নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে

হাসিবুল হক
Published : 16 March 2012, 04:08 PM
Updated : 16 March 2012, 04:08 PM

নদীরক্ষা আন্দোলনে বাংলাদেশের জনগণ খুব ধীরে সম্পৃক্ত হচ্ছে । জনগণের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত । তবুও এ আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি অনেক গভীর এবং সুদৃঢ় । আমার ধারণা হয়েছে এ দেশের জনগণের মনমানসিকতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যে ধরন তাতে এ আন্দোলন দীর্ঘ সময় চালিয়ে যেতে হবে । কোনও ক্ষেত্রে যদি কাঙ্খিত সফলতা এসে যায় আর ভেবে নেয়া হয় আন্দোলনের প্রয়োজন নেই তাহলে ভুল হবে । কারণ শুধুমাত্র ঢাকা এবং এর আশপাশের নদী নিয়ে ভাবলে চলবে না । সারা বাংলাদেশের নদ-নদীই জবরদখলের শিকার, একথা মনে রাখতে হবে ।

ঢাকার আশপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদীগুলো যেমন জবরদখল, অবৈধ স্থাপনা আর অবিরাম দূষণের শিকার তেমনিভাবে যারা স্বার্থপর মানুষ তারা বাংলাদেশ জুড়েই নদী, খাল সবকিছু নিজের দখলে নিয়েছে । নিচ্ছে । জনস্বার্থ এভাবে বিপন্ন হয়েছে যুগ যুগ ধরে । দায়িত্ব এবং কর্তব্যে অবহেলা করেছে সরকার প্রশাসন সকলে । সাধারণ মানুষের সাধ্য নেই এসকল জনস্বার্থবিরোধী অপকর্মের প্রতিবাদ করার । সরকার এবং প্রশাসন শুধু দায়িত্বেই অবহেলা করেনি যোগসাজশ করেছে দুর্বৃত্তদের সাথে । আর দুর্বৃত্তরা সবসময় Permanent Government Party করে ।

নদ-নদীগুলো এদেশের মানুষকে লালন করে চলেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে । দেশের মানুষও বেঁচে থাকে নদীকে ধারণ করে । নদীগুলোকে কেবল স্বার্থপরদের কবল থেকে মুক্তি দিলেই শেষ হবে না । একে রক্ষা করতে হবে প্রতিবেশি দেশগুলোর কবল থেকেও । তাদের একতরফা বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ থেকে । বন্ধু প্রতিবেশী হয়ে ভারত স্বার্থপরের মতো আচরণ করতে পারে না । নদী নিয়ে কেন পলিটিক্স । নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সকল উদ্দেশ্য প্রণোদিতের বাইরে । দেশের স্বার্থরক্ষা সরকার যেমন করবে, সকল নাগরিকের দায়িত্বও রয়েছে কমবেশি ।

নদী আজ বিপদে পড়েছে শুধুই অবৈধ দখলের জন্যে না । নদী সঙ্কটে পড়েছে রাসায়নিক বর্জ্য গ্রহনের কারণেও । নদীর পানি রাসায়নিক বর্জ্য খেয়ে হয় বিষাক্ত । সেই বিষযুক্ত পানি পান করে মানুষসহ সৃষ্টিকুলের সকল প্রাণী । প্রতিনিয়ত সেই পানি খেয়ে মানুষের রক্তও হচ্ছে বিষাক্ত । এ বিষাক্ত রক্ত থেকে জন্ম নেবে পঙ্গু উত্তরাধিকার । এ হতে দেয়া যায় না ।

নদী আর মাটি আমাদের সম্পদ । এগুলোর বেপরোয়া দখল আর দূষণ রুখতেই হবে । অবশ্য উচ্চ আদালতের রুল সরকারকে তৎপর হতে সাহায্য করেছে । এ তৎপরতা থিতিয়ে গেলে বিপদ আবারো গ্রাস করবে । তৎপরতা যদি স্বাভাবিকও থাকে তবুও এসকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার কর্মসূচি অনেকদিন চালু রাখতে হবে । কারণ এধরনের স্থাপনার সংখ্যা বিস্তর । এসব কর্মসূচি উদ্দেশ্যমূলক বন্ধ করলে যেমন বিপদ তেমনি উৎসাহে ভাটা পড়লেও বিপদ।

সরকারকে নদ-নদী এবং জলাশয় রক্ষার জন্য বিবেকবান, সৎ এবং দক্ষ মানুষ নিয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে । তাঁরা নদী জলাশয় রক্ষার কাজই করবে । রুদ্ধ বিবেক দিয়ে জলাশয় রক্ষার কাজ হবে না ।