গুলশান-কাণ্ড একটি সতর্কবার্তা

জয়নাল আবেদীন
Published : 2 July 2016, 06:59 PM
Updated : 2 July 2016, 06:59 PM

দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ ইস্যু এবার সাধারণকেও ভাবিয়ে তুলবে। এতদিন বিভিন্ন স্থানে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলো বিবেকবোধে এতটা নাড়া দিতে পারেনি, যতটা পেরেছে ‍গুলশান-কাণ্ড।

ভাবনার সব সীমা ছাড়িয়ে এতজন বিদেশি নাগরিকের গলা কেটে দেওয়া রীতিমতো শিহরিত করে তোলে। ভাবতেই পারি না, এমন ঘটনা ঘটে যাবে প্রিয় মাতৃভূমিতে। এ ঘটনার পরে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরাও নিজেদের দেশ নিয়ে শংকিত।

গুলশানের ঘটনাটি আমাদের গোয়েন্দা ব্যর্থতাও বলা চলে। এটাকে অতর্কিত হামলা বললে ভুল হবে। কারণ, ওরা সকালেই ঘোষণা দিয়েছিলো এমন কিছুর করার। গোয়েন্দাদের চোখ-কান খোলা থাকলে এত বড় ঘটনাটি এড়ানো যেত।

এই ঘটনায় সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবার ঘোর আশংকা আছে। অর্থনৈতিক নানা খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সামনের দিনে দেশের পরিণতি কোনদিকে গড়াচ্ছে, সেটিও ভাববার সময় এসেছে।

সম্ভবত অনেকদিন পরে এই একটি ইস্যুতে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রীদ্বয়ের কণ্ঠ এক জায়গায় মিলেছে। পরষ্পরের ওপর দায় চাপানোর অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে দুজনেই বিষয়টি নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। এমনকি সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রত্যয়ও এসেছে।

আমার ছোট্ট মাথায়ও এই একটি বিষয় কাজ করছে। জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সব বিভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। পরষ্পরের সহযোগিতা আমাদের দেশের জন্যেই মঙ্গল।

গত রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর আগে পুলিশ বাহিনীর বেশকিছু কর্মকর্তা যেভাবে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, সেটি রীতিমত অবাক করে দিয়েছে। এটাই আমাদের পুলিশ বাহিনী। আমাদের গৌরব।

কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বেখেয়ালে যখন, গোটা বাহিনীকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, তখন কিছু নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ কর্মকর্তা ঠিকই বুক চিতিয়ে দেন। গতকাল পুলিশের ওসি সালাহউদ্দিন এবং ডিবির এসি রবিউল সামনে থেকে যেভাবে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, সেটি আমাদের জন্য বিরাট দৃষ্টান্তের।

তবে সব হামলাকারীকে জীবিত অবস্থায় আটক করাটা খুব জরুরি ছিলো। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের শেকড় অনুসন্ধানের বড় একটি ক্ষেত্র ছিলো এটি। অভিযানে ওরা নিহত হওয়ার ফলে সুযোগটি হাতছাড়া হলো। গুলশান-কাণ্ড মনে হয় না শেষ ঘটনা, বর‌ং এটি বড় ধরনের একটি সতর্কবার্তা।

লেখক : সাংবাদিক, ঢাকা