পোড়া হৃদয়ের জন্য চাই অফুরান ভালোবাসা

জয়নাল আবেদীন
Published : 2 April 2016, 07:24 PM
Updated : 2 April 2016, 07:24 PM
শরীরের ৫৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরেও বেঁচে থাকার নজির বিরল। মাথা, গলা, বুক থেকে শুরু করে শরীরের অর্ধেকের বেশি অংশের পোড়া গন্ধ শুঁকেই বেঁচে আছে এই শিশু। আমার এবারের গল্পের নাম- নওশাদ ইশতিয়াক হৃদয়।
কবুতর পালনের অনেক শখ। টাকা জমিয়ে বাজার থেকে চারটি কবুতর কিনে বড় করতে থাকে। হুট করেই যে তার শখের কবুতর বড় হয়ে যাবে বুঝতেই পারেনি। একদিন হাত থেকে উড়ে গেলো দুটো। ঘরের চালে গিয়েই বসে রইলো। কবুতর উড়াল দিলো, আনন্দ আর ধরে না হৃদয়ের। পিছু পিছু উঠে গেলো সেও। কবুতর দুটোকে ধরে যেই-ই নিচে নামবে, অমনি ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারটি পড়ে গেলো মাথায়। ওর গতি থমকে গেলো। আটকে রইলো তারে জড়িয়েই।
নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের আহাজারিতে লোকজন জড়ো হলো। ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়ে পড়লো উঠানে। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হতে হতে আগুনে ঝলসে গেলো সমস্ত শরীর। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিট এখন হৃদয়ের ঠিকানা।
৩৬ নাম্বার ওয়ার্ডের ৫ নাম্বার বেডে শুয়ে আছে ক্লাস সেভেনের এই ছাত্র। বিড় বিড় করে বলে উঠলো- ‌আমাকে স্কুলের কেউ এখনো দেখতে আসেনি…
মিরসরাইয়ের দুর্গাপুর নগেন্দ্র চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। শ্রেণিশিক্ষক হাজিরা ডাকতে গিয়ে 'ইয়েস স্যার' না শুনে হয়তো লাল কালির দাগ টেনেই খাতাটি বন্ধ করে রাখেন। এর বেশি কিছু ভাবলে নিশ্চয়ই স্কুলের তরফ থেকে ছেলেটির খবর নেওয়া হতো।
গরীবের ঘরের টিনে বজ্রপাতের মতো আকাশ থেকে ধেয়ে আসা ট্র্যাজেডিকে নিয়তি বলেই মানেন রেহানা। এই মায়ের কথায় মনটা ভারী হয়ে গেলো। একমাত্র ছেলেটি যখন দগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে, ঘরে তখন ১০০ টাকার ছয়টি নোট। সেগুলো নিয়েই বেরিয়েছিলেন।
অথচ এই ২৫ দিনে গুণে গুণে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঢেলে দিয়েছেন ক্লিনিকে-হাসপাতালে। নিকটাত্মীয়ের দেওয়া ১৪ হাজার, এক রাজনীতিকের দেওয়া ৬ হাজার বাদে বাকি সবটাই দেনা।
আমাকে প্রশ্ন করলেন- লোন চেনেন ভাইয়া?
আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব দিই।
এরপর বলেন- 'সব টাকা লোন করেছি। সবাইকে বলেছি, আমার একটামাত্র ছেলে। তোমরা আমার ছেলেটাকে বাঁচাও। যার কাছে যা আছে দাও। পরে আমি ভিটে বেচে হলেও শোধ করবো।'
ঘরের কাজ সামলে পাটি বুনেন এই মা। সেখান থেকে মাসে ৫০০ বা ৬০০ টাকা আয় করেন। দরিদ্র স্বামীর জন্য এটি সহায়ক। বর্গাচাষী মেসকাত উদ্দিন সারাবছর চাষের সুযোগও পান না। তাই বাকি দিনগুলোয় তিনি দিনমজুর।
অনটনের মধ্যেও বেশ ভালোই কাটছিলো তাঁদের। স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার। মেয়ে সাবরিনা সুলতানা পড়ে নবম শ্রেণিতে। আজ তাদের সুখের ঘর তছনছ। একটি ট্র্যাজেডিই ঘরটাকে অন্ধকার করে দিলো!
ডাক্তার নাকি কোনো আশাই দিতে পারেননি। গ্রামের মানুষ তো ধরেই নিয়েছিলো ছেলেটি আর বাঁচবে না। পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় হৃদয়ের প্রাণের সঞ্চার এখনো বহতা নদীর মতোই জীবন্ত। এইটুকু ফুল ঝরে যাওয়ার কষ্ট কে সইবে বলুন। সে কারণেই বোধহয় পোড়া যন্ত্রণা নিয়েও আশাটা জিইয়ে রেখেছে সে।
৯ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত ওর জন্য ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। হিসাবের বাইরেও খরচ হয়েছে আরো কিছু। এখন প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার টাকা দরকার। আরো দেড় থেকে দুই মাস হাসপাতালেই কাটাতে হবে তাকে।
আজ চারটি ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করার কথা। দরকার ৪ হাজার টাকা। হাতে এক পয়সাও নেই। তাই এখনো পরীক্ষাগুলো হয়নি। আগামী শুক্রবার মাথায় একটি অস্ত্রোপচার হবে। তার জন্য আগে থেকেই জমা দিয়ে রাখতে হবে ১৫ হাজার। গলা যখন শুকাবে, সেখানেও হবে অস্ত্রোপচার। শ্বাসনালী কতটা পুড়েছে, সেটা দেখা হবে। এভাবেই এগিয়ে যাবে ওর চিকিৎসা।
তবে এই এগিয়ে যাওয়ার গতিতে দুর্গতি নেমে আসার ঘোর সংশয় দেখা দিয়েছে। অন্য কিছু না, কেবল আর্থিক সমস্যাটিই এখন প্রধান অন্তরায়।
একদিন শিশু শাহাদাতের মায়ের দীর্ঘশ্বাসে আমার মনটা ভিজে যায়। পরেরটা তো ইতিহাস। আজ মনটা আবারও ভিজে গেছে। হৃদয়ের মায়ের জমে যাওয়া কথাগুলো শুনে। এই মাকেও কথা দিয়েছি, আপনার ছেলের দায়িত্ব আজ থেকে আমাদেরও।
হৃদয়ের পোড়া শরীর আমি দেখতে চাইনি। চেয়েছি তরতাজা শিশুটির নিষ্পাপ চাহনি। স্যুট-টাই পরা প্রাণবন্ত উচ্ছ্বল দুরন্ত হৃদয়কেই দেখতে চেয়েছি। ওর চামড়া থেকে পোড়া ক্ষত মুছে দিয়ে আবারও ওকে ফেরাতে চাই এমন একটি ফ্রেমে।
দিনমজুর বাবা আর গৃহিণী মায়ের অন্ধকার ঘরটা আলোকিত করতে আর কতক্ষণ? আসুন, এই হৃদয়কে অফুরান জীবনীশক্তিতে ভরিয়ে দিই আমাদের অনন্ত ভালোবাসায়। তোমার হাতটি বাড়িয়ে দাও না বন্ধু।
* বিকাশ নাম্বার :
01819331292 অথবা 01815500988
* ব্যাংক হিসাব নাম্বার :
Jamshed Alam
Account Number : 18
Islami Bank Bangladesh Ltd
Mirsarai Branch, Chittagong
হৃদয়ের মা/বাবার মোবাইল নাম্বার : 01836657818
লেখক : সাংবাদিক, 01814318532, news.joynal@gmail.com
https://www.facebook.com/muhammed.abedin