গুলিস্তানে এখনো মেলে হরেক পদের আজব জিনিস। নিচের গল্পটি শুনলে আপনি ভাবতেই পারেন বহু বছর আগেও গুলিস্তান ছিলো বাটপারির আঁতুরঘর।
এক লোক ফেরি করে মশার ওষুধ বেচেন। তার ভ্যানের সঙ্গে একটি মাইকও যুক্ত থাকে। এক বিকেলে মাইকে ওষুধের দাম শুনে ভিড় করতে থাকেন হাজার হাজার লোক। মাইকে লোকটি বলতে থাকেন- এক টাকায় মশার ওষুধ নেন, এক টাকায় মশার ওষুধ…
মশার ওষুধ মেলে এক টাকায়! মশার কামড় সইতে না পারা লোকগুলির কাছে এক টাকা তো কোনো টাকাই না। ওই শ্রেণির লোকগুলোর তর সয় না। ওষুধটা নিয়ে দেখা তো যেতে পারে। কাজ হলে হলো, না হলে নাই। এক টাকা জলে গেলে কী এমন ক্ষতি! একটি সাদা কাগজে মোড়ানো ওষুধটি লাইন ধরে নিতে শুরু করলেন আগ্রহীরা। বিক্রেতা মাইকে এটাও বলে দিলেন যে-
ওষুধের পুরিয়া এখানে খোলা যাবে না। তাহলে এটির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে। ওষুধের পুরিয়া পকেটে পুরে সোজা চলে যাবেন ঘরে। রাতে ঘুমাবার আগে দরজা জানালা বন্ধ করে তারপরেই খুলবেন।
সেই বিকেলে মশার ওষুধ কিনেছিলেন অগণিত মানুষ। তাদের মধ্যে একজন বাসায় গিয়ে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করতে লাগলেন। দরজা-জানালা বন্ধ করে ওষুধের পুরিয়া খুললেন তিনি। খুলতেই তিনি থ! এ কী! ভেতরে কোনো ওষুধই নেই! সাদা কাগজে লেখা আছে- মশার ওষুধ মশারি 😉
প্রথমে ওষুধ বিক্রেতার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে যান। তবে নিমিষেই তার ক্রোধ মিইয়ে যায়। ভাবেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একটি প্রেসক্রিপশন লিখে ৩০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। যদিও কাণ্ডটা প্রতারণামূলক; তবু এই লোক এক টাকার বিনিময়ে কত সুন্দর একটি প্রেসক্রিপশন দিলেন।
এটি গল্প, নাকি সত্যিকারের কাহিনি- আমি জানি না। মনে পড়ে গেলো আজ মায়ের কথা শুনে। আমার মায়ের কথাগুলো শুনলে আপনিও হেসে উঠবেন। তাহলে শুনুন-
মা ভীষণ চিন্তিত। নিজের শরীরে হাজারো রোগের বাসা বাঁধলেও টেনশনটা বেশি আমাকে ঘিরে। আজকের টেনশনটা আরো বেশি। আমাকে চমকে দিয়ে তিনি জানালেন- আজ তো ভূমিকম্প হবে। সাবধানে থাকিও…
আমি থ! ভূমিকম্প হবে সেটা তো বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাও টের পান না। আমার মায়ের মতন সাধারণ একজন নারী কী করে…! বিরাট প্রশ্ন মায়ের প্রতি। তবে প্রশ্নের আগে তাঁকে উৎসাহ দিলাম। বললাম- আজ যদি সত্যিই ভূমিকম্প হয়, তাহলে তোমাকে অ্যাওয়ার্ড (পুরস্কার) দিবো। তিনি বললেন- বেঁচে থাকলেই তো দিবা। যা শুনতেছি, বড় ভূমিকম্প অইব। এবার প্রশ্নটা করেই ফেললাম- ভূমিকম্প হবে, এটা তোমাকে কে বলেছে? – মানুষজন বলাবলি করতেছে। খবরেও নাকি দিছে…
মাকে বলি- ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো ভূমিকম্প আমাদের দেশে হবে না। আল্লাহর রহমত আছে। আর যদি হয়েও যায়, আমার কিছুই করার নাই। আমার মৃত্যু যদি ভূমিকম্পের মাধ্যমে লেখা থাকে, সেটা খণ্ডনের সাধ্য তোমারও নাই, আমারও নাই। তাঁর সর্বশেষ কথা- তবু সাবধানের মাইর নাই… এতক্ষণে মায়ের কথাটা মনে ধরলো। সত্যিই তো সাবধানের মার নেই।
একটু বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা শহর বিলীন হয়ে যাবে, সেই দৃশ্য চোখ বন্ধ করলেই দেখা যায়! তখন কারো কিছুই করার থাকবে না। সেটা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু প্রতিনিয়ত যেসব মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগে আমরা আক্রান্ত, সেই সবের প্রেক্ষিতে আমরা কতটা সোচ্চার? কতটা সতর্ক?
এর আগে কী ঘটেছে সেটা টানবো না। কালকের দিনটি নিয়ে ভাবুন। হঠাৎ সন্ধ্যাবেলা ব্রেকিং- রাজধানীতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত ২। কী সাদামাটা ‘স্বাভাবিক’ একটি শিরোনাম। অথচ দুজনের পৃথিবী ঢেকে গেলো অদ্ভুত এক আঁধারে!
কাশিমপুর কারাগারের কারারক্ষী খুন হয়ে গেলেন কাল সকালে- সেই খবরও মোটামুটি তলিয়ে গেলো। প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে কান পেতে থাকতে হবে। ব্রেকিংয়ের পর ব্রেকিং আসবে। মানুষের পর মানুষ খুন হতে থাকবে।
যে দেশে স্বাভাবিক জীবনের সামান্যতম গ্যারান্টি নেই, সেই দেশে ইভ টিজিং, ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন কিংবা মাদক-যৌতুকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হাস্যকর। এ দেশে একদিকে তরতর করে বাড়ে আলু, পেঁয়াজ, চাল-ডাল, মাছ-মাংস, সবজির দর; অন্যদিকে কমতে থাকে মানুষের জীবনের মূল্য।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ডের সীমা অতিক্রম, একটি নয় দশটি পদ্মা সেতু, শত শত উড়াল সড়ক, চার লেনের রাস্তা ১২ লেন, ১০ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন হতে পারে। কোনো খেলা ছাড়াই ক্রিকেটের মতো এক লাফে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যেতে পারি।
তবু মানুষের মূল্য সেখানেই পড়ে থাকবে, যেখান থেকে জীবন নিয়ে ঘরে ফেরার কোনো গ্যারান্টি নেই। কী আজব আমার দেশ! আমার সোনার বাংলা!
বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে পারবে না- সেটা তো সরকার বলেই দিয়েছে। তাহলে বাথরুমে, ঘরে-বাইরে, হাটে-বাজারে, রাস্তাঘাটে; সবখানে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বৃথা আবদারের সুযোগও নেই। তাহলে কী করার থাকে?
শুরুতে বলা কাহিনিটা উল্টে দিলে কেমন হয়? ধরুন সতের কোটির মাথার ওপরে যারা বসে আছেন, হাতেগোনা সেই কজনকে ক্রেতা বানিয়ে বাকি সবাই বনে যাব বিক্রেতা। আমরা সবাই এমন এক ওষুধ ফেরি করবো, যেটি পানির দরে কিনে নেবেন মাথার ওপর বসে আছেন যারা।
রাতের অন্ধকারে দরজা-জানালা বন্ধ করে রোমাঞ্চের সীমা ছাড়িয়ে মশার ওষুধের পুরিয়া খোলা লোকটির মতো তারাও যখন আমজনতার কাছ থেকে কেনা ওষুধের কাগজটি খুলবেন, অমনি সাদা কাগজে লেখা ভেসে উঠবে- শুধু দাম নেই মানুষের জীবনের! জীবন এত সস্তা কেনে?
লেখক : সাংবাদিক, news.joynal@gmail.com
শফিক মিতুল বলেছেনঃ
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মাথার উপরে শুধু চাপাতি ঘুরছে। কখন যে ঘাড়ে পড়ে যায়..! আর ঘটনার পরপরই ‘আইএস’ এর দায় স্বীকার তো থাকছেই। অদ্ভূত উটের পিঠে চলছে দেশ।
জয়নাল আবেদীন বলেছেনঃ
সরকারের জোরালো দাবি, বাংলাদেশে আইএস নেই। আবার খুনের পর আইএস-এর দায় স্বীকার। সে যাই-ই হোক, আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সরকার দিতে পারছে না- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
নুর ইসলাম রফিক বলেছেনঃ
এতো বয় কিসের ভাই মন্ত্রী তো বলেছেন আমরা নিরাপদ। যদিও আমরা বলতে মন্ত্রী কাদের বুঝিয়েছেন আমি সন্দিহান।
জয়নাল আবেদীন বলেছেনঃ
‘আমরা নিরাপদ’- কথাটি যিনি বলেছেন, তিনি তাঁর শ্রেণিকেই বুঝিয়েছেন। বুঝে নিতে হবে আমাদের।
নিতাই বাবু বলেছেনঃ
সম্মানিত জয়নাল আবেদীন দাদা,জীবনের মূল্য চাই না,চাই স্বাধীন দেশে স্বাধীন ভাবে থাকতে চাই৷ধন্যবাদ দাদা সুন্দর পোষ্টের জন্য৷ভালো থাকবেন আশা করি৷
জয়নাল আবেদীন বলেছেনঃ
জীবনের মূল্য কমে গেছে বলেই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সে কারণেই ওই বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধিতে আসছে। ধন্যবাদ দাদা
মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেছেনঃ
কেবল একটি জিনিসেরই নিশ্চয়তা প্রকৃতি দিতে পারে, সেটা হল মৃত্যু। এখন এই মৃত্যু ঘটনায়, না দুর্ঘটনায় হবে, আপনালয়ে হবে না, চিকিৎসালয়ে হবে সেটার নিশ্চয়তাও নেই।
মৃত্যুর ঘটনাগুলো অবশ্যই পীড়াদায়ক। কোন মৃত্যুর খবরে যারা নিজের মৃত্যুকে স্মরণ করেন না, তারা হয় অমানুষ কিংবা অতিমানব।
কিছু কিছু মৃত্যু কম সংখ্যক মানুষের জানার মধ্যে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু জেনে যায় সারা দেশবাসি। এমনকি বিদেশবাসীও।
কিছুক্ষণ আগে আমি একটি কিন্ডারগার্টেন টাইপের স্কুল পরিদর্শন করে এলাম। এ স্কুলের পরিচালক পরিচয়ের পরেই বললেন, তোমার দেশে তো একজন প্রফেসর মারা গেছেন। তাকে জঙ্গিরা হত্যা করেছে। আমার দেশে জঙ্গি আছে, এমন কথা প্রায়সই আমি এড়িয়ে যাই। কিন্তু প্রচার মাধ্যম এখন উন্মুক্ত। তাই আমি বলি না না বলি, আমি গোপন করি কিংবা প্রকাশ করি, বিশ্ববাসীর জানতে বাকি থাকে না আমার দেশে আসলে কি হচ্ছে। তাই যতটুকু পারি কম বলি।
এ পরিচালক বললেন, একজন প্রফেসারকে হত্যা করা মানে তো ভবিষ্যৎকেই হত্যা করা।
কিন্তু এ হত্যা তো আর কেবল আমার দেশেই হয় না। কিংবা হচ্ছে না। এটা এখন বিশ্বজনীন ঘটনা। চরম পন্থা ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। একস্থানের ঢেউ লাগছে অন্যখানেও।
দুঃখ-সুখের এপারে-ওপারে আমাদের মন অবশ্যই দুলবে। কিন্তু এই দোদুল্যমানতার মধ্যেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। চরমপন্থিদের মোকাবেলা করতে হবে।
জীবনকে যেমন অতি মূল্যবান বলে ভাবা যায়, তেমনি তাকে মূল্যহীন, অমূল্য,সহজ, কঠিন নানাভাবেই ভাবা যায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড দম বন্ধ থাকলে এ জীবন যখন এ রক্তমাংসের শরীরের ভিতর আটকা থাকতে পারে না, তখন জীবনকে আর মঙ্গা ভাবি কিভাবে, জীবন সস্তাই।
জয়নাল আবেদীন বলেছেনঃ
রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে জঙ্গিবাদ জঙ্গিবাদ করে মুখে ফেনা তুলে ফেলার খেসারত পেতে শুরু করেছি। বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি আর থাকলো কই?
মজিবর রহমান বলেছেনঃ
চাপাতির চেয়ে দাম কম
মানব জিবনের তাইত দম দমদম
পড়ে জীবন
জয়নাল আবেদীন বলেছেনঃ
ঠিক বলেছেন ভাই
নুর ইসলাম রফিক বলেছেনঃ
আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচতে দাও, আমাকে মেরনা- এমন দিন কি তোবে আমারো সামনে আসছে?
জয়নাল আবেদীন বলেছেনঃ
ভয়-আতংক বাড়ছেই