বিচিত্র বর্ষণ ও শোক দিবস কথা

সজীব জমশের আলি
Published : 15 August 2017, 08:26 AM
Updated : 15 August 2017, 08:26 AM

শ্রাবণ মাস। বছরের যে কয়টা মাস নিজ আগমন, অবস্থিতি ক্রমে জানান দিয়ে অতিক্রান্ত হয় এটা তার মধ্যে অন্যতম। বৈশাখ, পৌষ ও ফাল্গুনের মত এই মাসটাও বেশ আলোচিত। বস্তুত এই মাসের সাথে মিল রেখেই আমার নাম রেখেছিল শ্রাবণ। বর্ষা মানুষের প্রিয় ঋতুও হয়, এ কথা আমি জেনেছি, অন্যঅর্থে পুরোপরি বিশ্বাস করেছি অনেক পরে। যখন জেনেছি তখন থেকে প্রিয় আমার প্রিয় ঋতুও এই বর্ষা। টিনের চালের উপর ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি পড়ার ছন্দ কতটা দারুণ শোনায় সেটা কমবেশি সবারই জানা। বৃষ্টিপাত অন্তে সজীবতা লাভ করে প্রকৃতি, প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। মাটি নরম হয়। উর্বরতা জাগে তার জঠরে। এত বেশি ভাল দিক থাকা সত্তেও আমরা বর্ষার অপকারিতা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা এই বর্ষায় খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। চাল ফুটো হওয়া থেকে শুরু করে কর্ম-সঙ্কট পর্যন্ত হাজারটা সমস্যা এসে জড়ো হয়।
আমি যেই জায়গাটায় থাকি তার অবস্থা আরো করুণ। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি পা একবার ভেজানো গেছে তবে সেই পা আর সারা দিনেও শুকাবে না। বাসার গেটে পানি, বাসায় পানি কোথাও কোথাও আবার রুমের ভেতরও পানির নাগাল পৌঁছে গেছে।

কয়েক দিন যাবদ টানা বৃষ্টি হয়েছে। আমার বাসার পাশ দিয়ে আগে চলে যেত পানি এখন সেখানে জমেছে হাঁটুর সমান। তবে এখন আশা করা যাচ্ছে বৃষ্টি আর হবে না। আজ শ্রাবণের শেষ দিন। আকাশও কাল সন্ধ্যা থেকেই পরিচ্ছন্ন।

আজকের দিনটা আরও একটা কারণে খুবই গুরুত্ব বহন করে তা হল ১৯৭৫ সালে এই দিনে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল নৃসংশভাবে। জাতীয় শোক দিবস আজকে।
বঙ্গবন্ধু; বাঙালির সবচে বড় সংগ্রামের নায়ক তিনি। জীবনের পুরোটা সময় ধরে প্রতিবাদি এই মানুষটা বাংলার ইতিহাসের সবচে তেজদীপ্ত প্রাণপুরুষ। তারই আহবান ও অনুপ্রেরণায় বাংলা বীর সন্তানেরা যুদ্ধ করেছে। জয় করেছে স্বধীনতা। পাকিস্তান সামরিক সরকার তাকে গ্রেপ্তার করলেও অবশেষে তাকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে। সবকিছু যখন প্রায় ঠিক হয়ে এসেছে তখনি ঘটল এমন একটা অনাকাঙ্খিত অঘটন। আমরা হারালাম আমাদের নায়ক, আমাদের অভিবাবককে। এই ঘটনা আমাদের ইতিহাসের কলঙ্ক আমাদের কলঙ্ক।

বঙ্গবন্ধু একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন একথা দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই স্বীকার্য। কিন্তু তিনি পারেননি আমাদেরকে একটা সু্ন্দর দেশ উপহার দিয়ে যেতে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় প্রথমত তাকে এটা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। আর অন্য কারণ হল একজন কারো একার পক্ষে কখনোই সবটা সম্ভব হয় না। আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা প্রায় সবাই বলি কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বাস্তবায়ন নেই। আমি কারো সমালোচনা বা নিন্দায় যাব না। আমি বলতে চাইছি বঙ্গবন্ধু নেই তার চেয়ে আমরা আমাদের মধ্যে তাঁকে বাঁচিয়ে তুলতে পারছি না এর শোকটা বড় হওয়া উচিৎ। আমি কোন দলের সমর্থক নই তবুও বলি যতটা অনুপ্রেরণা মুজিব কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আছে তার হাজার ভাগের একভাগও যদি আমাদের মধ্যে থাকতো তবে দেশটাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারতাম।

বঙ্গবন্ধু নেই। আমরা তাকে সুরক্ষা দিতে পারিনি এটা আমাদের ব্যার্থতা, আর আমাদের ভেতরকারই কিছু মানুষ তাঁর হন্তারক এটা আমাদের চরম পর্যায়ের একটা কলঙ্ক। আমাদেরকে সারাজীবন এর দায় কাঁধে নিয়ে চলতে হবে।

আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশে একটু বৃষ্টি হলেই মানুষ দূর্বিসহ ভোগান্তির শিকার হয়। মানুষ মানুষের জন্য এই প্রবাদ ভুল প্রমাণ করেছে এ দেশের মানুষ। আমাদের অধপতন একেবারে তলায় গিয়ে ঠেকেছে। এখনও কি সচেতন হওয়ার সময় আসেনি? আসুন, বেদনায় ও শ্রদ্ধায় পিতাকে স্মরণ করি, তার আদর্শের উপমা হই।