অবহেলায় আলমডাঙ্গার শহীদ সমাধি প্রাঙ্গণ

হাসিবুল হক
Published : 19 Sept 2020, 02:00 PM
Updated : 19 Sept 2020, 02:00 PM

আলমডাঙ্গার ঐতিহাসিক স্হানগুলো সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের জন্য কয়েকদিন আগে উপজেলা পরিষদে আলোচনা সভা হয়েছে বলে জানতে  পেরেছি।মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর এবং বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, শহীদ সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন হবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই। এটা আলমডাঙ্গার জনগণের জন্য নিশ্চয়ই আনন্দের সংবাদ।

কিন্তু  জাদুঘর নির্মাণের জন্য আলমডাঙ্গার কোন জায়গা বেছে নেওয়া হবে?

অনেকদিনের অবহেলিত শহীদ সমাধিস্হল চলমান প্রকল্প না কি প্রস্তাবিত প্রকল্পের অধীনে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে?

মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের জন্য কাঙ্খিত জায়গা কিন্তু বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত-হতশ্রী অবস্হায় পড়ে আছে আলমডাঙ্গার মানুষের চোখের সামনেই। নতুন জায়গা খুঁজে দেখার প্রয়োজন বোধহয় নেই।

শহীদ সমাধি ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের মাঝখানের জায়গায় হতে পারে স্মৃতি জাদুঘর, শহীদ স্মৃতি পাঠাগার ও মুক্তিযোদ্ধা নামফলক স্তম্ভ এবং মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ যা বিশেষ প্রয়োজনে অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।

লালব্রিজ বধ্যভূমিকে উদ্ধার ও সংরক্ষণ করা হলেও কালিদাসপুর বধ্যভূমি এখনো সংরক্ষণ করা হয়নি। শহীদ জামসেদ নুরী টগরের মৃতদেহ যেখানে মাটি চাপা দেওয়া হয় সেখানে ছোট আকারে নামফলক স্হাপন করে যুদ্ধরত অবস্হায় প্রাণ দেওয়া এবং আলমডাঙ্গার প্রধান সড়কে তার মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা নিয়ে কোনো সংক্ষিপ্ত বিবরণী আজ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়নি।

এই এলাকার মানুষ মনে করে, বহু বছর আগে এই ক্যাম্পাসে জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল অফিস এমন উদ্দেশ্য নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে শহীদ সমাধিকে আড়াল করে ফেলা যায়।

সমাধিকে পেছনে ফেলে অনেক বছর আগের বসানো বিলবোর্ড জায়গাটিকে একেবারে আড়াল করে দিয়েছে। এখানে শৌচাগারও নির্মাণ করা হয়েছে। এই ক্যাম্পাস দেখলে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই যে এখানে শহীদ যোদ্ধাদের সমাধি রয়েছে; মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন রয়েছে।

এই জনস্বাস্হ্য প্রকৌশল ভবন ও উন্মুক্ত শৌচাগারসহ অন্যান্য অপরিকল্পিত অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলা খুবই জরুরি। নবনির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পেছন দিকের প্রাচীর সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলে নতুন জাদুঘর, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ, মুক্তিযোদ্ধা নামফলক স্তম্ভ ও শহীদ সমাধিস্হলকে একীভূত করে ফেলা যেতে পারে। কমপ্লেক্স ভবনের ভেতরের পরিত্যক্ত পুরো দালানে 'শহীদ স্মৃতি পাঠাগার' গড়ে তোলা যায়। মোটা দাগে পুরো ক্যাম্পাসই হয়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের বলয়। আর এই বলয়ে শহীদ স্মৃতি পাঠাগার থাকতেই হবে; এর কোনো বিকল্প নেই।

আমার মতে, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পূর্ব দিকের উঁচু প্রাচীর উচ্চতায় অর্ধেক ভেঙে ভবনের সামনের দিকের প্রাচীরের আদলে সমাধিস্হল পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে। এর মাঝে
প্রবেশ পথ থাকবে এবং প্রবেশ পথের সংখ্যা কয়েকটি বাড়ানো যেতে পারে।

নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের দিক থেকে সমাধিস্হলের এবং ডাকবাংলোর দিক থেকেও সৌন্দর্যের সমন্বয় করতে হবে যাতে পুরো এলাকায় মুগ্ধতার পরিবেশ বিরাজ করে
এবং পরিবেশসম্মত হয়।  আর এই প্রকল্পের কাজ অবশ্যই কোনো গাছ না কেটে শেষ করার  পরিকল্পনা করতে হবে।

বেশি খরচ করে কোনো স্হাপনা নির্মাণ করলেই তা সুন্দর ও শক্তপোক্ত হয় না। তাই এটাও ভাবতে হবে, ঐতিহাসিক স্হান সংরক্ষণে করা স্থাপনা ও স্থাপত্য হতে হবে অবশ্যই পরিশীলিত ও নান্দনিক।

শুধু আলমডাঙ্গাতেই যে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মিত হবে এমন নয়; সারা বাংলাদেশেই পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হবে এই জাদুঘর। তাই নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশাসনের উচিৎ  বীর মুক্তিযোদ্ধা নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয়দের সাথে এলাকার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সুষ্ঠু সংরক্ষণের জন্য  আলোচনায় বসা।