গলির মুখে যেতেই কিছু লোক রিক্শার গতিরোধ করলো। আমি ভদ্র ছেলে। কারো সঙ্গে ঝগড়া করি না। হঠাৎ দেখি এক পুলিশ সদস্য তেড়ে আসছেন! তাঁর দ্রুত এগিয়ে আসাটা সন্দেহজনক মনে হলো।
পুলিশ ভাই এসে জানালেন- এই রিক্শার গতি সন্দেহজনক।
আমি বলি- পুলিশ ভাইয়া, আপনি রিক্শা বিশেষজ্ঞ নাকি! রিক্শার গতি নয়, আপনার ভাবসাবই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে।
এই কথা শুনে তাঁর চান্দু গরম! চোখ ত্যাড়া করে তাকালেন আমার দিকে। কিছু বলতে যাবেন, অমনি আমিই তাঁকে বলে ফেলি-
– পুলিশ ভাইয়া, আপনার চোখের অ্যাকশন অবৈধ। শিগগিরই চেন্নাই গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসেন…
আমার কথা শুনে পুলিশ ভাই অজ্ঞান!
যাক। তাঁর অ্যাকশনে আমি যতই সন্দেহ খুঁজি, তিনি কিন্তু রিক্শাটি আটকালেনই। অগত্যা ঝগড়া না পাকিয়ে আমি হাঁটতে শুরু করি।
হাঁটছি আর ভাবছি। রাতে খুব বৃষ্টি হয়েছিলো। হঠাৎ বৃষ্টি। জানালার পর্দাটা সরিয়ে বৃষ্টিটা উপভোগ করি। বৃষ্টি হচ্ছে ঠিক আছে, তবে আগে থেকে সতর্কবার্তা ছিলো না! থাকবে কেমনে? থাকলে কি আর 'হঠাৎ বৃষ্টি' হয়!
তো বৃষ্টি উপভোগ করতে গিয়ে একপর্যায়ে দেখি আকাশটা চমকে উঠছে শুধু। শান্তাকে ডেকে বলি- এই বেরসিক বিজলী এত চমকায় কেন? বৃষ্টি তো দারুণ উপভোগ্য ছিলো।
শান্তা বলে- আরে তুমি বোঝো না? এটা বিজলীর অবৈধ অ্যাকশন!
আমি থ! এ কী বলে পাগলীটা?
হাঁটতে গিয়ে রাতের কথাটি কেন মনে পড়লো জানেন? বাসা থেকে বেরোনোর পরই শুনি যে আইসিসি আমাদের দুই বোলার তাসকিন এবং সানির বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা করেছে। ভাবছি, আইসিসির কর্তারা সেই রাত্রিকালীন বিজলীর অবৈধ অ্যাকশন থেকে অনুপ্রাণিত হলেন না তো!
সে যাই হোক। বোলিং যেহেতু অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, সেখানে তো আর যুদ্ধ করা যাবে না। এমনিতেই এক একাত্তরই আমাদের ত্রিশ লাখ কেড়ে নিয়েছে।
আরেকটু হাঁটার পর মোবাইলটাও অবৈধ অ্যাকশনের মতো বাজতে শুরু করলো। অ্যাকশন যতই অবৈধ হোক, কলটা ছিল বৈধ। প্রেমিকার ফোন।
রিসিভ করতেই ওপার থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠ। আমি রীতিমতো কাঁপছি। আবার কী হলো! আমি নিজেই কোনো অবৈধ অ্যাকশনে ফেঁসে যাইনি তো?
– তোমাকে না বলেছি, আমার ফোনে ব্যালেন্স বেশি থাকে না? কল রিসিভ করলে কেন? তাড়াতাড়ি ফোন দাও…
আমার আর কিছু বলার সুযোগ নাই। কেন ফোন করলো সেটাও জানা গেলো না। একান্ত বাধ্যগত প্রেমিকের মতো ফিরতি কল করলাম।
এবার তিনি বেশ শান্তশিষ্ট ভদ্র মেয়ের মতো সুরেলা কণ্ঠে বললেন- ও গো, আমার ফোনে কিছু টাকা দাও তো…
ওর ফোনে টাকা রিচার্জের জন্য পাশের একটি দোকানে গেলাম। এ কী! পাশে এক সুন্দরী তরুণী! আমাকে দেখে প্রথমে নিজের খোলা চুলে আলতো করে বুলিয়ে দিলো। বাকি সব ঠিকঠাক আছে কি না সেটাও দেখে নিলো।
রিচার্জের জন্য দোকানদারকে নাম্বারটা বললাম। দোকানি তার খাতায় সেটা লিখলেন। হঠাৎ দেখি পাশের তরুণী নাম্বারটি নিজের মোবাইলে তুলে নিচ্ছে…
কী করি, কী করি? কিছুই তো বুঝে উঠতে পারছি না। এই ঘটনা যদি প্রেমিকা টের পেয়ে যায়? বুকে বল নিয়ে সাহস করে ওকে বলে ফেললাম-
– এই মেয়ে, তোমার সাহস তো কম না…
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি ব্যাগের ভেতরে মোবাইল ঢুকিয়ে ফেলল। আর মায়াবী কণ্ঠে বলে- কী হয়েছে ভাইয়া? আমি কোনো দোষ করেছি?
আমি বলি- না, তুমি তেমন কোনো দোষ করোনি। তবে নাম্বারটা যে মোবাইলে তুলে নিলে, সেটা বেশ সন্দেহজনক। আর, তোমার কথা বলা এবং তাকানোর ভঙ্গি বৈধ মনে হচ্ছে না। তোমার তাকানোর অ্যাকশন অবৈধ!
কথা বাড়িয়ে লাভ কী? মেয়ে মানুষ তো। বেশি চিল্লাচিল্লি করতে গেলে উল্টা লোকজন জোগাড় হবে। তখন হয়তো গণেশ উল্টেও যেতে পারে। দ্রুত কেটে পড়ি।
আবার হাঁটি। আর মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে মনে মনে বলি- নাম্বার নিয়েছিস ভালো কথা। এবার যা, আমার প্রেমিকার সঙ্গে জমিয়ে প্রেম কর গিয়ে!
গন্তব্যে এসে ল্যাপটপ খুলে ফেসবুক ওপেন করি। আরে ধূর! ফেসবুকের পাতায় পাতায়ও দেখি অবৈধ অ্যাকশনের ছড়াছড়ি। এর মধ্যেই খবর এলো- ছোট ভাইয়ের লাভ বার্ড ডিম পেড়েছে!
আমি মুখ ফসকে বলে ফেলি- পাখি ডিম পেড়েছে ভালো কথা। কিন্তু তোমার পাখির ডিম পাড়ার অ্যাকশন সন্দেহজনক! তাড়াতাড়ি চেন্নাই নিয়ে বৈধতার পরীক্ষা করো।
লেখক : সাংবাদিক, news.joynal@gmail.com