে জড়িয়ে ধরেছিল তারা। আমাদেরও এভাব্ই নামতে হবে আন্দোলনে।
যহরত বলেছেনঃ
একেবারে ঠিক বলেছেন । ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা। যা বলা দরকার, কয়েকজন ছাড়া চেনা মানুষগুলোর খোঁজই নেই। আমরা কি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম ?
এলডোরাডো বলেছেনঃ
ব্লগে ছবি যোগ করার সমাধান দিতে গিয়ে বেগাড় খাটাতে চেয়েছিলেন। পারেন নি। এবার বিনে পয়সায় সবুজ বাংলাদেশের জন্য সাদাকালো স্বপ্ন দেখানোর নামে কি সেই একই বেগাড় খাটাতে চাচ্ছেন?
😀
সবুজ বাংলাদেশের জন্য আছি। রংগিন স্বপ্নের জন্য ও আছি কিন্তু সাদা কালো স্বপ্নের জন্য নেই। 💡
সত্যি অযথা বেগাড় খাটতে পারবো না ।
ভাল থাকুন।
যহরত বলেছেনঃ
রঙিন এর চেয়ে সাদাকালো আমার কাছে বেশি মোহময়! হা হা হা……..
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকুন। শুভকামনা।