রমযান বিষয়ক কূটকচাল

হাসিবুল হক
Published : 1 August 2011, 02:48 PM
Updated : 1 August 2011, 02:48 PM

চন্দ্রমাসের হিসেব গণনায় ধরলে সাবান মাস পেরিয়ে এই মুহূর্তে আমরা রমযান মাসে অবস্হান করছি । সারা বছর যারা ভাত পায়না অর্থাৎ এক আধবেলা প্রতিদিনই রোযা থাকে তাদের কাছে এ মাসের কতখানি কদর আছে জানিনা । তবে কেউ না কেউ তো অবশ্যই রমযানকে কদর করেন । তা না হলে অন্য মাসের তুলনায় রমযানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের দাম কেন এতো বাড়ে । রমযানে ভাল কাজ করলে সাধারণ জনগণের সওয়াবের পরিমাণ যেমন বেড়ে যায় , উনারাও চড়া দামে মাল বিক্রি করে এই লাভের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে নেন আর কি ! আপনি সারাটা মাস পূণ্য কামিয়ে লাভ করবেন আর বেচারি মুনাফাখোররা এই প্রচন্ড গরমে তাপানুকূল ঘরে শুয়ে বসে একটু আধটু লাভের চেহারা দেখবে না তা কি করে হয় ?

রমযান মাস কারো কারো কাছে পরিকল্পনা তৈরির মাস । এই যেমন হাওয়া পরিবর্তনের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে থাইল্যান্ডের পাতায়া , ইন্দোনেশিয়ার বালি , আর না হয় মরিশাস , মালয়শিয়া , দুবাই অথবা অন্য কোন দূরদেশে । এই মাসে কারো পুরো বাড়ির জানালা দরজার পর্দা বদলাতে হয় । ছ'মাস যে হয়ে গেছে । কারো আবার দেয়ালের বৈচিত্র্য পাল্টানো খুবই দরকার । বড্ড একঘেয়ে লাগে যে । সামনে ঈদ , পুরনো মেহমান যারা আসবে তাদের সামনে লজ্জায় পড়ে যেতে হবে ।

বছর না ঘুরতেই সোফা বদলে ফেলা রুচিবান মানুষের অভাব নেই এখন । আর সেটা হবেই যখন রোযার মাসেই হোক । ক'দিন বাদেই তো ঈদ । যারা সমাজের খুউব উঁচুতে থাকেন তাদের অধিকাংশের আত্মীয় স্বজন এবং গৃহকর্মীদের জন্য ঈদ গিফট কেনা সারা। ওগুলো রোযার আগে না কিনলে রোযার মাসে বেশী দামে কিনতে হবে তাই । রোযার মাসে নিজেদের জন্য বড্ড বেশী দামে এবং
এক্সক্লুসিভ ! চমৎকার খেজুর কেজি প্রতি ৬০ টাকা (গত বছর) তে পাওয়া যায় কিন্তু ৪০০ টাকা কেজির খেজুর না খেলে মান থাকে না। নাকি ঐ খেজুর খেলে পূণ্য বেশী !

রাজনৈতিক ইফতার সংস্কৃতিতে আরেকটি বিষয় হলো এতিম বাচ্চাদের ইফতার খাওয়ানো । পাঁচ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে এসব স্নেহের এতিম বাচ্চাদের ব্যথাহত চেহারা । কেন এদের সাথে যুক্ত হয়না ফুটপাতের অনেক রোযাদার , যারা সাহরি না খেতে পেয়েও রোযা পালন করে ।

নিবন্ধের কলেবর বেশী বাড়াতে চাই না । শুধু এতটুকু জানি , আল্লাহপাক রাব্বুল মুসলেমিন নন । তিনি রাব্বুল আলামিন । তিনি শুধুই ধনীদের নন ,শুধুই মুসলমানদের নন । সকল সৃষ্টিকুলের রব তিনি । রোযার মাস ছাড়াও যেসকল মানুষ না খেতে পেয়ে উপোস থাকে , হোক না সে হিন্দু , বৌদ্ধ অথবা অন্য কোন ধর্মের । না পালন করুক কোনো ধর্মাচার । মহান সৃষ্টিকর্তা তো তাকে মানুষ স্বীকৃতি
দিয়েই এ জগতে পাঠিয়েছেন । তারও তো খাবার লাগে । কাপড় লাগে । চিকিৎসা লাগে । ওষুধ লাগে । আমার আর আপনার যেটা লাগে তার জন্য কোনো একটাও কি কম লাগার সুযোগ রয়েছে ! আমার আর আপনার দরজায় কড়া নেড়ে নিজেকে ছোট করে যারা হাত পেতে দেই তাদের হাত পাতার আগেই আমি আপনি অল্প সাধ্যের মধ্যেও থেকে খুব সামান্য কিছু করলে কম কিসে ! আমাদের সকলের বাড়িতে যেসকল ছোট্ট গৃহকর্মী আছে তাদের পাতে ইফতারির পরিমাণটা যেন আমাদের ছোট্ট ভাইবোন ও সন্তানদের মতোই হয় , এটা যেন আমরা কেউই ভুলে না যায় । আমরা যেন ভুলে না যায় ওই গৃহকর্মীকে বরফশীতল সরবত এর গ্লাসটি দিতে । কোনো সন্দেহ নেই , অনেকেই সে চেষ্টা করে থাকেন । করে চলেছেন ।

যাই হোক , এই রমযান মাস থেকে আমরা সকলেই যেন শুদ্ধাচারি হয়ে উঠতে পারি এতটুকুই প্রার্থনা মহান রবের কাছে । আরো প্রার্থনা সারাবিশ্বের সকল নির্যাতিত, নিগৃহীত , অনাহারি , চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষ তাদের অধিকার মর্যাদার সাথে ফিরে পাক । কূটচাল

শুভকামনা সৃষ্টিজগতের সকল সৃষ্টিকুলের প্রতি ।